ড. মো. আনোয়ার হোসেন
প্রকাশ : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৮:২০ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস- সৃষ্টি যার বিধান তার?

ড. মো. আনোয়ার হোসেন। ছবি : সংগৃহীত
ড. মো. আনোয়ার হোসেন। ছবি : সংগৃহীত

গণতন্ত্র সমাজ বা রাষ্ট্র ব্যবস্থার একটি বিশেষ রূপ। জনগণের সরকার ব্যবস্থা হিসেবেই এটি সমাদৃত হচ্ছে। ইংরেজি Democracy শব্দের বাংলা অর্থ গণতন্ত্র। ইংরেজি Democracy শব্দটি গ্রিক শব্দ Demos ও Kratia থেকে উৎপন্ন হয়েছে। Demos শব্দের অর্থ জনগণ আর Kratia শব্দের অর্থ শাসন বা ক্ষমতা। উভয় শব্দের মিলিত অর্থ দাঁড়ায় জনগণের শাসন বা জনগণের ক্ষমতা। জনপ্রিয়ভাবে গণতন্ত্র বলতে বোঝায়, একটি বিশেষ ধারণা বা পদ্ধতি যেখানে সামাজিক ব্যবস্থা-রাষ্ট্রের বিধানাবলি প্রণয়নের চূড়ান্ত ক্ষমতা অর্পণ করা হয় জনগণের উপর বা তাদের মনোনীত প্রতিভুর উপর। সংক্ষেপে বলতে গেলে বৃহত্তর অংশের অভিমতের ভিত্তিতে শাসনকার্য পরিচালনাকে গণতন্ত্র বলে।

১৫ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস। গণতন্ত্র সম্পর্কে এবং এর অন্তর্নিহিত শক্তি উপলব্ধি করতে আগ্রহ সৃষ্টির জন্য ২০০৭ খ্রি. থেকে শুরু করে প্রতি বছর ১৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সদস্যভুক্ত দেশগুলোর প্রচলিত একটি বিশেষ দিন ‘আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস’। এ দিবসের মূল লক্ষ্য হলো গণতন্ত্রের নীতিগুলো প্রচার ও সমুন্নত রাখা, যা স্বাধীনতা, আইনের শাসন, নাগরিক অধিকার, জবাবদিহিমূলক প্রতিষ্ঠান ও মানবাধিকারকে সমর্থন করে। চলতি বছরের আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবসের মূল প্রতিপাদ্য : ‘গভরনেন্স ও সিটিজেন এনগেজমেন্টের জন্য এআই নেভিগেট করা’, তথা সুশাসন ও নাগরিক অংশগ্রহণের জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে ব্যবহার করা।

অন্যতম শীর্ষ প্রবক্তা আমেরিকান প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন ১৮৬৩ সালে গেটিসবার্গের এক জনসভায় ‘গণতন্ত্র’-এর অর্বাচীন সংজ্ঞা দেন এভাবে যে, Democracy is the government of the people by the people and for the people. অর্থাৎ ‘গণতন্ত্র এমন একটি সরকার ব্যবস্থা, যা জনগণের উপর জনগণের দ্বারা পরিচালিত জনগণের শাসন ব্যবস্থা বোঝায়।’

গ্রিক ঐতিহাসিক ও দার্শনিক হিরোডোটাস (Herodotus) গণতন্ত্রের সংজ্ঞায় বলেন, এটা এক প্রকার শাসন ব্যবস্থা যেখানে শাসন ক্ষমতা কোনো শ্রেণি বা শ্রেণিগুলোর উপর ন্যস্ত থাকে না, সমাজের সদস্যগণের উপর ন্যস্ত হয় ব্যাপকভাবে।

অধ্যাপক শেলী বলেন, Democracy is a form of government in which every one has a share in it. অর্থাৎ ‘যে সরকার ব্যবস্থায় সাধারণ জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত থাকে তাকে গণতন্ত্র বলে।’

সারকথা জনগণের অভিপ্রায় সদৃশ শাসনব্যবস্থার অভিধাই গণতন্ত্র। অন্যভাবে বলতে গেলে, গণতন্ত্র হলো এমন একটি শাসন ব্যবস্থা যা সম্পূর্ণরূপে জনসমষ্টির ইচ্ছাধীনে পরিচালিত।

এখন আসছি এ নিবন্ধের প্রধান বিষয় গণতন্ত্র ও ইসলামের সম্পর্ক নিয়ে :

