মোহাম্মদ এ আরাফাত জাতীয় সংসদ সদস্য, গবেষক, সমাজচিন্তক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা শেষে দেশে ফিরে ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক এবং বিশ্ববিদ্যালয়টির বোর্ড অব ট্রাস্টির প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কালবেলার সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এম এম মুসা।
কালবেলা: আগামী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে মাঠের বৃহৎ বিরোধী দল বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে না। কেমন দেখছেন নির্বাচনের পরিস্থিতি?
মোহাম্মদ এ আরাফাত: বিএনপি নির্বাচনে থাকলে নির্বাচনের জন্য সেটি ভালো হতো এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। বিএনপিকে নির্বাচনে আসার জন্য আমরা সব সময় আহ্বান জানিয়ে এসেছি কিন্তু তারা নির্বাচনে আসে না। তারা নির্বাচনে না এসে সন্ত্রাসের পথে এগিয়েছে। বাংলাদেশে ৪৪টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল রয়েছে। এই দলগুলোর মধ্যে ৩০টি দল নির্বাচনে আসার ব্যাপারে নিশ্চিত করেছে। বিএনপির সাবেক এবং বর্তমান প্রায় ৪৫ জন নেতা বিএনপি থেকে বের হয়ে বিভিন্ন ক্যাপাসিটিতে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন। বিএনপি নির্বাচনে আসলে সবচেয়ে ভালো হতো এতে কোনো সন্দেহ নেই তবে মন্দের ভালো এই, নির্বাচনটি হচ্ছে। নির্বাচন একটি সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা। তাই বিএনপি নির্বাচনে না এলেও যেভাবেই হোক নির্বাচন সম্পন্ন হতে হবে। আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে এবং নির্বাচনে অনেক প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সুতরাং আমরা একটি প্রতিযোগিতাপূর্ণ নির্বাচন দেখতে পাব বলে আশা করছি।
কালবেলা: আমরা উপনির্বাচনগুলোতে দেখেছি খুব কম ভোট পড়েছে। এবারও অনেকে আশঙ্কা করছেন খুব বেশি ভোট পড়বে না। আপনারা বিষয়টাকে কীভাবে দেখছেন?
মোহাম্মদ এ আরাফাত: ভোটারদের নির্বাচন কেন্দ্রে নিয়ে আসা এক ধরনের চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে উপনির্বাচনগুলোতে মানুষ ভোট দেওয়ার আগ্রহ পান না। এর প্রধান কারণ উপনির্বাচনগুলো হয় অল্প মেয়াদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করার জন্য। আমার এলাকায় উপনির্বাচনের মেয়াদ ছিল পাঁচ মাস। সুতরাং এসব ক্ষেত্রে কম ভোট পড়বে সেটাই স্বাভাবিক। পৃথিবীতে অন্যান্য দেশে সাড়ে পাঁচ মাস মেয়াদের উপনির্বাচনে ১১ শতাংশ ভোট পড়ে- সেটা হয়তো কেউ দেখাতে পারবে না বরং ভোট পড়ে আরও কম। এরপরও আমি বলছি, নির্বাচনে কম ভোট পড়েছে। তবে আমি বলব- আমার এলাকার উপনির্বাচনে ১১ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে। ধরি, খাতা-কলমে ওই এলাকায় ভোটার রয়েছে ৩ লাখ। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সেখানে ৩ লাখ ভোটার নেই। অনেক ফ্লোটিং ভোটার রয়েছেন, যারা অন্য এলাকায় চলে গেছেন বা অন্য এলাকায় বসবাস করেন। এভাবে যদি ৬০-৬৫ হাজার ভোটার এলাকায় না থেকে থাকেন তাহলে তাদের বাদ দিয়ে যদি ভোটের হার হিসাব করা হয় তাহলে দেখা যাবে, ভোট পড়ার হার অনেক বেড়ে যাবে।
এলাকায় আরও অনেক মানুষ রয়েছেন কিন্তু তারা এলাকার ভোটার নন। তারা অন্য এলাকার ভোটার। ফলে ফ্লোটিং ভোটারদের বাদ দিয়ে যদি মোট ভোটার ২ লাখ ৬০ হাজার হিসাব করা হয় সেখান থেকে ভোট পড়েছে ৩৮ হাজার। অর্থাৎ ২০ শতাংশ ভোট পড়েছে। পাঁচ মাস মেয়াদের একটি নির্বাচনে ২০ শতাংশ ভোট পড়া মোটেও কম নয়। কিন্তু এবারের নির্বাচন যেহেতু জাতীয় নির্বাচন এবং পাঁচ বছর মেয়াদের জন্য প্রতিনিধি নির্বাচিত হবেন সুতরাং এখানে মানুষের আগ্রহ রয়েছে এবং থাকবে। এটা ঠিক, বিএনপি নির্বাচনে থাকলে নির্বাচন অনেক প্রতিযোগিতামূলক হতো কিন্তু বিএনপি না থাকলেও নির্বাচনে ৪০-৪৫ শতাংশ ভোট পড়বে।
কালবেলা: বলা হয় ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামী লীগের ১৫৩ জন প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন। ২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়েও অনেক অভিযোগ রয়েছে। ২০২৪ সালের নির্বাচন কতটুকু সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে বলে আপনারা আশা করছেন?
