বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১
মোহাম্মদ এ আরাফাত
প্রকাশ : ০৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:১২ এএম
আপডেট : ১৪ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:৫৩ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
বিশেষ সাক্ষাৎকার

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা সরকারের অঙ্গীকার

মোহাম্মদ এ আরাফাত (তথ্য প্রতিমন্ত্রী)
মোহাম্মদ এ আরাফাত; এমপি, প্রতিমন্ত্রী, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়। ছবি : সৌজন্য
মোহাম্মদ এ আরাফাত; এমপি, প্রতিমন্ত্রী, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়। ছবি : সৌজন্য

মোহাম্মদ এ আরাফাত; এমপি, প্রতিমন্ত্রী, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য ও ঢাকা-১৭ আসনের সংসদ সদস্য। যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা শেষে দেশে ফিরে ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক এবং বিশ্ববিদ্যালয়টির বোর্ড অব ট্রাস্টির প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। দেশের গণমাধ্যমের বর্তমান অবস্থা, চ্যালেঞ্জ, আগামী দিনের পরিকল্পনা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও কর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করাসহ নানা বিষয়ে কালবেলার সঙ্গে কথা বলেন।

কালবেলা: পরিবর্তিত বিশ্ব প্রেক্ষাপটে কেমন করছে বাংলাদেশের গণমাধ্যম?

মোহাম্মদ এ আরাফাত: বাংলাদেশের গণমাধ্যম আরও এগিয়ে গেছে এবং আরও বিস্তৃতি লাভ করছে। বাংলাদেশের মিডিয়া আরও সংরক্ষিত হচ্ছে। সারা বিশ্বে যেখানে মিডিয়া দিনে দিনে প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশের মিডিয়া আরও ভালো করছে। বাংলাদেশে অনেক বেশি গণমাধ্যম কাজ করছে। কিছু কিছু জায়গায় প্রশাসনের সঙ্গে গণমাধ্যমকর্মীদের সমস্যা হয়েছে এবং সেখানে তথ্য কমিশন হস্তক্ষেপ করেছে। তথ্য কমিশন তাদের ক্ষমতা ব্যবহার করে তদন্ত করেছে এবং তারা সাংবাদিকতাকে সুরক্ষিত করার জন্য সচেষ্ট রয়েছে।

আমরা বাংলাদেশের গণমাধ্যম এবং গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য একটি স্বাস্থ্যকর সুন্দর পরিবেশ নিশ্চিত করতে চাই। এ কারণে দেশের তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে কিছুদিন আগেও আমি ২ কোটি ৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছি। শুধু সাংবাদিকরাই নন বরং তাদের পরিবার-পরিজন, যারা কষ্টে রয়েছেন তাদের সহযোগিতার চেষ্টা করছি আমরা। প্রধানমন্ত্রীই সর্বপ্রথম এ ধরনের উদ্যোগ হাতে নিয়েছেন। এ অর্থ প্রদান করার সময় দল-মত কোনো কিছুই দেখা হয় না। শুধু কাদের অর্থ প্রয়োজন রয়েছে, সেটা দেখা হয়। এখানে পক্ষে-বিপক্ষে কোনো কিছু চিন্তা করা হয় না। টেলিভিশন, পত্র-পত্রিকাসহ সব ধরনের গণমাধ্যমের কর্মীরা সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের আওতায় রয়েছেন। সাংবাদিক ও গণমাধ্যমের কল্যাণ, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সর্বোপরি গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা আমাদের অঙ্গীকার। একসঙ্গে আমরা অপতথ্যকে মোকাবিলা করতে চাই এবং সেটা চাই প্রফেশনাল সাংবাদিকদের স্বার্থে।

কালবেলা: সংবাদ পরিবেশনে দেশের গণমাধ্যমের পেশাদারিত্ব সম্পর্কে আপনার অভিজ্ঞতা কেমন?

মোহাম্মদ এ আরাফাত: দৃষ্টিভঙ্গি বা পয়েন্ট অব ভিউ এখানে গুরুত্বপূর্ণ। যে কোনো একটি বিষয়কে দুভাবে দেখা যেতে পারে এবং কোনোটাই হয়তো অসত্য নয়। সে ক্ষেত্রে দুটি গণমাধ্যমে দুরকম সংবাদ পরিবেশন করতে পারে। আমি এর বিপক্ষে নই। বহুবিধ গণমাধ্যম থাকলে সব দৃষ্টিভঙ্গি মানুষের সামনে চলে আসবে এবং মানুষ সেখান থেকে সঠিক তথ্যটি বেছে নিতে পারবেন। তবে আমি যে বিষয়টা তীব্র বিরোধিতা করি তা হলো—সম্পূর্ণ মিথ্যা সংবাদ প্রচার করা। অসত্য তথ্য দিয়ে মিথ্যাচার করা এবং গুজব ছড়ানো। এ বিষয়টি পেশাদার সাংবাদিকতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। গণতন্ত্র এবং দেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। দিনশেষে সাধারণ মানুষ মিথ্যা তথ্যের কারণে বিভ্রান্ত হয়। আমরা নিশ্চিত করতে চাই যাতে কোনোভাবেই এ ধরনের মিথ্যা সংবাদ প্রচার করা না হয়।

