কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ১৭ জুলাই ২০২৪, ০৮:১৩ পিএম
আপডেট : ১৭ জুলাই ২০২৪, ০৮:২০ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

অহেতুক কতগুলো মূল্যবান জীবন ঝরে গেল : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পুরোনো ছবি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পুরোনো ছবি

কোটা সংস্কার আন্দোলন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কিছু মহল কোটা আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়েছে। এর ফলে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ঘটনা ঘটেছে, তা খুবই বেদনাদায়ক ও দুঃখজনক। অহেতুক কতগুলো মূল্যবান জীবন ঝরে গেল।

বুধবার (১৭ জুলাই) সন্ধ্যা ৭টায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

ভাষণের শুরুতে শেখ হাসিনা বলেন, আজকে অত্যন্ত বেদনা ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আপনাদের সামনে উপস্থিত হয়েছি। লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের জনগণের আত্মসামাজিক উন্নয়নের জন্য নিরলসভাবে পরিশ্রম করে যাচ্ছি। মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা ব্যবস্থা করে জনগণকে উন্নত জীবনযাত্রা দিতে শুরু করেছি। অনেক সাফল্য অর্জন করেছি। বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে একটা মর্যাদার আসনে আসীন করতে সক্ষম হয়েছি। তারপর আমাদের অনেক দূর যেতে হবে।

তিনি বলেন, ২০১৮ সালের ছাত্র আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি চাকরিতে কোটা প্রথা বাতিল করে একটা পরিপত্র জারি করে সরকার। পরবর্তীতে মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে উচ্চ আদালত ২০১৮ সালের জারি করা সরকারি পরিপত্র বাতিল করে দেয়। সরকারের পক্ষ থেকে পরিপত্র বহাল রাখার জন্য সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করা হয়। আদালত শুনানির দিন ধার্য করেন। এ সময় ছাত্ররা কোটা বাতিলের দাবি নিয়ে আবারও আন্দোলন শুরু করে। এ আন্দোলনের শুরু থেকেই সরকার যথেষ্ট ধৈর্য ও সহশীলতার পরিদর্শন করেছে।

তিনি আরও বলেন, আন্দোলনকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে পুলিশ সহযোগিতা করেছে। রাষ্ট্রপতির কাছে যখন আন্দোলনকারীরা স্মারকলিপি প্রদানের ইচ্ছাপোষণ করে সেক্ষেত্রে তাদের সুযোগ করে দেওয়া হয়। নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

আন্দোলনে নিহতের স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, যারা হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে তাদের পরিবারের জন্য জীবনজীবিকা নির্বাহের জন্য যা করা দরকার আমি তা করব। যারা মৃত্যুবরণ করেছে তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। আমি প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানাই। যেসকল ঘটনা ঘটেছে তা কখনোই কাম্য ছিল না।

তিনি বলেন, কিছু মহল কোটা আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়েছে। এর ফলে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে, তা খুবই বেদনাদায়ক ও দুঃখজনক। একটি আন্দোলন ঘিরে অহেতুক কতগুলো মূল্যবান জীবন ঝরে গেল। আপনজন হারানোর বেদনা যে কত কষ্ট, তা আমার চেয়ে আর কেউ বেশি জানে না।

শেখ হাসিনা বলেন, আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে ঘোষণা করছি, যারা হত্যাকাণ্ড, লুটপাট, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়েছে এরা যেই হোক না কেন তারা যেন উপযুক্ত শাস্তি পায় সে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমি আরও ঘোষণা করছি যে সকল অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটেছে তা সুষ্ঠু ও ন্যায়বিচারের স্বার্থে সেসব বিষয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্ত করা হবে।

উল্লেখ্য, দেশজুড়ে শিক্ষার্থীদের তুমুল আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর সরকারি চাকরিতে নারী কোটা ১০ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ এবং জেলা কোটা ১০ শতাংশ বাতিল করে পরিপত্র জারি করে সরকার। সেখানে বলা হয়েছিল, ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেডের পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে হবে। ওইসব গ্রেডের পদে সরাসরি নিয়োগে বিদ্যমান কোটা বাতিল করা হলো।