মোহাম্মদ এ আরাফাত: ২০১৪ সালের নির্বাচন-পূর্ববর্তী পরিস্থিতি ছিল সন্ত্রাসের স্বর্গরাজ্য। বিএনপি-জামায়াতের কর্মীরা নির্বাচনের আগে একটি সন্ত্রাসের স্বর্গরাজ্য প্রতিষ্ঠিত করেছিল। সেই বাস্তবতায় যারা নির্বাচন করেছিল তাদের অনেককেই বুলেটপ্রুফ বেস্ট পরে রাস্তায় চলাচল করতে হয়েছিল জঙ্গিদের হামলা থেকে বাঁচার জন্য। সেই পরিস্থিতির কারণে বিভিন্ন এলাকায় মানুষ নির্বাচনে প্রার্থী হতে চায়নি এবং ভোটাররা নির্বাচন কেন্দ্রে যেতে চায়নি। নির্বাচনের কেন্দ্র হয় এমন ৫০০ এর বেশি স্কুল ঘর তারা পুড়িয়ে দিয়েছিল। একজন সহকারী রিটার্নিং অফিসারকে তারা হত্যা করেছিল এবং আহত করেছিল অনেককে। যেসব সাধারণ মানুষ ভোট দিতে গেছে অনেককে টেনে নিয়ে ধানক্ষেতে ফেলে পেটানো হয়েছে। ফলে সেই বাস্তবতায় বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় অনেকে নির্বাচিত হয়েছেন।
অন্যদিকে ২০১৮ সালে বিএনপি নির্বাচনে এসেছিল তাদের নিবন্ধন বাঁচানোর জন্য। কারণ নির্বাচন না করলে তাদের নিবন্ধন থাকত না। দ্বিতীয়ত, নির্বাচনকে উদ্দেশ্য রেখে বিএনপি সেসময় মনোনয়ন বাণিজ্য করেছিল। তৃতীয়ত, তারা নির্বাচনে এসে সকাল ১১টার মধ্যে মাঠ ছেড়ে চলে যায় এবং নির্বাচনকে বিতর্কিত দেখানোর চেষ্টা করে। তাদের উদ্দেশ্যই ছিল নির্বাচনকে বিতর্কিত করা এবং সে সময় তারা ৩টি উদ্দেশ্যেই সফল হয়েছে। নির্বাচনের পর কোনো প্রমাণ ছাড়াই আগের রাতে নির্বাচন হয়েছে বলে প্রোপাগান্ডা ছড়ানো শুরু করে বিএনপি। বিবিসির একটা প্রতিবেদনকে তারা প্রমাণ হিসেবে দেখায় কিন্তু সেই কেন্দ্রের ভোট বাতিল করা হয়েছিল সেটা তারা বলে না।
সারা বাংলাদেশ জুড়ে ৯ কোটির বেশি ভোটার এবং ৪২ হাজার কেন্দ্র। এত বিশাল স্কেলে একটি নির্বাচন আয়োজন করতে কোথাও কোনো সমস্যা হবে না এই গ্যারান্টি কেউ দিতে পারবে না। অনেক জায়গায় অনেক কিছু ব্যত্যয় ঘটতে পারে কিন্তু নির্বাচন কমিশন ব্যবস্থা গ্রহণ করছে কি না সেটাই দেখার বিষয়। আগের দুটি নির্বাচনের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি, কোনোভাবেই সহিংসতা ঘটতে দেওয়া যাবে না। যে ৩০টি দল নির্বাচনে এসেছে তারা নির্বাচনের প্রক্রিয়ার মধ্যে প্রবেশ করেছে। অন্যদিকে যারা নির্বাচনে না এসে সন্ত্রাসের প্রক্রিয়ায় ঢুকেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়ে তাদের শক্তভাবে দমন করা হচ্ছে। যে কোনো মূল্যে নির্বাচনের পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ রাখা হবে। প্রতিটি সংসদীয় আসনে গড়ে ৯ জন বা তার বেশি প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। অর্থাৎ একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হবে।
কালবেলা: যে প্রার্থীরা নির্বাচনে প্রতিযোগিতা করছেন- অনেকে বলছেন, তারা সবাই আওয়ামী লীগের। তারা নৌকা প্রতীকে নির্বাচন না করলেও প্রকৃতপক্ষে তারা আওয়ামী লীগেরই লোক। এই বিষয়টাকে আপনি কীভাবে দেখছেন?