কালবেলা: মিথ্যা সংবাদ প্রচার হবে না—এটা কীভাবে নিশ্চিত করবেন?

মোহাম্মদ এ আরাফাত: সংবাদপত্রগুলোতে যাতে অসত্য সংবাদ প্রচার না হয়, সেজন্য আমরা কাজ করছি। পিআইডির অধীনে আমাদের একটি ফ্যাক্ট চেকিং বডি রয়েছে। তাদের সঙ্গে আমি বসব, তাদের কাজকে কীভাবে আরও ইনক্লুসিভ করা যায়, সে ব্যাপারে আমরা চিন্তা করব। বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারের মতামত নেওয়া এবং তাদের এখানে অন্তর্ভুক্ত করার ব্যবস্থা তৈরি করব। এমন একটি সিস্টেম তৈরি করতে চাই, যাতে এ বিভাগের ব্যাপারে মানুষের আস্থা আরও বৃদ্ধি পায়।

আমরা সরকারের পক্ষে কোনো কার্যক্রম হাতে নিচ্ছি না। বরং আমরা শুধু সত্যের পক্ষে এবং অসত্যের বিপক্ষে কাজ করতে চাচ্ছি। আমরা বিশ্বাস করি, সমাজে সত্য প্রতিষ্ঠিত হলে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি এমনি এমনিই সুবিধা পাবে। আমাদের কোনো কিছু হারানোর নেই। আমরা সবকিছুকে সংযুক্ত করে এমন একটি ব্যবস্থা গড়ব যাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে শুরু করে সমাজের বিভিন্ন স্তরে যেখানে গুজব, অপতথ্য ও মিথ্যাচার হবে সেটা যেন আমরা সবাই মিলে মোকাবিলা করতে পারি।

কালবেলা: আপনি ফ্যাক্ট চেকিং বডির কথা বলছিলেন। বিষয়টা একটু পরিষ্কার করবেন কি?

মোহাম্মদ এ আরাফাত: সরকারের অধীনে আমাদের একটি ফ্যাক্ট চেকিং বডি রয়েছে, যেটার ব্যাপারে অনেকেই জানেন না। এটা একটি প্রজেক্টের অধীনে কাজ করছে। আমি এটাকে আরও বৃহত্তর পরিসরে নিয়ে আসতে চাই এবং এ ফ্যাক্ট চেকিং বডি যাতে দৃশ্যমান হয়, সে ব্যাপারে আমি কাজ করব।

এই ফ্যাক্ট চেকিং বডি রাষ্ট্রীয় একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পরিচালিত হবে সেহেতু আমরা এর মধ্যে গণমাধ্যমের সব প্রতিষ্ঠানকে অন্তর্ভুক্ত করব। আমরা অন্তর্ভুক্তিমূলক একটি প্রচেষ্টা নিতে চাই। যখন অসত্য কিছু প্রচার করা হয় তখন ফ্যাক্ট চেকিংয়ের মাধ্যমে সত্যটি তুলে ধরলে গণমাধ্যমও সেটাকে রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে। আর এ ক্ষেত্রে আমরা কোনো ধরনের বৈষম্য করতে চাই না। এমনকি আমরা যাদের দিয়ে এ ফ্যাক্ট চেকিং বডি তৈরি করব সেখানেও কোনো ধরনের দলমতকে প্রাধান্য দেব না। আমাদের উদ্দেশ্য একটাই আর তা হলো সত্যকে সামনে তুলে ধরা।

কালবেলা: তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রত্যেক গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের সাংবাদিকের একটি আলাদা প্রোফাইল তৈরির কথা বলা হয়েছিল। এ বিষয়ে আপনার পরিকল্পনা কী?