গণতন্ত্র বিষয়ে অনেকে ব্যাখ্যা প্রদান করেন যে, ‘বর্তমানে যে কয়টি রাজনৈতিক মতবাদ প্রচলিত আছে, তন্মধ্যে গণতন্ত্র অন্যতম ধর্মহীন। ধর্মহীন জাতীয় গণতন্ত্র মতবাদটি ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র এবং জাতীয়তাবাদ এই তিনটি মতাদর্শের সমন্বয়। তারা আরও যোগ করেন যে, এই তিনটি মতবাদ একটি সুদৃঢ় যোগসূত্রে বাঁধা।

এ বিষয়ে আমার ধারণা হলো- বাংলাদেশে যে উদ্দেশ্যে ১৯৭২ সালে সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা সংযুক্ত করা হলো - ধর্ম নিরপেক্ষতার অর্থ হলো রাষ্ট্র ও ধর্মকে আলাদা রাখা এবং রাষ্ট্র কর্তৃক কোনো নির্দিষ্ট ধর্মের প্রতি পক্ষপাতিত্ব না করা। এটি এমন একটি নীতি যা কোনো নির্দিষ্ট ধর্মকে সমর্থন না করে মানব বিষয় ও নাগরিক অধিকারকে গুরুত্ব দেয়। এর মূল উদ্দেশ্য হলো- ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষা করা। জাতীয়তাবাদ হলো- নিজের জাতির প্রতি গভীর প্রেম ও গর্বের একটি শক্তিশালী অনুভূতি। এটি এমন একটি ধারণা যা একটি নির্দিষ্ট জাতির স্বার্থকে অন্য সব কিছুর উপরে স্থান দেয় এবং একটি জাতির নিজস্ব স্বায়ত্তশাসিত, স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ও রক্ষণাবেক্ষণে বিশ্বাসী। আল্লাহতায়ালা তাঁর মনোনীত দ্বীন ইসলামকে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর মাধ্যমে পূর্ণতা দান করেছেন। তিনি মুমিনদের নির্দেশ দিয়েছেন পরিপূর্ণভাবে ইসলামের মধ্যে প্রবেশ করতে। সুযোগ নেই এ দ্বীনের মধ্যে কিছু সংযোজন, বিয়োজন কিংবা পরিবর্তন, পরিবর্ধন করার। বড়ই আফসোসের বিষয় আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের সুস্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও দেখা যাচ্ছে এক শ্রেণির মুসলিমের মধ্যে ইসলামে সংযোজন-বিয়োজনের প্রবণতা।

আধুনিক কালের পশ্চিমা সভ্যতার আগ্রাসী জোয়ারকে যৌক্তিক ভাবে মোকাবিলায় অক্ষম এক শ্রেণির ইসলামি চিন্তাবিদ বিজাতীয় মতাদর্শকে কিছুটা সংস্কার করে ইসলামের মধ্যে গ্রহণ করার চেষ্টা চালিয়ে ছিলেন। বর্তমানেও ঐ মানসিকতার ইসলামি চিন্তাবিদরা মানব রচিত গণতন্ত্রকে ইসলামের মধ্যে আত্মীকরণ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। অর্থাৎ গণতন্ত্র ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে হারাম হলেও, স্থান কাল অবস্থার আলোকে তকমা দিয়ে নিজেদের সুবিধার্থে হারামকে আরাম বানিয়ে ফেলছেন। বিশেষ করে ক্ষমতার দ্বারপ্রান্তে আরোহণ করার স্বার্থে জায়েজ ফতোয়া দিয়ে দিচ্ছেন।

বিগত ও বর্তমান শতাব্দীতে প্রভাব বিস্তার করে থাকা বিজাতীয় রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক মতবাদ ‘গণতন্ত্র’ সম্পর্কে একশ্রেণির ইসলামি চিন্তাবিদ অনুরূপ ভাষ্য প্রদান করে গণতন্ত্রকে মুসলিম বিশ্বে গ্রহণযোগ্য করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন। তারা বলছেন, শুধু সার্বভৌমত্বের প্রসঙ্গটি বাদ দিলে গণতন্ত্রকে ইসলামের মধ্যে গ্রহণে কোনো সমস্যা নেই।

