কূটনৈতিক প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০২ নভেম্বর ২০২৩, ০১:০৫ পিএম
আপডেট : ০২ নভেম্বর ২০২৩, ০২:১০ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

জাতিসংঘ মানবাধিকার হাইকমিশনের বক্তব্য প্রত্যাখ্যান সরকারের

জাতিসংঘ মানবাধিকার হাইকমিশনের বক্তব্য প্রত্যাখ্যান সরকারের

জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর (ওএইচসিএইচআর) ঢাকায় প্রধান বিচারপতির বাসভবন, অন্য বিচারকদের বাসস্থান ও সাংবাদিকদের ওপর হামলা সম্পর্কে ক্ষমতাসীনদের সমর্থকদের ঈঙ্গিত করে যে বিবৃতি দিয়েছে, তা প্রত্যাখ্যান করেছে সরকার। সঠিক তথ্যের ভিত্তিতে বিবৃতি সংশোধন করা হবে বলে আশা করে বাংলাদেশ।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বুধবার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে হাইকমিশনারের দপ্তরের ওই বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২৮ অক্টোবর বিরোধী দল বিএনপির কর্মীরা ওই হামলা করেছে। আর হাইকমিশনারের দপ্তর দুর্ভাগ্যজনকভাবে বিএনপির অপপ্রচারের ফাঁদে পড়েছে। যদি বিবৃতি যথাযথ না হয় তাহলে এটি জনগণের সমর্থন, গ্রহণযোগ্যতা এবং বিশ্বাসযোগ্যতা হারাবে।

ওএইচসিএইচআর গত মঙ্গলবার সুইজারল্যান্ডের জেনেভা থেকে দেওয়া ওই বিবৃতিতে বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক সহিংসতায় প্রাণহানির ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিরোধী দলের প্রতিবাদ কর্মসূচির সময় প্রধান বিচারপতির বাসভবন, বিচারকদের বাসস্থান ও সাংবাদিকদের ওপর যে হামলা হয়েছে, তাতে বিক্ষোভকারী ও মোটরসাইকেলে আসা মুখোশধারী ব্যক্তিরা অংশ নিয়েছে, যাদের সরকারি দলের সমর্থক বলে মনে হয়েছে।

এর প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশ সরকারের বিবৃতিতে বলা হয়, নির্দলীয় সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানের একদফা অসাংবিধানিক দাবির নামে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) কর্তৃক সহিংসতা ও জনবিচ্ছিন্নতার অভূতপূর্ব প্রদর্শনে বাংলাদেশ সরকার গভীরভাবে মর্মাহত। বিএনপির অনুরোধ অনুসারে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কিছু নির্দিষ্ট শর্তে ২৮ অক্টোবর তাদের দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করার অনুমতি দেয়। তবে, বিএনপি কর্মীরা রাস্তায় সহিংসতা, অগ্নিসংযোগ, ব্যক্তি ও সম্পত্তির ওপর অন্যান্য ধরনের হামলার আশ্রয় নেয়। এ ধরনের ব্যাপক সহিংসতার প্রধান লক্ষ্যবস্তু হয়েছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বিচার বিভাগ, নিরপরাধ নাগরিক, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি সম্পত্তি।

আরও বলা হয়, পুলিশের একজন সদস্যকে নির্দয়ভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। কয়েক ডজন আইন প্রয়োগকারী সদস্যকে আক্রমণ ও আহত করা হয়েছে। বাস, ফায়ার সার্ভিসের ট্রাকসহ অন্যান্য গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়, প্রধান বিচারপতি ও দেশের সর্বোচ্চ আদালতের অন্যান্য বিচারকদের বাসভবন ভাঙচুর করা হয়, পুলিশ হাসপাতাল চত্বর ও অ্যাম্বুলেন্সে আগুন দেওয়া হয়। বেশ কয়েকটি থানা ভাঙচুর করা হয়, সাংবাদিক ও ফটোসংবাদকর্মীদের ওপর হামলা করা হয়। এমনকি বিএনপির এমন ক্রমাগত নৃশংসতার মুখেও বাংলাদেশ সরকার এবং এর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অত্যন্ত সংযম ও ধৈর্য প্রদর্শন করেছে। তারা জনশৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে সর্বনিম্ন ও সর্বোত্তম শক্তি প্রয়োগ করেছে।