মোহাম্মদ এ আরাফাত: অবশ্যই এ বিষয়ে আমি চিন্তা করছি। বড় কথা, বড় পেশাদার সাংবাদিক সবাই এ দাবি করছেন। গণমাধ্যমকে একটা নিয়মের মধ্যে আনার দাবি করছেন সবাই। কারণ এখানে যত বেশি ইনডিসিপ্লিন থাকবে পেশাদারিত্ব ততটাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কিন্তু আমরা সরকারিভাবে যখনই বলব আমরা প্রোফাইলিং করতে যাচ্ছি তখনই অপপ্রচারকারী গোষ্ঠীটি এ বিষয়টাকে ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে এমনভাবে উপস্থাপন করবে যেন আমরা গণমাধ্যমের ওপর হস্তক্ষেপ করছি। এই কাজগুলো আমরা সাংবাদিকদের স্বার্থে করতে যাচ্ছি যাতে তাদের পেশাদারিত্ব সুরক্ষিত হয়।

কালবেলা: সাংবাদিকদের মানসম্পন্ন ও যুগোপযোগী প্রশিক্ষণের কোনো উদ্যোগ কি আপনারা নেবেন?

মোহাম্মদ এ আরাফাত: আমাদের সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণের জন্য বিভিন্ন ইনস্টিটিউট রয়েছে। আমরা এসব ইনস্টিটিউটের ব্যাপ্তি বৃদ্ধি করার চেষ্টা করব এবং একই সঙ্গে এর মান বৃদ্ধিতে কাজ করব। আমরা চাই প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর একজন সাংবাদিকের শুধু বাংলাদেশে নয়, বাংলাদেশের বাইরেও কাজ করার সক্ষমতা তৈরি হবে।

প্রযুক্তির উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে অনেক পরিবর্তনও সামনে চলে আসে। সেই পরিবর্তনগুলোর সঙ্গে আমাদের সাংবাদিকদের খাপ খাইয়ে নিতে হবে। আমরা সেভাবেই সাংবাদিকদের প্রশিক্ষিত করতে চাই। আমরা চাই আমাদের সাংবাদিকরা যাতে প্রশিক্ষিত হয়ে নতুন প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে ভালো কিছু করতে পারেন।

গত ১৫ বছরে আমাদের সাংবাদিকতার ব্যাপ্তি অনেকগুণ বেড়েছে। এখন মান উন্নয়ন প্রয়োজন এবং সেখানে প্রশিক্ষণের কোনো বিকল্প নেই। ইলেকট্রনিক মিডিয়ার যে ব্যাপ্তি হয়েছে, প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে সবই এখন এক হয়ে গেছে। এখন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াও অনলাইনে যাচ্ছে। তারাও অনলাইনে টকশো করছে, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করছে। এই যে সবকিছু মিলে একটা পরিস্থিতি হয়েছে, এ পরিস্থিতিতে যেতে প্রযুক্তি আমাদের বাধ্য করেছে। এ পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে স্টেকহোল্ডার (অংশীজন) সবার মতামত আমি নিচ্ছি। তাদের মধ্যে একটি ঐকমত্য আছে যে, গণমাধ্যম ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা যেমন দরকার, তেমনি অপতথ্য রোধ করাও জরুরি।

কালবেলা: গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা হয়। এগুলোকে সরকার কীভাবে দেখে?

মোহাম্মদ এ আরাফাত: সব সমালোচনাই যে তথ্যের ওপর ভিত্তি করে করা হয় তা নয়। অসত্য তথ্যের ওপর ভিত্তি করেও অনেক সমালোচনা করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে মনগড়া সমালোচনাও করা হয়। আমরা মনে করি কাজ করতে গিয়ে বিভিন্ন বিষয়ে ভুল হতে পারে। আমরা গঠনমূলক সমালোচনাকে স্বাগত জানাই। তবে ভুল ও মিথ্যা সমালোচনাকে আমরা বন্ধ করতে চাই।

কালবেলা: অনেকে বলেন দেশের গণমাধ্যমে স্বাধীনতা নেই। এ বিষয়ে আপনার অভিমত কী?

মোহাম্মদ এ আরাফাত: মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নেই, এটা আমি কীভাবে প্রমাণ করব? কারণ, প্রতিদিন টেলিভিশনগুলোয় সম্প্রচারিত অনুষ্ঠানগুলোর ৬০ থেকে ৭০ শতাংশে সরকারের সমালোচনা হচ্ছে। যখন গুণগতভাবে প্রমাণ করতে পারছে না, তখন একটা ন্যারেটিভ বা ধারণা তৈরি করছে, যেটা মাপা যায় না। আমি এর সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করি। কিন্তু এখানে কোনো প্রমাণ হাজির করার সুযোগ নেই যে, এ কারণে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে।

কালবেলা: বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানের করা প্রতিবেদনে বাংলাদেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতার সূচকে নিম্নমুখী প্রবণতার বিষয়টি উঠে আসে। সূচকে উন্নতিতে আপনি কী পদক্ষেপ নেবেন?

