বাছ-বিচারহীনভাবে বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। রোববার (৫ নভেম্বর) বিকেলে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন তিনি।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘বিএনপির আন্দোলনকে নস্যাৎ করে ভিন্ন দিকে নিতেই ক্ষমতাসীনরা বিভিন্ন স্থানে, গাড়িতে-বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করছে। তা না হলে ২৮ অক্টোবর প্রধান বিচারপতির বাসভবনের সামনে হঠাৎ দুটি ট্রাক আসল কোত্থেকে? এটা তো তাদেরই পরিকল্পিত। তাদের পুলিশ-প্রশাসন দিয়েই করা হয়েছে। তারা রাষ্ট্রশক্তি, পুলিশ-র্যাব দিয়ে যৌথভাবে বিএনপির মহাসমাবেশে আক্রমণ করেছে। এখন তারাই মামলা দিয়ে নেতাকর্মীদের হয়রানি করছে। আর ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি নেতারা কোথায়? আসলে তারা টিক্কাখান ও নিয়াজি সাহেবের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। তারা দেশে বিএনপিশূন্য করতে নিষ্ঠুর পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছেন। যার লক্ষ্য হলো আবারও দেশে একতরফা নির্বাচন করা।
রিজভী বলেন, সরকারের পতনের লক্ষ্যে বিএনপির একদফা দাবির প্রতি দেশের জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে সাড়া দিচ্ছেন। সারা দেশে বিএনপির অবরোধ শান্তিপূর্ণভাবে নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষ পালন করছে। কারণ আমাদের কর্মসূচিগুলো হচ্ছে জনগণকে তাদের দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য। অন্যদিকে দেশের মানুষ আজকে তার স্বাধীন দেশে নির্ভয়ে চলাচলে ভয় পাচ্ছে। তারা মনে করেন এই বুঝি কেউ পেছন থেকে তাড়া করছে। এই সরকার কোটি কোটি টাকা ঋণ করে জনগণকে ঋণী বানিয়েছে। অথচ জনগণ ট্যাক্স ও খাজনা দিচ্ছে সেগুলো ক্ষমতাসীনরা দেদার লুট করছে।
তিনি বলেন, বিএনপি জনগণের ভোটাধিকার ও গণতন্ত্রের প্রশ্নে কোনো আপস করেনি। সেজন্য আমরা নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকতে বলেছি। কারণ সরকার নিজেরাই নাশকতা করে বিএনপি ও বিরোধীদলের ওপর চাপাবে। এ জন্য সবাইকে সতর্কতার সঙ্গে রাস্তায় অবরোধ পালন করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সারা দেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও পুলিশ কর্তৃক হামলা, মামলা ও গ্রেপ্তারের বিবরণ তুলে ধরে রিজভী বলেন, শনিবার গভীর রাতে ঢাকায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমর (বীরউত্তম), গতকাল ভোরে রাজধানীর উত্তরা থেকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, কেন্দ্রীয় সদস্য সাবিরা নাজমুল মুন্নি, চাঁদপুর জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মোশাররফ হোসেন, গাজীপুরের কালীগঞ্জে এসএসসি পরীক্ষার্থী তৌহিদ, সজীব ও স্বাধীনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শুধু গ্রেপ্তারই নয়, শনিবার গভীর রাতে বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসির উদ্দীন আহমেদ অসিমের ধানমন্ডিস্থ বাড়ির মূল দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে ডিবি পুলিশ স্টাফদের হুমকি-ধমকি দিয়ে গেছে। খুলনা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল আলম মনার শ্বশুরবাড়িতেও গভীর রাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে ১০-১২ জন লোক তল্লাশির নামে ব্যাপক ভাঙচুর করে। গত ২ নভেম্বর রাত ৩টার সময় মনার বাড়িতে ডিবি পরিচয়ে ১৫-১৬ জন লোক প্রবেশ করে তাকে না পেয়ে তল্লাশির নামে বাড়িতে প্রতিটি রুমে ব্যাপক ভাঙচুর করে এবং পরিবারের সদস্যদের গালাগাল ও হুমকি-ধমকি দিয়ে চলে যায়।
রিজভী আরও বলেন, এ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় (রোববার পর্যন্ত) সারা দেশে বিএনপি ও এর অঙ্গসহযোগী সংগঠনের ২৬১ জনের অধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার, মোট মামলা ৯টি, মোট আসামি ১০৬০ জনের অধিক নেতাকর্মী। ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশের আগে ও পরে অদ্যাবধি মোট গ্রেপ্তার হয়েছে ৫২৮৪ জনের অধিক নেতাকর্মী, মোট মামলা হয়েছে ১২২টির বেশি এবং মোট আহত হয়েছে ৩৪৯৮ জনের অধিক নেতাকর্মী এবং মৃত্যু হয়েছে ১০ জনের (সাংবাদিক ১ জন)।
মন্তব্য করুন