প্রকাশের একদিন পরই দলের আলোচিত নতুন লোগোটি সরিয়ে ফেলেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমানের বসুন্ধরার কার্যালয়ে বসানো লোগোটি সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সরানো হয়েছে।
এর আগে রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) সকালে জামায়াত আমিরের সঙ্গে তার কার্যালয়ে ঢাকায় নিযুক্ত স্পেনের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠকের সময় নতুন লোগোটি সামনে আসে। সোমবার একই কার্যালয়ে জামায়াত আমিরের সঙ্গে ভুটানের রাষ্ট্রদূতের সৌজন্য সাক্ষাতের সময় সেই লোগোটি আর দেখা যায়নি। রোববার নতুন লোগোটি জনসম্মুখে এলে বেশ আলোচনা হয়।
এ বিষয়ে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এবং কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের প্রধান অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের কালবেলাকে বলেন, ‘মূলত আমিরে জামায়াতের বসুন্ধরার কার্যালয়ে নতুনভাবে ডেকোরেশন করার কারণে সেখানে কিছু জিনিস রাখা হয়েছে। জামায়াতে ইসলামী প্রস্তাবিত নতুন লোগো অসাবধানতাবশত প্রকাশ্যে এসেছে। তবে বেশ কয়েকটি লোগোর নকশা প্রাথমিকভাবে প্রস্তাব করা হয়েছে। কোন লোগোটি ব্যবহার করা হবে, তা চূড়ান্ত হয়নি। লোগো চূড়ান্ত না হওয়ায় আপাতত কোনো দলীয় লোগো ব্যবহার করছি না। নির্বাহী পরিষদের আলোচনা হয়েছে। চূড়ান্ত হলে বিষয়টি সবাইকে জানানো হবে।’
হঠাৎ লোগো পরিবর্তন কেনো, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আগের যে লোগো সেটি প্রায় ৩০/৪০ বছর আগের। ফলে এখন দলের নীতিনির্ধারকরা নতুন লোগো তৈরির প্রয়োজনীয়তা মনে করেছে। বিশেষ করে সময় ও প্রজন্মের প্রয়োজনে নতুন লোগা তৈরি করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি লোগো ক্যালিগ্রাফিসহ নকশা করা হয়েছে। সুতরাং লোগো চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত আপাতত কোনো লোগো ব্যবহার করছি না।
জানা গেছে, নতুন লোগোতে জামায়াতের প্রতীক দাঁড়িপাল্লা ঠিক রেখে কিছুটা লাল-সবুজের জাতীয় পতাকার আদলে তৈরি করা হচ্ছে। সেখানে সবুজ পতাকার মাঝে কিতাবের ওপর উদীয়মান লাল রংয়ের সূর্য রয়েছে। তার ওপর রয়েছে কলম। কলমটি ব্যবহৃত হয়েছে দলীয় প্রতীক দাঁড়িপাল্লার দণ্ড হিসেবে। কিতাবের দুই প্রান্ত থেকে একটি অর্ধ পরাবৃত্ত রয়েছে, যা প্রবেশ দুয়ার অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। চারপাশের ব্যাকগ্রাউন্ড সবুজ। আর দলের নাম বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, যা বাংলা ও আরবিতেও লেখা আছে।
জামায়াতের আগের লোগোতে গম্বুজের মধ্যে আল্লাহ শব্দ এবং তার মাঝে দলীয় প্রতীক দাঁড়িপাল্লা এবং নিচে লেখা ছিল আকিমুদ দ্বীন (দ্বীন কায়েম কর)। এরপর থেকে ধূসরের মধ্যে সবুজ রঙের বৃত্ত রেখায় কালো রঙে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলাম লোগো ব্যবহার করা হচ্ছে। জামায়াতের ভেরিফায়েড ফেসুবকে এখনো সেই লোগোটিই রয়েছে।
এ বিষয়ে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি ড. এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ কালবেলাকে বলেন, ‘আগের লোগোটি যে কনসেপ্ট নিয়ে তৈরি করা হয়েছিল সেখানে আরেকটু মডিফাই (পরিমার্জন) করে নতুনভাবে লোগো ডিজাইন করা হচ্ছে। এরইমধ্যে একাধিক ডিজাইনের লোগো তৈরি করে প্রস্তাব করা হয়েছে।’
নতুন লোগো তৈরি কেনো, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আসলে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পরবর্তী নতুন প্রজন্মকে আমরা বিশেষ বার্তা দিতে চাই। সে আলোকেই লোগোর ডিজাইন করা হচ্ছে। অর্থাৎ নতুন লোগোতে বিশেষ থিম আছে। কলম হচ্ছে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যম। দাঁড়িপাল্লা হচ্ছে ন্যায়বিচারের প্রতীক। যার ভূখণ্ড হবে লাল-সবুজের বাংলাদেশ।’
ভূটানের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠক
এদিকে সোমবার সকাল ৯টায় জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানের সঙ্গে তার বসুন্ধরাস্থ কার্যালয়ে ঢাকাস্থ ভুটানের রাষ্ট্রদূত দাশো কারমা হামু দর্জি এক সৌজন্য বৈঠকে মিলিত হন। তার সঙ্গে ছিলেন দূতাবাসের কাউন্সিলর জিগড্রেল ওয়াই শেরিং। অন্যদিকে জামায়াতের কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের প্রধান এহসানুল মাহবুব জুবায়ের ও আমীরে জামায়াতের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মাহমুদুল হাসান বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকটি অত্যন্ত হৃদ্যতা ও আন্তরিকতাপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠককালে তারা বাংলাদেশ ও ভুটানের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করেন। ভবিষ্যতে উভয় দেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক এবং উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখার ব্যাপারে তারা দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
এ ছাড়া রোববার সন্ধ্যায় মালয়েশিয়ার ৬৮তম জাতীয় দিবস উপলক্ষে ঢাকাস্থ মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার মুহাম্মাদ শুহাদা বিন ওসমান রাজধানীতে একটি হোটেলে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। সেখানে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, কূটনীতিক, রাজনীতিবিদ, অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা, বেসামরিক কর্মকর্তা, সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
জামায়াতের নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসাইন ও আমীরে জামায়াতের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মাহমুদুল হাসান দলটির আমিরের পক্ষে শুভেচ্ছা বার্তা পৌঁছে দেন।
মন্তব্য করুন