গণতন্ত্র ও ইসলাম কেন পরস্পরবিরোধী- এ প্রবন্ধে আমরা তা তুলে ধরায় প্রয়াস পাব। গণ মানুষের ইচ্ছা বা আইন অনুসারে পরিচালিত হয় বলেই এর রাষ্ট্র বা শাসন ব্যবস্থাকে গণতন্ত্র বলা হয়। অন্যদিকে ইসলাম আল্লাহর মনোনীত জীবন ব্যবস্থা। আল্লাহর খলিফা হিসেবে এবং তাঁর ইচ্ছানুসারে পরিচালিত হয় বলে ইসলামের শাসন ব্যবস্থাকে খিলাফত বলা হয়। পক্ষান্তরে ‘খেলাফত’ আল্লাহর অনুমোদিত শাসন ব্যবস্থার নাম। নিম্নে ইসলাম ও গণতন্ত্রের পারস্পরিক সংঘর্ষের দিকগুলো উল্লেখ করা হলো। গণতন্ত্রে জনগণের সার্বভৌমত্ব মানা হয় । পক্ষান্তরে ইসলামের খিলাফতি রাষ্ট্রে আল্লাহর সার্বভৌমত্ব মানা হয়, যা তাওহিদের অন্তর্ভুক্ত। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে রাষ্ট্র পরিচালনার অর্থ হলো মানুষের প্রতিনিধি হিসেবে রাষ্ট্র পরিচালনা। পক্ষান্তরে খিলাফতের ভিত্তিতে রাষ্ট্র পরিচালনার অর্থ হলো আল্লাহর প্রতিনিধি হিসেবে রাষ্ট্র পরিচালনা। গণতন্ত্রের মূল দর্শন হলো মানুষকে সন্তুষ্ট করা যেভাবেই হোক। পক্ষান্তরে ইসলামি খিলাফতের মূল উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করা।

গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ধর্ম নিছক একটি ব্যক্তিগত ব্যাপার। পক্ষান্তরে ইসলামি খিলাফতে ধর্ম শুধু ব্যক্তিগত জীবনে নয় মানুষের সার্বিক জীবনে ধর্মের বিধি-বিধান বাস্তবায়ন করে। রাষ্ট্রের সার্বিক ব্যবস্থাপনা ধর্মের নীতিমালা অনুসরণ করে চলে।

গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জনগণ যেহেতু সব ক্ষমতার মালিক। এতে সংখ্যাগরিষ্ঠ রায়ে যে কোনো ব্যক্তি যেমন রাষ্ট্র প্রধান হতে পারে, তেমনি ইচ্ছামতো যে কোনো আইন রচনা করতে পারে। এজন্য ‘Majority must be granted’ হলো গণতন্ত্রের চূড়ান্ত কথা। পক্ষান্তরে ইসলামি রাষ্ট্রে আল্লাহকেই যেহেতু সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক মানা হয়। কেননা আল্লাহ অধিকাংশের মতানুসরণকে নিরুৎসাহিত করেছেন। (আনআম ১১৬)।

গণতন্ত্রে রাজনীতি চলে বহুদলীয় পদ্ধতিতে। একদল সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে নির্বাচিত হয়ে রাষ্ট্র বা সরকার পরিচালনা করে। ভোটে পরাজিত দল বা দলগুলো বিরোধী দলে থেকে সরকারের সমালোচনা করে। পক্ষান্তরে ইসলামি রাষ্ট্রে রাষ্ট্র বা সরকার ব্যবস্থায় বহুদলীয় ব্যবস্থাপনা স্বীকৃত নয়। ইসলামি রাষ্ট্রের খলিফা উম্মাহর দায়িত্বশীল বা খাদেম হিসেবে রাষ্ট্র পরিচালনা করেন। তিনি বিশেষ কোনো দলের লোক হন না।

গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রাষ্ট্রপ্রধান বা শাসক একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকেন। মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে সার্বিক যোগ্যতা ও সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তাকে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হয়। পক্ষান্তরে ইসলামি খিলাফতে রাষ্ট্রপ্রধান যতদিন যোগ্যতা ও সক্ষমতার সাথে শাসনকার্য পরিচালনা করতে পারবেন ততদিন ওই দায়িত্বে বহাল থাকবেন। গণতন্ত্রে নেতাকে পদপ্রার্থী হতে হয়। অপরপক্ষে ইসলামে কেউ নেতৃত্ব বা পদ চাইলেই তিনি নেতৃত্ব দানের অযোগ্য বিবেচিত হন, তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয় না। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের শূরা বা পরামর্শ পদ্ধতি এবং ইসলামি রাষ্ট্রের শূরা বা পরামর্শ পদ্ধতি এক রকম নয়। অথচ এই শূরা ব্যবস্থাকেই গণতন্ত্রের সাথে ইসলামের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনার সাদৃশ্য প্রমাণের জন্য সবচেয়ে বেশি যুক্তি উপস্থাপন করা হয়।

