সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫, ২৩ আষাঢ় ১৪৩২
কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০২ জুন ২০২৪, ০৪:৪৫ পিএম
আপডেট : ০২ জুন ২০২৪, ০৫:২৯ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

এবারের বাজেট সর্বমুখী বৈষম্য বৃদ্ধির ধারাকেই আরও বেগবান করবে : সিপিবি 

রোববার আসন্ন জাতীয় বাজেট ২০২৪-২৫ কে সামনে রেখে রাজধানীর পুরানা পল্টনস্থ মুক্তিভবনের মৈত্রী মিলনায়তনে সিপিবি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত নেতারা। ছবি : কালবেলা
রোববার আসন্ন জাতীয় বাজেট ২০২৪-২৫ কে সামনে রেখে রাজধানীর পুরানা পল্টনস্থ মুক্তিভবনের মৈত্রী মিলনায়তনে সিপিবি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত নেতারা। ছবি : কালবেলা

স্বাধীনতার পর থেকে দেশে সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে বৈষম্য পরিমাপের সূচক। শহরে বৈষম্যের সব সীমা ছাড়িয়ে গেছে। সাধারণ মানুষের ভাষায় ‘কেউ থাকেন গাছতলায় আর কেউ থাকেন আকাশচুম্বি অট্টালিকায়’। এই বৈষম্য শুধু আয়ের ক্ষেত্রে সত্য নয়, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, জনগণের অর্থনৈতিক-সামাজিক-রাজনৈতিক অন্যান্য অধিকারের সব ক্ষেত্রেই সত্য। সংবিধানে ‘অনুপার্জিত আয়’ এবং ‘শোষণ’-কে নিষিদ্ধ করার কথা বলা হয়েছে। বর্তমানে দেশে সব ক্ষেত্রে শুধু আকাশচুম্বী বৈষম্যই সৃষ্টি হয়নি, এই বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে যুগপৎ ‘অনুপার্জিত আয়’ এবং ‘শোষণ’ প্রক্রিয়াকে ক্রমাগত তীব্র থেকে তীব্রতর করার মাধ্যমে। তাই এবারের বাজেট সর্বমুখী বৈষম্য বৃদ্ধির ধারাকেই আরও বেগবান করবে বলে মনে করেন বাম নেতারা।

রোববার (২ জুন) আসন্ন জাতীয় বাজেট ২০২৪-২৫ কে সামনে রেখে রাজধানীর পুরানা পল্টনস্থ মুক্তিভবনের মৈত্রী মিলনায়তনে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে নেতারা এ অভিমত তুলে ধরেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. এম এম আকাশ। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ও বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, সহকারী সাধারণ সম্পাদক মিহির ঘোষ, প্রেসিডিয়াম সদস্য শাহীন রহমান ও লক্ষ্মী চক্রবর্তী, কোষাধ্যক্ষ ডা. ফজলুর রহমান, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অনিরুদ্ধ দাশ অঞ্জন ও লুনা নূর।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, অর্থপাচার, বিনিয়োগের অভাব ও ঋণ নির্ভরতা ডলারের যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে তার মূলে রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে দেশের বৈধ-অবৈধ পথে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রার অধিকারী ধনীক গোষ্ঠী কর্তৃক বাইরে অর্থপাচার। সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, তিনি কানাডায় এ ধরনের পাচারকৃত সম্পদের মালিকদের মধ্যে ১৫ জনের কথা জানেন, যাদের মধ্যে গুরুত্বের ক্রমানুযায়ী রয়েছে অসৎ আমলা, অসৎ ব্যবসায়ী এবং অসৎ রাজনীতিবিদ।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এই শ্রেণি ৩টি শুধু লুটেরা পুঁজির ওপর দাঁড়িয়ে থাকা ত্রিভুজ শাসক শ্রেণির ৩টি বাহু নয়, তারা একইসঙ্গে আমাদের বর্তমান অর্থনীতির বৈদেশিকখাতে বিভিন্ন ধরনের সংকটের স্রষ্টা। তারাই আমদানি-রপ্তানির আন্ডার ইনভয়েস-ওভার ইনভয়েস করেন, তারাই হুন্ডির মাধ্যমে খোলা বাজার থেকে ডলার কিনে তা বাইরে পাঠিয়ে দেন। তারাই দুবাইয়ে বা মালয়েশিয়ায় বা বাইরের অন্যান্য দেশে নানা স্থাবর সম্পত্তি তৈরি করেন। তারাই দ্বৈত নাগরিকত্বের সূত্রে জাতীয় সুযোগ-সুবিধা সংগ্রহ করে অন্য দেশের অর্থনীতিতে বিনিয়োগ করেন। এমন অবস্থায় প্রয়োজনীয় উৎপাদনশীল বিদেশি প্রযুক্তিভিত্তিক বিনিয়োগের অভাবে সরকারের তথাকথিত বৈদেশিক বিনিয়োগগুলো শুধু বৃহৎ অবকাঠামো তৈরি করে চলেছে। কিন্তু ইপিজেড বা এসইজেডগুলো পুঁজির অভাবে পিপাসার্তভাবে অপেক্ষা করতে বাধ্য হচ্ছে। আর দেশি বিনিয়োগও সেখানে এখোনো আসছে না।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, সময়মতো সংস্কার না করা, লুটেরাদের কাছে ক্রমাগত আত্মসমর্পণ, বিদেশি তাৎক্ষণিক নির্দেশের কাছে আটকে পড়া, আয়-ব্যয়ের ক্ষেত্রে সরকারের প্রচণ্ড দুর্নীতি ও অদক্ষতা, কোভিড পরবর্তী বিশ্বব্যাপী যুদ্ধ আবহাওয়ার অনিশ্চয়তা, জলবায়ু সংকট ইত্যাদি সবকিছু মিলিয়ে বর্তমান সংকটের মুখে সরকারের ত্রিশঙ্কু অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এখনই জরুরিভাবে প্রতিষেধক ব্যবস্থা না নিতে পারলে পরিণতি আরও ভয়াবহ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সিপিবিসহ বাম প্রগতিশীলদের বহুদিনের গণদাবি হলো মুক্তিযুদ্ধের ধারার অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় বাজেট প্রণয়ন। কিন্তু অতীতের গণবিরোধী ধারায় বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার এটিকে উপেক্ষা করে পুঁজিবাদী তথা নয়া-উদারনীতি অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মোড়কে গত বছরের বাজেট উপস্থাপন করেছে। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না।