মোহাম্মদ এ আরাফাত: এ ধরনের অভিযোগ সাধারণ মানুষ করছেন না, অভিযোগ করছেন নৌকার বিরোধীপক্ষের মানুষরা। উদাহরণস্বরূপ, আমরা দেখতে পারি, গাজীপুরের মেয়র নির্বাচনকে। সেখানে নৌকার প্রার্থী ছিল এবং নৌকার বাইরেও প্রার্থী ছিল। সেখানে মানুষ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছে। নির্বাচনে নৌকা পরাজিত হয় এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয়ী হয়। সুতরাং মানুষ তাদের প্রতিনিধি নিজেরাই বেছে নেবে। নৌকা প্রতীক এখানে কোনো বিষয় নয়। মানুষ যদি নির্বাচনে এসে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে তাহলেই তো নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হয়। এখানে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার কোনো সুযোগ নেই।
কালবেলা: বিএনপির একটি জনসমর্থন সব সময় ছিল। তাদের বাইরে রেখে নির্বাচন করায় অনেকে প্রশ্ন তুলছেন...
মোহাম্মদ এ আরাফাত: বিএনপি নির্বাচনের বাইরে আছে মানেই বিএনপির ভোটাররা বাইরে আছে- এটা আগে থেকে বলে দেওয়া ঠিক নয়। এর আগের নির্বাচনগুলোতে আমরা দেখেছি বিএনপিকে যারা পছন্দ করেন বা বিএনপিকে ভোট দেন তারা তাদের অন্য কোনো পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়েছেন। হয়তো নৌকার বিপরীতে কোন প্রার্থীকে তারা ভোট দেন। আমরা বিভিন্ন সময়ে দেখেছি বিএনপির অনেক নেতারাও বিভিন্ন এলাকায় নৌকার প্রার্থীর পক্ষে ক্যাম্পেইন করেছেন। কারণ নৌকার সেই এমপি সেখানে এমন উন্নয়ন করেছেন, মানুষের জীবন মানে এমন পরিবর্তন এনেছেন যার ফলে বিএনপির সেই ২০-৩০ শতাংশ সমর্থন এখন আর নেই।
কাজেই দল হিসেবে হয়তো বিএনপি নির্বাচনে আসছে না কিন্তু বিএনপির ভোটাররা নির্বাচনে আসছে না এটা বলা এখনই ঠিক নয়। অনেক দিনের সামরিক শাসনের পর ১৯৯১ সালে নির্বাচন হয়েছিল। নির্বাচনে মানুষের অনেক উৎসাহ উদ্দীপনা ছিল। সেই নির্বাচনে বিএনপি আওয়ামী লীগসহ সকলেই অংশগ্রহণ করেছিল। তারপরেও সেই নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৫৫ শতাংশ। সুতরাং এখন যদি বিএনপিকে ছাড়াই ৪৫ শতাংশ ভোট পড়ে তাহলেই নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন বলতেই হবে।
কালবেলা: বিদ্রোহী প্রার্থীদের ব্যাপারে কোনো অ্যাকশন নেওয়া হবে না বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে দল থেকে। আপনি কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন বিষয়টিকে?
