নির্বাচনকে সামনে রেখে বিরোধীদের আন্দোলন চলাকালে আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে মুখোশ পরে হামলা। গত ১৬ অক্টোবর থেকে আজ বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) পর্যন্ত সারা দেশে অন্তত ২০টি হামলার ঘটনা ঘটেছে।
বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) নভেম্বর মাসের প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে আসে। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অ্যাডভোকেড সুলতানা কামাল স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ ধরনের হামলাগুলোকে বিচারবহির্ভূত কর্মকাণ্ড উল্লেখ করে জড়িতদের বিচারের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানান।
মুখোশ পরে হামলার বেশিরভাগ ঘটনা রাতে ও নির্জন রাস্তায় ঘটেছে। এর মধ্যে নাটোরে ১১টি, নওগাঁতে ৫টি, রাজশাহীতে ৩টি, পাবনাতে একটি হামলা হয়েছে। হামলার সময় মুখোশধারীরা ধারালো অস্ত্র ব্যবহার করেছে। এতে তিনজন মারা গেছে, গুরুতর আহত হয়েছে ১৭ জন। আক্রান্তরা সবাই বিএনপি, ইসলামী সংগঠনের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। সংগঠনটি পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, প্রায় প্রতিটি ঘটনায় হামলাকারীরা সাদা মাইক্রোবাস বা মোটরসাইকেলে করে হেলমেট পরে আসে। হামলার সময় তাদের মুখে মুখোশ থাকে। প্রায় প্রতিটি ঘটনায় হামলাকারীরা হাত-পায়ে বুকে-পিঠে কুপিয়েছে কিংবা পিটিয়ে হাত-পা ভেঙে দিয়েছে।
মুখোশধারীদের এসব হামলার ঘটনায় ১২টি মামলা হয়েছে। তবে মামলাগুলোর কোনো অগ্রগতি নেই। পুলিশ বলছে, ঘটনায় মুখোশ বা হেলমেট পরিহিত হামলাকারীদের বিষয়ে তারা কিছু জানে না। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, মুখোশধারী সন্ত্রাসীরা চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার চারজন বিএনপি নেতার বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালায়। ঢাকা ও যশোরে বিএনপির দুই নেতার বাড়িতে ককটেল হামলার ঘটনা ঘটেছে। বিরোধীদলের কর্মসূচি চলাকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীল নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা থাকা সত্ত্বেও এই ধরনের হামলায় তাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বলে জানিয়েছে এমএসএফ।
অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে এমএসএফ’র তুলনামূলক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, অক্টোবরে রাজনৈতিক সহিংসতায় মামলা হয়েছে ১০১টি, নভেম্বরে ১১৫টি। অক্টোবরে গ্রেপ্তার ২৫৩৮, নভেম্বরে ২৬৬৩ জন। অক্টোবরে আহত হয়েছে ৩৪৩, নভেম্বরে ২৬০ জন। অক্টোবরে মারা গেছে আটজন ও নভেম্বরে চারজন।
অক্টোবরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে অপহরণের ঘটনা ৯টি, নভেম্বরে এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬ জনে। নভেম্বরে কারা হেফাজতে মৃত্যু কমেছে। অক্টোবরে ছিল ১৬ জন, নভেম্বরে ১১ জন। পোশাক শ্রমিক অসন্তোষ সংখ্যা কিছু অক্টোবরে না থাকলেও নভেম্বরে মামলা হয়েছে ৪১টি, আসামি সাড়ে ১৬ হাজার, গ্রেপ্তার ১১৯ জন, আহত একশর বেশি, নিহত চারজন। সাংবাদিক নির্যাতন অক্টোবরে ১৬, নভেম্বরেও ১৬।
এদিকে অক্টোবরের তুলনায় নভেম্বরে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা কমেছে। অক্টোবরে ছিল ৭টি ঘটনা এবং নভেম্বরে একটি। নারী ও শিশু সহিংসতার সংখ্যা নভেম্বরে কমেছে। অক্টোবরে ছিল ৩৫৮টি ও নভেম্বরে ৩০৬। অক্টোবরে গণপিটুনির ঘটনা ২৬টি, নভেম্বরে ১৩টি।
মন্তব্য করুন