নেতারা বলেন, মুদ্রাস্ফীতি সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। প্রবৃদ্ধির গতি এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিম্নমুখী। বিদেশে টাকা পাচারের প্রবণতায় খেলাপি ঋণ বেড়েই চলেছে। মানুষের বৈষম্য এক দেশে দুই অর্থনীতিকে দৃশ্যমান করে তুলেছে। সেই সঙ্গে আঞ্চলিক বৈষম্য, নারী-পুরুষের বৈষম্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। উপরন্তু জলবায়ু পরিবর্তনে অনেক এলাকায় বিশেষত উপকূলীয় এলাকায় জানমালের ও সুপেয় পানির ঝুঁকি বাড়ছে। বৈদেশিক দেনা বাড়ছে এবং ঋণ করে ঋণ পরিশোধের তৎপরতা দৃশ্যমান হচ্ছে। সাধারণ মানুষের প্রকৃত আয় কমে গেছে। সরকারি তথ্যই বলছে, শহরাঞ্চলে সর্বোচ্চ আয় বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে।

এ অবস্থা পরিবর্তনে গণমানুষের বাজেট প্রণয়নে জাতীয় ও শ্রেণিস্বার্থ সচেতন হয়ে ন্যায্য অধিকার আদায়ে সংগ্রাম গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

হত্যা মামলায় আইভী দুই দিনের রিমান্ডে

পদ্মার চার ইলিশ বিক্রি ৪১ হাজারে

প্রেসক্লাবে হামলা / মিথ্যা কাউন্টার মামলায় সাংবাদিকদের জামিন

আশুলিয়ায় সাব-রেজিস্ট্রারের পদত্যাগ দাবি, ২১ দিন ধরে অচল রেজিস্ট্রি অফিস

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আরও কঠিন বার্তা যোদ্ধাদের

আমরা দেশের মানুষের জন্য যা ভালো তাই করছি : ফয়েজ তৈয়ব

২০২৪-২৫ অর্থবছরে রাজস্ব আদায় কত, জানালেন এনবিআর চেয়ারম্যান

ডিজিএফআইয়ের সাবেক ডিজি হামিদুলের ৪০ কোটি টাকার এফডিআর ফ্রিজ

ঢাকার বাইরে হাইকোর্ট বেঞ্চ স্থাপনের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সুপ্রিম কোর্টে বিক্ষোভ

দুদকের মামলায় খালাস পেলেন হানিফ পরিবহনের মালিক 

১০

টাঙ্গাইলে বাস-সিএনজি সংঘর্ষে নারীসহ ৩ জন নিহত

১১

বিএনপির ৩১ দফা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে পারভেজের উঠান বৈঠক 

১২

সন্ধ্যার মধ্যে যেসব জেলায় হতে পারে ঝড়-বৃষ্টি 

১৩

বৃদ্ধাকে মারধর করে টাকা ‘লুটে নিলেন’ জাসাস নেতা

১৪

মাইমুনা হত্যার প্রতিবাদে জবিতে মানববন্ধন

১৫

গাজায় ক্ষুধা ‘দুর্ভিক্ষ’ নয়, বরং পরিকল্পিত যুদ্ধকৌশল

১৬

জুলাই সনদের জন্য ৫ আগস্ট পর্যন্ত অপেক্ষা করা হবে : নাহিদ 

১৭

জামায়াত নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ চায় : গোলাম পরওয়ার

১৮

লরির চাকায় পিষ্ট পিকআপ চালক

১৯

সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ 

২০
X