বর্তমানে দেশে খাদ্যদ্রব্য ও নিত্য-পণ্যের দাম নিয়ে বেশ শোরগোল হচ্ছে। খাদ্য-পণ্যের দামের চাপে দিশেহারা সাধারণ মানুষ। সামগ্রীক মূল্যস্ফীতি ৯.৯২% হলেও নিত্য প্রয়োজণীয় খাদ্য-পণ্যের মূল্যস্ফীতি সাড়ে বার শতাংশ ছুয়েছেঁ যা গত এগার বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বলে খবরে প্রকাশিত।
তারই রেশ ধরে সরকার কয়দিন আগে বাজারে আলু, পিয়াজ এবং ডিমের মূল্য বেধেঁ দিয়ে দাম নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। কিন্তু দাম নিয়ন্ত্রণে আসার পরিবর্তে কোথাও কোথাও বাজার থেকে এসব পণ্য উধাও হয়ে যাচ্ছে।
ভোক্তা অধিকারের মহা-পরিচালককে দেখে বেশ সজ্জন বলে মনে হয়। দাম নিয়ন্ত্রনে তার দৌড়-ঝাপ চোখে পড়ার মত। তবে সরকার ডিমের দাম নিয়ন্ত্রণে ইতিমধ্যেই ছয় কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো- নিত্য পণ্যে এত মূল্যস্ফীতি কেন? এত হৈচৈ, ভোক্তা অধিকারের এত দৌড়-ঝাঁপেও দাম কেন কমছে না?
কোন পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেলেই ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট সিনিডকেট বলে একশ্রেণীর মিডিয়া ও জনগণের একাংশ চিৎকারে আকাশ-বাতাস তোলপাড় করে ফেলেন। কিন্তু দাম বৃদ্ধির আসল কারণ সবাই জেনেও চুপ করে থাকেন, যেন ওখানে ওনাদের কিছুই করার নেই। এ বছর শিল্প খাতে বিদ্যুতের খুচরা পযার্য়ে তিনবারে ১৫% বিদ্যুতের মূল্য বাড়ানো হয়েছে। গত বছর কেজিতে ছয়টাকা সারের মূল্য বৃদ্ধি করা হয়। আবার ডিজেল এর দামও বাড়ে ২৩.৮%। তাহলে পরিবহণের খরচের সাথে হিমাগারের খরচ যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে তেমনি সারেরও মূল্য বৃদ্ধিতে আলুর উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে।
আমদানি ভিন্ন পেয়াজের বেলায়ও এটা সত্য। এ বছর শিল্প-কারখানায় গ্যাসের দাম বেড়েছে (প্রতি কিউবিক মিটার) ১১ টাকা থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বা প্রায় তিন গুণ। বৃদ্ধি পেয়েছে ব্রয়লারের বাচ্চা, মুরগী ও খাবারের দাম। এক মাসেই ব্রয়লারের একদিনের বাচ্চা মুরগির দাম ৩৫ টাকা থেকে ৫২ টাকায় বৃদ্ধি পেয়েছে বলে পোলট্রি সমিতির অভিযোগ। তাহলে বিদ্যুৎ, গ্যাস, ডিজেল, সার, মুরগির বাচ্চা ও খাবারের দাম বৃদ্ধির কারণে আপনা-আপনিই সকল নিত্য পণ্যের দাম বেড়ে গেছে।
সাথে রয়েছে লাগামছাড়া দূনীর্তি ও অর্থ পাচার। যার ফলে ডলারের দাম বাড়ছে এবং বাড়ছে আমদানি মূল্য। তাই শুধু সিন্ডিকেটের দোষ দিয়ে লাভ নেই। সিনেডিকেট হয় অল্প কিছু উৎপাদনকারী বা ব্যবসায়ীর মধ্যে। শত শত বা হাজার হাজার ব্যবসায়ী-উৎপাদক যেখানে জড়িত সেখানে কীসের সিন্ডিকেটের কথা বিজ্ঞরা বলেন বুঝে আসে না।
আমাদের দেশে তিন/চারটা মোবাইল কোম্পানি আছে যাদের মধ্যে বোঝাপড়া হয়ে দাম বৃদ্ধির একটা গোপন আতাত হতে পারে বা সরকার যে ছয়টি প্রতিষ্টানকে ডিম আমদানির জন্য অনুমতি দিয়েছে তাদের মধ্যে ডিম বিক্রি নিয়ে বোঝাপড়া হতে পারে। যদিও ডিম আমদানির সিদ্ধান্ত পোলট্রি শিল্পের সাধারণ ব্যবসায়ীদের ক্ষতিগ্রস্ত করবে। কিন্তু হাজার হজার আলু-পেয়াজ-ডিম ব্যবসায়ির মধ্যে সিন্ডিকেট ! হতেই পারে না।
এডিবি যখন চলতি বছরে মূল্যস্ফীতি ৬.৬% নেমে আসার আভাস দেয় তখন বিষ্ময় জাগে। আমরা সচেতন নাগরিকবৃন্দও অপেক্ষায় আছি সেটা দেখার জন্য। তাই বলছিলাম বাড়তি জ্বালানি, সার, মুরগির বাচ্চা ও খাবারের দাম কমা বা প্রয়োজণীয় ক্ষেত্রে সরকারি ভূর্তকি ব্যতীত এসমস্ত নিত্য পণ্যের দাম কমবে বলে মনে করি না।
আগামি শীত মৌসুমেও শাক-সবজি, তরিতরকারি কিংবা আলুর দাম তেমন কমবে না বলে অনুমান করা যায়। তবে রেল কর্তৃপক্ষ কৃষি পণ্য পরিবহণের যে উদ্যোগ নিয়েছে তাকে সাধুবাদ জানাই। জনগণের আস্হা অর্জন করতে পারলে পরিবহণ খরচ কিছুটা কমে আসবে বলে মনে করি। তাই এসকল নিত্য পণ্যের দাম কমাতে সরকার ছাড়া অন্য কারও তেমন কিছু করার নেই।
ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর দুদকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবেও কাজ করতে পারে। কিছু দুনীর্তিবাজ যারা অবৈধভাবে পণ্য মজুদ করে এবং সিন্ডিকেট করে নিত্যপণ্যের দাম বাড়াচ্ছে তাদেরকে ধরতে পারে সরকার। যারা টাকা পাচার করে ডলার সংকট তীব্রতর করছে এবং আমদানি পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে পারে সরকার। তবে তার জন্য আগে দরকার সদিচ্ছা।
নুরুল আমিন : শিল্পদ্যোক্তা
মন্তব্য করুন