জিম ও'নিল
প্রকাশ : ০৩ জানুয়ারি ২০২৪, ০৬:১০ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
প্রজেক্ট সিন্ডিকেট থেকে

নতুন বছরে বিশ্ব অর্থনীতির সামনে মুদ্রাস্ফীতির চ্যালেঞ্জ

ছবি : সৌজন্য
ছবি : সৌজন্য

২০২৩ সাল শেষ হয়ে ২০২৪ সাল শুরু হয়েছে ক্যালেন্ডারে। আমাদের সামনে জানা অজানা অনেক প্রশ্ন আর সংশয়। বিশেষ করে ভূ-রাজনৈতিক ক্ষেত্রে অস্থিরতা চিন্তার ভাঁজ ফেলছে কপালে। সম্ভবত দিগন্তে লুকিয়ে রয়েছে অনেক অজানা প্রশ্নের উত্তর। বৈশ্বিক অর্থনীতি আরও বেশি অনিশ্চয়তার সম্মুখীন। সমীকরণগুলো বলছে ২০২৪ সালে আরও কমতে পারে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগ। মন্দার আশঙ্কা করছেন অনেকে। অনেকে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন ২০২৩ সাল কীভাবে মন্দাকে পাশ কাটিয়ে গেল!

বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফীতি অর্থনীতিতে আরও বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। ইউরোজোন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের সর্বশেষ ভোক্তা মূল্যের তথ্য রিপোর্ট বিশ্লেষণ করে কিছুটা স্বস্তি প্রকাশ করছেন অনেক অর্থনীতি বিশ্লেষক। কিন্তু খাদ্যপণ্য ও জ্বালানির দাম ছাড়া বাকি সকল ক্ষেত্রে মুদ্রাস্ফীতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লক্ষ্যমাত্রার অনেক উপরেই রয়ে গেছে।

অবশ্য বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীনে এসব সমস্যা আছে বলে মনে হচ্ছে না। চীনের সাম্প্রতিক ভোক্তা-মূল্যের ডেটা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে- দেশটির মূল ভোক্তা মূল্যসূচক নভেম্বর মাসে ০.৫% (বার্ষিক ভিত্তিতে) কমেছে। একসময় অনেক বিশ্লেষক সন্দেহ করেছিলেন যে, চীন কারসাজি করে বাকি বিশ্বে মুদ্রাস্ফীতিকে বাড়িয়ে দিচ্ছে। চীন এখানে তার স্বল্প খরচে উৎপাদন এবং বিদেশি বাজারে তাদের বর্ধিত শেয়ারকে পুঁজি হিসেবে ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ করেছিলেন তারা। বিশ্বব্যপী মুদ্রাস্ফীতির পেছনে চীনের কারসাজি যদি একটি কারণ হয়ও তবু এটিই একমাত্র কারণ নয়।

২০২৪ সালের শুরুতে বিশ্বের অনেক দেশে মুদ্রাস্ফীতি আরও কিছু কমতে পারে বলে দাবি করা হয়েছে একটি রিপোর্টে। হতাশার মধ্যেও কিছুটা উৎসাহের সঞ্চার করেছে রিপোর্টটি। মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা এবং ইউক্রেনে যুদ্ধ সত্ত্বেও, অপরিশোধিত তেলের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে যাতে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন অনেক বিশ্লেষক। তারা বলছেন, তেলের বাজার স্থিতিশীল থাকলে অন্যন্য ক্ষেত্রে অনেকটা আশার আলো থাকে।

পৃথিবীর অনেক দেশে আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে প্রবৃদ্ধি। এখন সেসব দেশে পণ্যের মূল্য স্তিতিশীল থাকলেও যেকোনো সময় বাজার অস্থির হয়ে উঠতে পারে। যদি সেসব দেশের আর্থিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয় তাহলে প্রবৃদ্ধির সাথে সাথে মুদ্রাস্ফীতিও বেড়ে যাবে। যেমনটি ২০২০ সালের শেষের দিকে এবং ২০২১ সালের প্রথম দিকে ঘটেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে।

