

ইসলামে অজু শুধু নামাজের প্রস্তুতি নয়, এটা আসলে এক বিরাট নিয়ামত। হাদিসে এসেছে, অজুর পানির ফোঁটা ঝরার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের ছোট ছোট গোনাহও ঝরে যায় (মুসলিম : ২৪৪)। তাই অজুকে বলা হয় পবিত্রতার চাবি। আবার হাদিসে আছে, অজু ছাড়া নামাজ হয় না, আর নামাজ হচ্ছে জান্নাতের চাবি। অর্থাৎ, অজু এমন এক ইবাদত যার মাধ্যমে মানুষ আল্লাহর কাছে দাঁড়ানোর যোগ্য হয়ে যায়।
আমরা প্রতিদিন কতবার অজু করি— নামাজের সময়, কোরআন তেলাওয়াতের আগে কিংবা পবিত্র হওয়ার জন্য। কিন্তু আমাদের অবহেলা কিংবা অজান্তেই অজুতে এমন একটি গোনাহ হয়ে থাকে, যার শাস্তি জাহান্নাম। তাই অজুর মতো ভালো কাজ করতে গিয়ে কেউ যেন এই গোনাহে লিপ্ত না হন, সেজন্য সতর্ক বার্তা জানিয়েছেন প্রখ্যাত ইসলামী স্কলার শায়খ আহমাদুল্লাহ।
নিজের ভেরিফায়েড ইউটিউব চ্যানেলে এক আলোচনায় তিনি বলেন, ‘অজুতে একটি বড় ভুল হলো পানি অপচয় করা। আল্লাহ মাফ করুন, এই যুগে এই ভুলটি থেকে আমরা কেউই মুক্ত না মনে হয়।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বেশিভাগ লোক এখন টেপে অজু করি। যদি আমাদের অজু করার সময় এই টেপের নিচে একটি বালতি রাখা হয়, তবে তা প্রায় ভরে যাবে, যা ৫০ জনেরও বেশি মানুষের অজুর পানির সমান। সুবহান্নাল্লাহ! নবীজি (সা.)-এর অজুর পানির পরিমাণ সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, এক গ্লাস পরিমাণ পানি দিয়ে তাঁর অজু হয়ে যেত। অথচ আমাদের শুধু হাত ধুইতেও এক গ্লাস বা তার বেশি লেগে যায়।
আহমাদুল্লাহ বলেন, ‘পানি অপচয় করা হাসির বিষয় না। এটা খুব জঘন্য অপরাধ। আল্লাহ তায়ালা কোরআনে বলেছেন, নিশ্চয় অপচয়কারীরা শয়তানের ভাই (সুরা বনি ইসরাইল : ২৭)। অর্থাৎ, পানি অপচয় করা হারাম।’
তিনি আরও বলেন, ‘‘অনেকে বলতে পারেন, পানির ব্যবহার নিয়ে এই কড়াকড়ি সাহাবিদের যুগে ছিল। কারণ, তখন মরুভূমিতে পানি কম ছিল। বর্তমানে তো এমন কোনো সমস্যা নেই। এখন তো আলহামদুলিল্লাহ যথেষ্ট পানি আছে। তাই বেশি পানি ব্যবহার করলেও সমস্যা হওয়ার কথা না— যারা এমনটা ভাবেন বা বলেন, তাদের ধারণা ভুল। কারণ, সাহাবিরা নবীজিকে (সা.) জিজ্ঞেস করেছেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল, আমরা যদি সাগরে পানি ব্যবহার করি, তবে সেখানেও কি হিসাব করে ব্যবহার করতে হবে? অতিরিক্ত ব্যবহার করলে জবাব দিতে হবে?’ উত্তরে নবীজি (সা.) বলেছেন, হ্যাঁ।’’
‘কাজেই যথেষ্ট পানি থাকলেও অপচয় করার অনুমতি শরিয়তে নাই। তাই যদি সম্ভব হয় তবে বদনা, জগ বা মগ ইত্যাদি দিয়ে অজু করেন। আর টেপ ছেড়ে অজু করা থেকে বিরত থাকুন। কারণ, টেপ ছেড়ে অজুর সময় যখন আপনি অজুর বিভিন্ন সুন্নত আদায় করবেন, মিসওয়াক করবেন, তখন টেপের পানি অযথা পড়তে থাকবে, যা অপচয়। আর অপচয় করা মারাত্মক গোনাহ।’
মন্তব্য করুন