মোহাম্মদ এ আরাফাত: আমাদের গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তোলেন বিশেষ করে বিদেশি গবেষণা সংস্থা। সেখানে তাদের অনেক ভুল তথ্য দেওয়া হয়। আন্তর্জাতিক সংস্থা সিপিজেসহ কিছু গবেষণা প্রতিষ্ঠান কিছুদিন আগে বিভিন্ন দেশের মুক্ত গণমাধ্যম র‌্যাঙ্কিং প্রকাশ করেছিল। বাংলাদেশ সম্পর্কিত তাদের তথ্যে অনেক ভুল ছিল। আমরা তাদের সেই সব ভুল ধরে চিঠি দিয়েছিলাম। আমরা চিঠি দেওয়ার পর তারা সেই তথ্য সরিয়ে নিয়েছে। কেউ কোথাও অপতথ্যের ওপর ভিত্তি করে র‌্যাঙ্কিং করলে আমরা সেটা ধরিয়ে দেব। আর যদি কেউ সঠিক বিষয় তুলে ধরে যেখানে আমাদের ঘাটতি এবং উন্নতি করার সুযোগ রয়েছে, সে ক্ষেত্রে আমরা দৃষ্টি দেব। আমরা আন্তর্জাতিক মুক্ত গণমাধ্যম রাঙ্কিংয়ে অনেক ধাপ এগিয়ে যেতে চাই।

সম্প্রতি আমি আরএসএফ ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন ও র‌্যাঙ্কিংয়ের ব্যাপারে সমালোচনা নয়, বরং প্রকৃত তথ্য তুলে ধরেছি। আরএসএফের প্রতিবেদনে অনেক ভুল তথ্য আছে এবং এর বিপরীতে প্রকৃত সত্য আমি তথ্য-প্রমাণসহ গণমাধ্যমে তুলে ধরেছি। এ সংক্রান্ত একটা চিঠি আরএসএফকে পাঠিয়েছি। আমাদের উদ্দেশ্য আরএসএয়ের কাছে সত্য তুলে ধরা এবং আমাদের নিয়ে করা র‌্যাঙ্কিং পুনর্মূল্যায়ন করা। মাঝেমধ্যে কিছু মানুষ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে খারাপ উদ্দেশ্যে সরকারের কাজের সমালোচনা করে। বর্তমান সরকার গঠনমূলক সমালোচনাকে স্বাগত জানায়। আমরা শুধু অপতথ্য ও ভুল তথ্য প্রতিরোধ করতে চাই। গণমাধ্যম সঠিক তথ্য-প্রমাণসহ সরকারের সমালোচনা করলে, সেটি সরকারকে সহযোগিতা করে। কিন্তু ভুল তথ্য দিয়ে কোনো কিছুর সমালোচনা করলে, সেটা কাউকে সহযোগিতা করে না।

কালবেলা: দেশের গণমাধ্যম যেভাবে চলছে সেটি কি সঠিক পথ বলে মনে করেন?

মোহাম্মদ এ আরাফাত: প্রযুক্তির পরিবর্তন আসছেই। এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে যারা এগোবে, তারাই টিকবে। কারণ, গণমাধ্যমের তো একটা বাণিজ্যিক দিকও আছে। বাণিজ্যিক দিকটা দেখতে গিয়ে সাংবাদিকতার প্রশ্নে কম্প্রোমাইজ (সমঝোতা) করা যাবে না। আমি মনে করি, রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে গণমাধ্যমের কাজ হলো কর্তৃপক্ষকে প্রশ্ন করা, চ্যালেঞ্জ করা। ত্রুটি পেলে তার সমালোচনা করতে হবে। এটি সরকারকে সহযোগিতা করবে। কিন্তু যখনই উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ভুল তথ্য দেওয়া হয় বা যখন একটা ভুল তথ্যের ওপর ভিত্তি করে প্রাসাদসম গল্প তৈরি করে দেখানো হয়, সেখানেই আমাদের আপত্তি। আমাদের দল অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি করে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে। আর আমাদের প্রতিপক্ষ হলো জঙ্গিবাদী-মৌলবাদী একটা ধারা। সেখানে গণমাধ্যম যদি তথাকথিত নিরপেক্ষ একটা ভূমিকা নেয় এবং যার কারণে জঙ্গিবাদ-মৌলবাদ সুবিধা পায়, তখন তর্কটা শুরু হয়।

কালবেলা: সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেই অপতথ্য ছড়ানোর অভিযোগ বেশি এসেছে। এটি বন্ধে আপনি কী পদক্ষেপ নেবেন?