গণতন্ত্রের মূলনীতিগুলো সুস্পষ্টভাবে ইসলামবিরোধী হিসেবে প্রতীয়মান হয়। যেমন : গণতন্ত্রের মূল কথা জনগণের সার্বভৌমত্ব। অর্থাৎ সব ক্ষমতার মালিক সব ক্ষমতার উৎস জনগণ। এ কথা নিঃসন্দেহে আল্লাহবিরোধী। কেননা আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘রাজত্বে তাঁর কোনো শরিক নেই।’ (বনী ইসরাঈল ১৭/১১১)

গণতন্ত্রে আইন-বিধান রচনার চূড়ান্ত ক্ষমতা অর্পণ করা হয় পার্লামেন্ট সদস্যদের উপর। সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য যেটা বলবে, যে বিষয়ে সম্মত হবে সেটাই হবে দেশের সর্বোচ্চ আইন, যার বিরোধিতা করা আইনত অপরাধ। সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে তারা পতিতাবৃত্তির লাইসেন্স দেওয়া, মদের লাইসেন্স দেওয়া, সুদের বৈধতা দেওয়া, ১৬ বছর বয়সে পারস্পরিক সম্মতিতে যেনা করলে তার বৈধতা দেওয়া, প্রকাশ্যে বেহায়াপনা ও অশ্লীলতার চর্চাকে অনুমোদন দেওয়া ইত্যাদি। এ ধরনের নীতিমালা নিঃসন্দেহে আল্লাহর বিরোধী। কেননা আল্লাহ বলেন, ‘শুনে রাখ! সৃষ্টি যার হুকুম চলবে তার।’ (আ‘রাফ ৭/৫৪)

গণতন্ত্রে যে কোনো মতবিরোধ বা বিতর্কের চূড়ান্ত মীমাংসাকারী বানানো হয় সংবিধান ও এর ধারাসমূহ এবং পার্লামেন্টের সংখ্যাগরিষ্ঠতাকে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘অতঃপর যদি কোনো বিষয়ে তোমরা বিতণ্ডা কর, তাহলে বিষয়টি আল্লাহ ও রাসুলের দিকে ফিরিয়ে দাও। যদি তোমরা আল্লাহ ও আখেরাতের প্রতি বিশ্বাসী হয়ে থাক। এটাই কল্যাণকর ও পরিণতির দিক দিয়ে সর্বোত্তম।’ (নিসা ৪/৫৯)

গণতান্ত্রিক পার্লামেন্টের সদস্য হওয়ার জন্য ন্যায়-নিষ্ঠতা, জ্ঞান-গরিমা, সততা, আল্লাহভীরুতার কোনোই শর্ত নেই। নির্বোধ-জাহেল ব্যক্তি পার্লামেন্ট সদস্য হতে পারে টাকার জোরে বা দলীয় আনুগত্য বিবেচনায়। ফলে এসব সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে জাহেলি আইন-কানুন প্রণয়ন করে।

ইসলামি শাসন ব্যবস্থা হলো- হজরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরলোক গমন করার পর আবু বকর (রা.), ওমর (রা.), ওসমান (রা.) এবং আলী (রা.) যে পদ্ধতিতে রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন, অর্থাৎ যাকে খোলাফায়ে রাশেদিন বলা হয়। সংক্ষেপে খেলাফত বললে অনেকে বুঝতে পারেন।

এ নিবন্ধে আমার মূল আলোকপাত করার বিষয় হলো, এ পৃথিবীর একজন মানুষও পাওয়া যাবে না যিনি তার ধর্মের সবকিছু মেনে চলতে সক্ষম হচ্ছেন, তিনি যত বড় বুজুর্গ বা ধর্মযাজক হন না কেন। মানা বা না মানা এ বিষয়টি সবার ব্যক্তিগত বিষয়। আমার আপত্তির জায়গাটা হলো আমি ধর্মীয় বিধান অনুসরণ করতে ব্যর্থ অথবা অপারগ হতেই পারি, এজন্য আমি নিজেকে শুধরে নিতে পারি এবং সৃষ্টিকর্তার নিকট ক্ষমা চাইতে পারি। কিন্তু সত্য এই বিধান, যাহা সৃষ্টিকর্তা কর্তৃক মনোনীত। যে বিধানের প্রথম পাতায় লেখা রয়েছে- এতে কোনো সন্দেহ নেই, যা পৃথিবীর একমাত্র ধর্মগ্রন্থ। এ বিধানে যোজন বিয়োজন করার ক্ষমতা আমাকে কে দিল? দুনিয়াতে সাধারণ একটা মানব রচিত পুস্তকের কপিরাইট আইন লঙ্ঘন করলেও মামলা হয়। আমি মনে করি ব্যক্তি স্বার্থ হাসিলের জন্য এ যোজন-বিয়োজন করাটাই হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যক্তিদের কাজ।