মোহাম্মদ এ আরাফাত: আওয়ামী লীগ বলে দিয়েছে এবারের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা সবার জন্য উন্মুক্ত। নির্বাচনে দাঁড়ানোর সুযোগ উন্মুক্ত করে রাখা হয়েছে, যে কেউ নির্বাচনে দাঁড়াতে পারবে এবং গণতান্ত্রিকভাবে সুন্দর একটি নির্বাচন হবে। মানুষ তার পছন্দমতো প্রার্থী বেছে নিয়ে ভোট দেবেন। নির্বাচনে কেউ কোনো বাড়াবাড়ি করতে পারবে না। কেউ বাড়াবাড়ি করতে গেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। যদি এটাই হয় প্রকৃত পরিস্থিতি তাহলে এখানে বিদ্রোহী প্রার্থী বলে কোনো কিছু নেই। যারা জনপ্রিয় প্রার্থী রয়েছেন তারাই নির্বাচনে জিতবেন। আমরা গণতন্ত্রের সৌন্দর্যের জায়গাটি ধরে রাখতে চাই, এজন্য নির্বাচনে প্রার্থিতা করার বিষয়টি সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছি।
কালবেলা: আপনারা বলছেন বিএনপি নির্বাচনে আসলে সবচেয়ে ভালো হতো। অথচ বিএনপির প্রায় ৪০ জন শীর্ষনেতা জেলে। এই পরিস্থিতিতে বিএনপির পক্ষে কী নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব?
মোহাম্মদ এ আরাফাত: তারা ভোটে আসার সিদ্ধান্ত নিক তাহলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। তারা ভোটে আসার সিদ্ধান্ত নেয়নি, তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে সন্ত্রাসের। এই সন্ত্রাস এবং নৃশংস কার্যক্রম করার প্রক্রিয়ায় তারা জেলে ঢুকেছে। যখনই তারা নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় ফিরে আসবে তার মানে তারা শান্তিপূর্ণ রাস্তায় থাকবে। বিএনপি যদি একটি নির্বাচনী প্রচারণার জন্য মিছিল করত, যদি তারা নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় বিদ্যমান থাকত এবং সেই সময়ে যদি তাকে জেলে ঢোকানো হতো তাহলে অভিযোগ করা যেত। কিন্তু বিএনপি নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মধ্যে নেই, তারা শান্তিপূর্ণ অবস্থানে নেই সুতরাং তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ কী ব্যবস্থা গ্রহণ করছে সেটা নিয়ে প্রশ্ন করা যায় না। বিএনপি হরতাল এবং অবরোধের ডাক দিচ্ছে। এই সিদ্ধান্ত তারা কীভাবে নিচ্ছে? একই প্রক্রিয়ায় তারা নির্বাচনের ডাক দিক। শান্তিপূর্ণভাবে তারা নির্বাচনে আসুক তাহলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
কালবেলা: বিএনপির চলমান হরতাল ও অবরোধ কর্মসূচী নির্বাচনকালীন কোনো চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে কী?
মোহাম্মদ এ আরাফাত: বিএনপি নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছে। যে ৩০টি দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের। যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে সন্ত্রাসের পথে থাকবে তারা কারাগারে থাকবে। আমরা এটা নিশ্চিত করবো যে, যারা নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দেবে তারা কারাগারে থাকবে। আর যারা নির্বাচনে আসতে চাইবে তারা স্বাভাবিকভাবেই সাংবিধানিক সকল সুযোগ সুবিধা পাবে।
২৮ অক্টোবর বিএনপি সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়েছে। তারা অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলা করেছে। তারা পুলিশ সদস্যকে হত্যা করেছে ৪২ জন পুলিশকে আহত করেছে। তারা হাসপাতালে, অ্যাম্বুলেন্সে, যাত্রীবাহী বাসে আগুন লাগিয়েছে, পুড়িয়েছে। বিএনপি'র গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের পরিকল্পনা, নির্দেশনা এবং অর্থ যোগান দেওয়া ছাড়া এমনি এমনি এত কিছু হয়ে গেছে তা মনে করা যাবে না। সুতরাং যারা নির্দেশদাতা, অর্থের যোগানদাতা এবং পরিকল্পনাকারী তাদের বিরুদ্ধে আইনের প্রয়োগ হবে এটাই স্বাভাবিক।
সমগ্র দেশ এবং পৃথিবীর কাছে আমাদের কমিটমেন্ট বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হবে। যিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে প্রকৃতপক্ষেই রেসপেক্ট করেন, যিনি আওয়ামী লীগের বৃহত্তর স্বার্থকে চিন্তা করেন তাকে বুঝতে হবে সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করেই নির্বাচন করতে হবে। কেউ কোন বাড়াবাড়ি করতে পারবেনা।
কালবেলা: এবারের নির্বাচনকে সামনে রেখে আপনারা ভোটারদের কাছে কী প্রতিশ্রুতি নিয়ে যাবেন?