এ পরিপত্র চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম কমান্ড কাউন্সিলের সভাপতি অহিদুল ইসলামসহ সাত শিক্ষার্থী। এর প্রেক্ষিতে গত ৫ জুন ২০১৮ সালের জারিকৃত পরিপত্রটিকে অবৈধ বলে ঘোষণা করেন হাইকোর্ট।

এরপর থেকেই সারা দেশে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ফুঁসে ওঠেন। কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে নানা স্থানে বিক্ষোভ করেন কোটাবিরোধীরা। ঢাবি ছাড়াও বিক্ষোভ হয় জাবি, জবি, রাবি, সাত কলেজসহ দেশের স্বনামধন্য বিভিন্ন কলেজে।

এরমধ্যে গত মঙ্গলবার মঙ্গলবার দিনব্যাপী রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিশেষ করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ও হামলার ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ছয়জন নিহত হন। নিহতদের মধ্যে চট্টগ্রামে তিনজন, ঢাকায় দুজন ও রংপুরে একজন রয়েছেন।

এদিকে পরিস্থিতির যেন আরও অবনতি না হয় সে জন্য দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাক্রম পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশনা দিতে উপাচার্যদের চিঠি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। পাশাপাশি সব আবাসিক শিক্ষার্থীদের হল ছাড়তে নির্দেশ দেওয়া হয়।

তবে কর্তৃপক্ষের নির্দেশ প্রত্যাখ্যান করেছে আন্দোলনকারীরা। এ নিয়ে বুধবার দুপুরের পর থেকেই বিভিন্ন ক্যাম্পাসে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছে আন্দোলনকারীরা। এতে বিভিন্ন ক্যাম্পাসে অনেকেই আহত হয়েছেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

দেশের ৮১ সরকারি কলেজ স্থান পেল ‘এ’ ক্যাটাগরিতে

স্ট্রোক করে চবি শিক্ষার্থীর মৃত্যু

চলন্ত ট্রেনে পপকর্ন বিক্রেতাকে হত্যা

আবাসিক হোটেলে অনৈতিক কর্মকাণ্ড, গ্রেপ্তার ২৪

বস্তিবাসীর জন্য ‘ফ্যামিলি কার্ড’ ও স্থায়ী পুনর্বাসনের আশ্বাস আমিনুল হকের

দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার দায়িত্ব রাষ্ট্রকে নিতে হবে: সাকি

তিন মামলায় আওয়ামী লীগের সাবেক সেক্রেটারি গ্রেপ্তার

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা জিতল ভারত

খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা কিছুটা উন্নতি হয়েছে : ডা. শাহাবুদ্দিন

‘যারা কাসেমীর ফাঁদে পড়েছ, আমার সঙ্গে যোগাযোগ করো’

১০

ত্রিদেশীয় সিরিজের জন্য শক্তিশালী দল ঘোষণা বাংলাদেশের

১১

বৃহত্তর নোয়াখালী নারী কল্যাণ সংঘ ইতালির আত্মপ্রকাশ

১২

শাহজাহান চৌধুরীর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের

১৩

‘হাসিনার কালো আইন বাতিল করুন, না হয় নিবন্ধন দিন’

১৪

বাড়ির পাশের পুকুরের পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু

১৫

আহত শিশুকে নেওয়া হলো হাসপাতালে, সড়কে পড়ে ছিল বিচ্ছিন্ন হাত

১৬

বিএনপির দুই নেতার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার

১৭

যুক্তরাজ্যের হাউস অব লর্ডসের ২ সদস্য বরখাস্ত

১৮

দ্রুতগতিতে মোটরসাইকেল চালিয়ে প্রাণ গেল ২ বন্ধুর

১৯

লাভের আশায় কৃষকের আগাম ফুলকপি চাষ

২০
X