এদিকে বাংলাদেশে চলছে প্রতিরোধ এবং পাল্টা প্রতিরোধের নামে গণতন্ত্র হত্যার রাজনীতি। এই যে সারা দেশে হটানো-থামানো ও প্রতিহত করার গণতন্ত্রের মহড়া নেতারা দিয়ে যাচ্ছেন, তাতে সাধারণ মানুষ ভীত, শঙ্কিত ও সন্ত্রস্ত না হয়ে পারে না। দেশে এখন যে গণতন্ত্রের মহড়া চলছে, তাকে বলা যায় হটানোর গণতন্ত্র। এক পক্ষ আরেক পক্ষকে হটাতে চায়। কেউ পুলিশ ও প্রশাসন দিয়ে। কেউ রাজপথে আন্দোলন করে এবং হয়তো অচিরে তা সবখানেই ছড়িয়ে পড়বে।

আমরা আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করছি তিনি যেন ষড়যন্ত্রকারীদের ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দেন। আল্লাহ তায়ালা আমাদের বোঝার তৌফিক দান করুন। আমিন।

লেখক : প্রাবন্ধিক, কথাসাহিত্যিক এবং প্রেসিডেন্ট আন্তর্জাতিক মাদকবিরোধী সংগঠন ফ্রিডম ইন্টারন্যাশনাল এন্টি অ্যালকোহল

[ নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার, প্রতিক্রিয়া প্রভৃতিতে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। দৈনিক কালবেলার সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক, আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের, দৈনিক কালবেলা কর্তৃপক্ষের নয়। ]
কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বাংলাদেশ এশিয়া কাপ জেতেনি, বিশ্বাসই হচ্ছিল না আফগান কোচের

নির্বাচন বানচালের অপচেষ্টা জনগণই প্রতিহত করবে : জেএসডি

সাবেক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের ফ্ল্যাট-জমি জব্দ

ইটিসি সিস্টেম চালু / পদ্মা সেতুতে টোল দিতে আর থামাতে হবে না গাড়ি

স্বাস্থ্যের ৪ পদে বড় পরিবর্তন

চাকসু নির্বাচনের দ্বিতীয় দিনে ১৪১টি মনোনয়ন বিতরণ

ডাইনিংয়ে টয়লেটে লুকিয়ে জীবন ফিরে পেয়েছি : সার্জেন্ট রাসেল

মাঝ-আকাশে বিমানের যাত্রীকে বাঁচালেন রাশিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী

কমিটি গঠনেই আটকে আছে হাবিপ্রবি ছাত্র সংসদ নির্বাচন

কক্সবাজারের নতুন জেলা প্রশাসক আবদুল মান্নান

১০

পিবিআই হাজতে ঝুলছিল আসামির মরদেহ

১১

কুয়েতে পৌঁছেছেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ী নেতারা

১২

রাজশাহীতে প্রতিমা নির্মাণে ব্যস্ত শিল্পীরা

১৩

জাকসুর ভিপি-জিএস যেসব দায়িত্ব পালন করবেন

১৪

বিএনপির আরও এক নেতা বহিষ্কার

১৫

কী ধরনের ফিচার থাকছে আইফোন ১৭ প্রো ম্যাক্স-এ, দাম কত?

১৬

ক্ষুদে ফুটবলার জিসানকে তারেক রহমানের উপহার

১৭

পদ্মার ভাঙনে বিপর্যয়, নিঃস্ব হয়ে বাড়ি ছেড়েছে ১৫০ পরিবার

১৮

দাবি না মানলে এশিয়া কাপ ছাড়ার হুমকি পাকিস্তানের

১৯

ফ্যানের সঙ্গে ঝুলছিল যুবক, খাটে স্ত্রী-সন্তানের মরদেহ

২০
X