মোহাম্মদ এ আরাফাত: আমরা স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলেছি অর্থাৎ উন্নয়ন হবে। দেশের নাগরিকরা তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে সব ধরনের সুযোগ সুবিধা পাবেন। এবং এটা করতে গিয়ে আমরা পরিবেশ ও প্রতিবেশকে ধ্বংস করব না। আমরা একটি টেকসই উন্নয়ন করব। উন্নয়নটা কোন একটা গোষ্ঠী বা শ্রেণীর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। সমাজের একেবারে প্রান্তিক স্তরের সাধারণ মানুষ পর্যন্ত উন্নয়নের সুবিধা পাবেন। ৫ লক্ষ কোটি টাকা থেকে ৭ লক্ষ কোটি টাকার বাজেট যখন আমরা করি এর মধ্যে এক থেকে দেড় লক্ষ কোটি টাকার বাজেট প্রণয়ন করা হয় সামাজিক নিরাপত্তা বলয় তৈরিতে। এই অর্থ ব্যয় করা হয় বাংলাদেশের সবচেয়ে দরিদ্র পীড়িত মানুষের কাজে। এখানে বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, বয়স্ক ভাতা ছাড়াও আরো অনেক ধরনের ভাতা প্রদান করা হয়। গৃহ হারাদের জন্য গৃহায়ন ও আশ্রয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই কাজগুলো করছেন। আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ বলতে একটি সবুজ বাংলাদেশ, একটি টেকসই উন্নয়নের বাংলাদেশ, একটি ওয়েল ডিস্ট্রিবিউটেড ডেভলপমেন্ট এর কথা বলি। যে উন্নয়নে সকলের কাছে এর সুফল পৌঁছবে সেই বাংলাদেশ আমরা তৈরি করব।
কালবেলা: নির্বাচনের পর নানা ধরনের আন্তর্জাতিক চাপ বা স্যাংশন আসতে পারে বলে অনেকে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। এ ব্যাপারে আপনারা কী মনে করছেন?
মোহাম্মদ এ আরাফাত: যারা স্যাংশনের কথা বলছেন প্রকৃতপক্ষে স্যাংশন সম্পর্কে তাদের ধারণা নেই। আমরা সব ক্ষেত্রে যথেষ্ট অগ্রগতি অর্জন করেছি। সুতরাং পৃথিবীতে কোথায় কে কী চিন্তা করছে সেভাবে আমরা আমাদের দেশ চালাবো না। কোনো কথা বা স্যাংশন আমাদের অগ্রগতি থামিয়ে রাখতে পারেনি। সুতরাং এগুলো নিয়ে আমরা চিন্তিত নই।
কালবেলা: বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে বিএনপির ডাকা হরতাল ও অবরোধ আরো নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে কী?
মোহাম্মদ এ আরাফাত: অবশ্যই বিএনপির ডাকা হরতাল ও অবরোধ অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে এবং ফেলেছে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের একটি ঝাপটা আমাদের গায়েও লেগেছে। কোভিড এবং রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের আগে পর্যন্ত বাংলাদেশের বড় অর্থনৈতিক অগ্রগতি চলমান ছিল। আমাদের অর্থনীতির ভীত শক্ত ছিল বলেই আমরা সেই ঝাপটাটি মোকাবিলা করতে পেরেছিলাম। তবুও আমরা বেশ কিছু ক্রাইসিসের মধ্যে রয়েছি এটাই বাস্তবতা। আমাদের মূল্যস্ফীতির সমস্যা রয়েছে, রিজার্ভ ঘাটতি রয়েছে। তবে আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, যে পলিসি সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া হয়েছে তাতে নির্বাচনের পর প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে অগ্রগতি মানুষ দেখতে পাবে। মূল্যস্ফীতি কমে আসবে, বাজার ঠান্ডা হবে, রিজার্ভ সংকটেরও সমাধান হয়ে যাবে। দেশের অর্থনীতিকে এবং শান্তি-শৃঙ্খলাকে নস্যাৎ করার জন্য যারা পাঁয়তারা করবে তাদের শক্ত হাতে দমন করা হবে।
শ্রুতিলিখন: মুজাহিদুল ইসলাম
মন্তব্য করুন