মারামারি-হানাহানি, রক্তাক্ত সংঘাতের ঘটনায় জড়িত থাকাসহ দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ এবং দলের নীতি ও আদর্শ পরিপন্থি কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে আরও ৪ জন নেতাকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি।
গতকাল বুধবার বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বহিষ্কৃত নেতারা হলেন- নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার অন্তর্গত মাহমুদপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক তোতা প্রধান, জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহসাধারণ সম্পাদক খোকন প্রধান, ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সদস্য রাসেল প্রধান, ওয়ার্ড বিএনপি নেতা আলম মিয়া ও সাদ্দাম হোসেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, উক্ত নেতাদের বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির প্রাথমিক সদস্যসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
এদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিএনপি একটি বড় গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। একটি রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর অনেকেই অনেকভাবে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করবে—এটিই স্বাভাবিক। দলের কোনো কোনো নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে বিচ্ছিন্নভাবে বিশৃঙ্খলা-অপরাধের অভিযোগ আসছে। তবে অভিযোগ প্রমাণের সঙ্গে সঙ্গে তাদের দল থেকে বহিষ্কার করা হচ্ছে। অপরাধ করে কেউ পার পাচ্ছেন না। দলের নাম ভাঙিয়ে যারাই কোনো অপকর্মে জড়িত হচ্ছেন, তাদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিকভাবেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী কালবেলাকে বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কোনো অপরাধীকে প্রশ্রয় দেননি, এখন পর্যন্ত চার হাজারের বেশি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিয়েছেন। বিএনপি বৃহৎ পরিবার, বিভিন্ন জায়গায় অনেকে বিএনপির নাম ভাঙিয়ে অপকর্মের চেষ্টা করছে, তবে এসব জানার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিচ্ছেন তারেক রহমান। দলের নামে যে কেউ কোনো ধরনের অনৈতিক, অবৈধ, সন্ত্রাসী ও সহিংসতামূলক কর্মকাণ্ড করবে, সে রেহাই পাবে না। একই সঙ্গে কোনো উসকানির মুখে প্রতিক্রিয়া না দেখাতে নেতাকর্মীদের প্রতি তিনি নির্দেশ দিয়েছেন।
জানা গেছে, ৫ আগস্টের পর তারেক রহমান ও নীতিনির্ধারকদের কঠোরতা সত্ত্বেও দেশের বিভিন্ন স্থানে দখল, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অভিযোগ উঠছে বিএনপি ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের বেশকিছু নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে। অভিযোগ ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই দ্রুত তদন্ত করে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিয়েছে বিএনপি। মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির (এইচআরএসএস) তথ্যমতে, আধিপত্য বিস্তার, নেতৃত্বের রেষারেষি ও বিরোধ, মূল সংগঠনের সঙ্গে অঙ্গসংগঠনের মতভিন্নতা, স্বার্থের দ্বন্দ্বে গত বছরের ৭ আগস্ট থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ১১ মাসে বিএনপির অন্তর্কোন্দলে ৪৭৮টি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে ৮০ জনের বেশি নেতাকর্মী নিহত ও কয়েক হাজার আহত হয়েছেন। অন্যদিকে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্যমতে, গত ১০ মাসে ৬৮ জন নেতাকর্মী খুন হয়েছেন।
বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তর সূত্র জানায়, গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে এ পর্যন্ত নানা অভিযোগে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের ৩ হাজার ২৪৩ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলও পৃথকভাবে নিজ নিজ সংগঠনের বেপরোয়া নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। শাস্তির তালিকায় মূল দল বিএনপির নেতাকর্মী রয়েছেন ১ হাজার ৮০০ জন। তাদের মধ্যে ৮০০ জনকে বহিষ্কার, ৫০ জনের পদ স্থগিত, অন্তত ৭০০ জনকে কারণ দর্শানো নোটিশ, ১০০ জনকে সতর্ক এবং ১৫০ জনকে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
মন্তব্য করুন