‘জাহাজে খাবার পানির আছে অল্প। যা দিয়ে আর ২০-২৫ দিন টিকে (বেঁচে) থাকা যাবে। কার্গোগুলো একটু এদিক সেদিক হলেই অগ্নিকাণ্ডের মতো ভয়াবহ বিপদ আসতে পারে।’ এভাবেই অডিও বার্তায় নিজের অবস্থানের কথা জানাচ্ছিলেন আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিক থেকে কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাওয়ার পথে ভারত মহাসাগরে জলদস্যুর কবলে পড়া বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজের চিফ অফিসার মো. আবদুল্লাহ।
ভারত মহাসাগরে প্রায় ৫০ জলদস্যু বাংলাদেশের পতাকাবাহী ‘এমভি আবদুল্লাহ’ জিম্মি করে সোমালিয়া উপকূলের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। জাহাজে থাকা ২৩ নাবিকের সবাইকে জিম্মি করে রেখেছে। ভয় দেখাতে ছুড়ছে একের পর এক গুলি। ৩ মিনিট ৩৪ সেকেন্ডের সেই অডিও বার্তায় জিম্মিদশার পুরো ঘটনা বর্ণনা করেছেন জাহাজের চিফ অফিসার মো. আবদুল্লাহ। দেশে পরিবারকে দেখেশুনে রাখার আকুতি জানিয়েছেন।
সোমালিয়ান জলদস্যুরা জাহাজে ওঠার পর কার সঙ্গে কী আচরণ করেছে সেই বর্ণনাও দিয়েছেন তিনি। অডিও বার্তার শুরুতেই সালাম দিয়ে তার নাম বলেন। জানান, সাড়ে ১০টার সময় একটা হাইস্পিড বোট জাহাজের দিকে আসতে দেখে এলার্ম বাজানো হয়। সহায়তার জন্য বিভিন্ন জায়গায় ফোন দিলেও তারা রিসিভ করেনি। এর মধ্যে জলদস্যু চলে আসে।
জাহাজে উঠেই দস্যুরা ক্যাপ্টেন ও সেকেন্ড অফিসারকে জিম্মি করে। এরপর সবাইকে একসঙ্গে করে ফাঁকা গুলি ছোড়ে। সেকেন্ড অফিসারকে হালকা মারধর করেছে তবে আর কারও গায়ে হাত তোলেনি তারা।
এর কয়েক মিনিটের মধ্যে ফিশিং বোট নিয়ে আরও জলদস্যু আসতে থাকে। সবার হাতেই প্রায় অস্ত্র ছিল। নানা ভয়ভীতি দেখাচ্ছিল। এ সময় তাদের বোটের তেল শেষ হয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশি জাহাজের পাম্প দিয়ে তেল নিয়ে নেয়। এরপর জাহাজের ইঞ্জিনও বন্ধ করে দেয় তারা।
অডিও বার্তায় জানানো হয়, এখন পর্যন্ত আল্লাহর রহমতে কার কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। জাহাজেরও কোনো ক্ষতি হয়নি। তবে সবাই ভয়ে আছে। জাহাজে থাকা সবার জন্য দোয়া চেয়েছেন। একই সঙ্গে দেশে পরিবারকে দেখে রাখার আকুতি জানান ওই কর্মকর্তা। তাদের সান্ত্বনা জানানোর কথাও বলেন। তবে শোনা যাচ্ছে, জিম্মি দশায় থাকা নাবিকদের কাছে বিপুল অর্থ দাবি করা হচ্ছে। দ্রুত টাকা না দিলে মেরে ফেলার কথাও বলছে তারা।
আরেকটি কোম্পানির জাহাজে কর্মরত চট্টগ্রাম নগরীর হালিশহর এলাকার আরমান হোসেন বাবু নামের একজনের কাছে অডিওবার্তায় এক নাবিক (নাম জানা সম্ভব হয়নি) বলেছেন, ‘আমাদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছে ডাকাতরা (জলদস্যু)। আমি ওয়াশরুম থেকে ভয়েস দিচ্ছি। ওরা সাত-আটজন আছে। আমাদের ওদের ডেরায় নিয়ে যাবে। ওদের সবার কাছে গান (অস্ত্র) আছে।’
অডিওবার্তায় আরও বলা হয়, ‘আমরা মোজাম্বিক থেকে কয়লা নিয়ে দুবাইয়ের পথে যাচ্ছিলাম। ওরা (জলদস্যু) দুই মাস আগে ইরানি একটি ফিশিং বোট আটক করেছিল। ওটা আমাদের জাহাজের সঙ্গে বর্তমানে বাঁধা আছে। ওটা থেকেই মূলত জলদস্যুরা আমাদের আক্রমণ করে। ওই ফিশিং বোটটা ওরা হয়তো ছেড়ে দেবে। ওই বোটের জন্য আমরা ডিজেল দিলাম। আমাদের নিয়ে ওরা হয়তো ওদের আস্তানায় চলে যাবে।’
মন্তব্য করুন