সাম্প্রতিক সময়ে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলির গৃহীত নীতি অর্থনীতি বিশ্লেষকদের কিছুটা আশ্বস্ত করেছে। পণ্যের মূল্য এবং আর্থিক প্রবণতার মধ্যে সামঞ্জস্যতা দেখিয়েছেন তারা। গত মাসে ইউনিভার্সিটি অফ মিশিগানের এক সমীক্ষায় দেখানো হয়েছে যে, বিগত ৫ বছরের গড় হিসেবে বৈশ্বিক মুদ্রাস্ফীতি এই মুহূর্তে ৩.২% থেকে ২.৮% এ নেমে এসছে। তথ্যটি ইঙ্গিত করে যে, দীর্ঘ সময়ের কোন টেকসই মুদ্রাস্ফীতি ঘটেনি। স্বল্পমেয়াদি মুদ্রাস্ফীতি প্রত্যাশার আলো দেখায়।

এখন দেখার বিষয় হলো- কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কগুলি কোন পথে এগোবে। ২০২৪ সালে সালে সুদের হার কিছুটা কমানোর পরামর্শ দিয়েছে ইউএস ফেডারেল রিজার্ভ বোর্ড। অন্যান্য কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কগুলি, বিশেষ করে ইউরোপে সুদের হার কমানো হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। এসব দেশে মুদ্রাস্ফীতি এখনও লক্ষ্যের উপরে, প্রকৃত মজুরি বাড়ছে এবং উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির কোন প্রমাণ দেখা যাচ্ছে না কোথাও।

শীঘ্রই সুদের হার বাড়াতে চাইবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো। তবে আপাতত তারা তাদের নির্দেশিকায় বাজারকে প্রভাবিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

জনগণের উপর মুদ্রাস্ফীতির চাপ কমাতে মজুরি বৃদ্ধি করেছে যুক্তরাজ্য। তবে এই মজুরি বৃদ্ধি ভোক্তা-মূল্য বৃদ্ধিকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে। মজুরি বৃদ্ধির সমানুপাতিক আর্থিক রিটার্ন আসতে হবে। যদি দীর্ঘ প্রতীক্ষিত উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি না পায় তাহলে এই মজুরি বৃদ্ধির নেতিবাচক প্রভাবের মুখে পড়বে দেশটি। তবে নতুন বছর আমাদের সামনে নতুন আশা নিয়ে আসে।

জিম ও’নিল: যুক্তরাজ্য সরকারের সাবেক অর্থমন্ত্রী

[ নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার, প্রতিক্রিয়া প্রভৃতিতে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। দৈনিক কালবেলার সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক, আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের, দৈনিক কালবেলা কর্তৃপক্ষের নয়। ]
কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

স্বৈরাচারের লক্ষণ দেখামাত্রই যেন বিনাশ করতে পারি: প্রধান উপদেষ্টা

শতবর্ষী কড়ই গাছের ভেতরে জ্বলছে আগুন

ঢালাইয়ের সময় ছাদ ভেঙে পড়ে ৩ জনের মৃত্যু

‘প্রমাণিত হলো, আ.লীগ কখনোই শোধরাবে না’

সিন্ধু চুক্তি কার্যকর করতে ভারতকে আহ্বান পাকিস্তানের

সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর সতর্কসংকেত

আম্পায়ারদের মানোন্নয়নে ‘বিশ্বসেরা’ আম্পায়ারকে আনছে বিসিবি

শাহরুখ-অজয়ের সম্পর্ক নিয়ে এবার মুখ খুললেন কাজল

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

জুলাই সনদ নিয়ে টালবাহানা সহ্য করা হবে না : নাহিদ 

১০

ব্রাজিলিয়ান ক্লাবের কাছে হেরে সতীর্থদের ওপর ক্ষুব্ধ আর্জেন্টাইন লাউতারো

১১

সীমান্ত দিয়ে ৯ বাংলাদেশিকে হস্তান্তর বিএসএফের

১২

আন্দোলনের একপর্যায়ে ‘ডু অর ডাই’ পরিস্থিতিতে চলে যাই : নাহিদ ইসলাম

১৩

স্বামীকে রাতভর নির্যাতনের পর স্ত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ

১৪

বিপিএল নিয়ে অবশেষে বড় ঘোষণা

১৫

কমলো সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার, আজ থেকে কার্যকর

১৬

৫ দিনেও হয়নি সেই নারীর ডাক্তারি পরীক্ষা

১৭

যুদ্ধবিরতির পর নিহতের নতুন সংখ্যা জানাল ইরান

১৮

সিটিকে বিদায় করে ক্লাব বিশ্বকাপে আল হিলালের বড় অঘটন

১৯

ডেঙ্গু জ্বর: কিছু তথ্য

২০
X