বিএনপির তৎপরতা থেকে প্রতীয়মান হয়, তারা সহিংসতার আশ্রয় নিচ্ছে, বিশেষ করে অগ্নিসংযোগের সুস্পষ্ট উদ্দেশ্য নিয়ে জনসাধারণের জীবন-জীবিকার বিঘ্ন ঘটানো, অর্থনীতিতে ব্যাঘাত ঘটানো, গণযোগাযোগ, পরিবহন ও লজিস্টিক ব্যবস্থা ভেঙে দেওয়া এবং দেশে সম্পূর্ণ নৈরাজ্য নিশ্চিত করা। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বিভ্রান্ত করতে এবং এভাবে সহানুভূতি অর্জনের জন্য বিএনপিও ভুল তথ্যের আশ্রয় নিয়েছে। বিএনপি সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে ভুয়া ‘মার্কিন প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা’ হিসেবে পরিচয় দেন। জাতিকে সন্ত্রস্ত করা এবং বাংলাদেশের জনগণ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বিভ্রান্ত করার পেছনে বিএনপির উদ্দেশ্য হচ্ছে আগামী নির্বাচন ও সাংবিধানিক প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করা। দুর্ভাগ্যবশত, জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশন হয়ত বিএনপির এসব ভুল তথ্য প্রচারের বিভ্রান্তিতে পড়ে গেছে। জাতিসংঘ মানবাধিকার হাইকমিশনারের দপ্তরকে বিবৃতি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশের আগে তথ্য সংগ্রহ ও যাচাই পদ্ধতি পর্যালোচনার পরামর্শ দিয়ে বাংলাদেশ সরকার বলেছে, সরকার আশা করে, সংস্থাটি ৩১ অক্টোবরের প্রেস বিবৃতিটি সঠিক তথ্যের ভিত্তিতে সংশোধন করবে। যদি এ বিবৃতি উদ্দেশ্যমূলক হয়, তাহলে সংস্থাটি জনগণের সমর্থন, গ্রহণযোগ্যতা এবং বিশ্বাসযোগ্যতা হারাবে।

আরও বলা হয়, বাংলাদেশ সরকার যেকোনো মূল্যে জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে এবং একটি অবাধ, সুষ্ঠু, বিশ্বাসযোগ্য ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। গণতন্ত্রের স্বার্থে, যা বাংলাদেশের জনগণ অগণিত ত্যাগের পর অর্জন করেছে, বাংলাদেশ সরকার আমাদের সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে আগামী সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য স্বাধীন নির্বাচন কমিশনকে সমর্থন করবে। নির্বাচন কমিশন স্বাধীন সাংবিধানিক সংস্থা হিসেবে আগামী সাধারণ নির্বাচনের আগে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলির সাথে নিয়মিত সংলাপ করছে। নির্বাচন কমিশন স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে নির্বাচন প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন বাংলাদেশের আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষক ও বিদেশি গণমাধ্যমকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বিষপানে মা ও শিশুর মৃত্যু, নেপথ্যে স্বামীর অনলাইন জুয়া

থানার লুটের অস্ত্র দিয়ে ডাকাতি

যুক্তরাষ্ট্র-ইরান পরামাণু বৈঠক, তেহরান সফরে সৌদির প্রতিরক্ষামন্ত্রী

নবাব সৈয়দ নওয়াব আলীর মৃত্যুবার্ষিকী পালিত

মোহাম্মদপুর হাইক্কার খাল দখলমুক্ত করার ঘোষণা ডিএনসিসি প্রশাসকের

মানবেন্দ্র ঘোষের বাড়িতে আগুনের ঘটনায় ৩ ছাত্রলীগসহ গ্রেপ্তার ৮

এমডি ইকবালকে হত্যার হুমকি

শিগগিরই বাংলাদেশ-পাকিস্তান সরাসরি ফ্লাইট চালু

‘কুয়েত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে’

একাত্তরে গণহত্যার জন্য পাকিস্তানকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান ঢাকার

১০

‘পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে’

১১

খুলনায় সুপেয় পানি সরবরাহ বন্ধের হুমকি ওয়াসার শ্রমিকদের

১২

বিশ্বকাপ বাছাইয়ে উইন্ডিজদের কাছে জ্যোতিদের হার

১৩

ঢাবির তদন্ত নিয়ে অসন্তোষ / জুলাইয়ে হামলায় জড়িতদের শনাক্তে শিক্ষার্থীদের পাল্টা কমিটি

১৪

ইউরোপীয় ইউনিয়নের ‘নিরাপদ’ দেশের তালিকায় বাংলাদেশ

১৫

রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান ছিদ্দিকুরসহ ৬ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

১৬

৩৬০ ব্যাংক হিসাবে এস আলমের ২৬১৯ কোটি টাকা ফ্রিজ

১৭

পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিব বাংলাদেশে, যা বলছে ভারত

১৮

শাস্তি বাড়ছে ভুয়া মামলার

১৯

স্থাপনা নির্মাণে বিধিমালা না মানলে ব্যবস্থা : রাজউক চেয়ারম্যান

২০
X