মোহাম্মাদ এ আরাফাত: আমি আইনি কাঠামোর বাইরে সামাজিকভাবেই বিষয়গুলো প্রকাশ করতে চাই। কাউকে আইনের মধ্যে এনে শাস্তি বা সাজা দেওয়া, এটা চাই না। এর চেয়ে প্রকাশ করা তথ্যের গ্রহণযোগ্যতাকে চ্যালেঞ্জ করতে চাই। বিদেশ থেকে যারা অপতথ্য ছড়াচ্ছে, তাদের গ্রহণযোগ্যতা এখন নেই। এগুলো মানুষ দেখে বিনোদনের জন্য। কিন্তু আস্থায় নেয় না। আমরা সেই জায়গায় নিতে চাই, যাতে কোথায় গেলে সঠিক তথ্য পাওয়া যাবে, তা মানুষ বুঝতে পারবে।

কালবেলা: আপনি তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। এ মন্ত্রণালয়কে নতুন করে সাজানোর কোনো পরিকল্পনা আপনার রয়েছে কি?

মোহাম্মদ এ আরাফাত: তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় অনেক বড় একটি জায়গা। এখানে অনেক ডিপার্টমেন্ট রয়েছে। নতুন করে সাজানোর তেমন কিছু নেই। তবে আমি কাজগুলো কিছুটা আমার নিজের স্টাইলে করতে চাইব। অনেক ধরনের কাজ রয়েছে যেখানে সর্বোচ্চ পর্যায়ের হস্তক্ষেপের প্রয়োজন নেই। একটি ভালো সিস্টেম দাঁড় করালে এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সমাধান হয়ে যায়। এসব জায়গায় সময় বাঁচাতে পারলে অনেক স্ট্র্যাটেজিক জায়গায় দৃষ্টি দেওয়া সম্ভব হবে। আমি কিছু কিছু জায়গা গোছানোর চেষ্টা করব তবে কাঠামোগতভাবে সবকিছু একইরকম থাকবে সেখানে পরিবর্তনের তেমন প্রয়োজন আছে বলে এ মুহূর্তে আমার মনে হচ্ছে না। আমার আগে মোহাম্মদ হাছান মাহমুদ এ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকালে অনেক ভালো কাজ করেছেন। অনেক গুছিয়ে রেখেছেন মন্ত্রণালয়। এ ক্ষেত্রে আমার কাজ অনেক সহজ হয়েছে। তবে নতুন কোনো চিন্তা এলে আপনাদের সঙ্গে আলোচনা করব।

শ্রুতিলিখন: মুজাহিদুল ইসলাম

[ নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার, প্রতিক্রিয়া প্রভৃতিতে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। দৈনিক কালবেলার সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক, আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের, দৈনিক কালবেলা কর্তৃপক্ষের নয়। ]
কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

কক্সবাজারে বজ্রপাতে ২ লবণ চাষীর মৃত্যু

‘মা ও শিশু স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে বাংলাদেশ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’

প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত

তীব্র তাপপ্রবাহের পর চট্টগ্রামে স্বস্তির বৃষ্টি

৩ ঘণ্টা পর রাজবাড়ীতে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক

মিল্টন সমাদ্দারকে জিজ্ঞাসাবাদে সাত দিনের রিমান্ড চাইবে পুলিশ

ড. ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন শুনানি পেছাল

যুদ্ধ বন্ধে বিশ্ব নেতাদের আহ্বান জানিয়েছি : প্রধানমন্ত্রী

আওয়ামী লীগ সব সময় মানুষের কল্যাণে কাজ করে : প্রধানমন্ত্রী

ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বিপুল পুলিশ, তীব্র উত্তেজনা

১০

প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন শুরু

১১

দলকে ফাইনালে তুলে রোনালদো বললেন ‘চলো যাই’

১২

ঢাকায় কখন বৃষ্টি হবে আজ

১৩

বৃহস্পতিবারও সারাদেশে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ

১৪

প্রকাশ্যে মডেলকে গুলি করে হত্যা (ভিডিও)

১৫

জাতিসংঘকে হুমকি দিল ইসরায়েল

১৬

ফিলিস্তিনের নাম শুনেই বমি করতে চান ইসরায়েলি দূত

১৭

মিল্টন সমাদ্দারকে নিয়ে কালবেলার সেই নিউজ / মানবিক মুখোশের আড়ালে ভয়ংকর মিল্টন সমাদ্দার

১৮

মিল্টন সমাদ্দারকে আদালতে তোলা হবে আজ

১৯

মিল্টন সমাদ্দার নিয়ে সর্বশেষ

২০
*/ ?>
X