ইসলামের অত্যন্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হলো জাকাত। কোরআন মজিদের বহু স্থানে সালাত এবং জাকাতের আদেশ করা হয়েছে। ইমানের পর সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ও অপরিহার্য ইবাদত হলো- নামাজ ও জাকাত।
সারা বছর নিজের ও পরিবারের যাবতীয় খরচ বাদ দিয়ে কোনো মুসলমানের কাছে নিসাব পরিমাণ অর্থাৎ কমপক্ষে সাড়ে ৭ তোলা স্বর্ণ অথবা সাড়ে ৫২ তোলা রৌপ্য অথবা সমমূল্যের নগদ অর্থ বা ব্যবসা পণ্য থাকে, তবে তার সম্পদের শতকরা আড়াই শতাংশ হিসাবে আল্লাহর নির্ধারিত খাতে গরিব-মিসকিনদের মধ্যে বণ্টন করতে হয়—এটাই হলো জাকাত।
ধনসম্পদের ৪০ ভাগের ১ ভাগ অসহায় গরিব-দুঃখীদের জাকাত প্রদান করে মুমিনের আত্মিক প্রশান্তি লাভ করে থাকেন। জাকাত গরিবের প্রতি ধনীর অনুগ্রহ নয়; বরং তাদের ন্যায্য অধিকার। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন, ‘তাদের (সম্পদশালীদের) ধনসম্পদে রয়েছে অভাবগ্রস্ত এবং বঞ্চিতের হক।’ (সুরা আল-জারিআত, আয়াত: ১৯)
আমাদের সমাজে জাকাত আদায়ের বিষয়ে আমরা একটা ভুলের মধ্যে আছি। সেটা হচ্ছে—সকল মানুষ, যারা জাকাত দেন, তারা বেশি সওয়াবের আশায় জাকাত রমজান মাসে আদায় করেন। কিন্তু জাকাত একটি চলমান প্রক্রিয়া।
আপনার অ্যাকাউন্টে যে টাকা রেখেছেন, আজকে যদি তার এক বছর পূর্ণ হয়ে যায়, তাহলে আজকেই জাকাত দিতে হবে। সম্পদ হাতে পাওয়ার পর এক বছর যখন পূর্ণ হবে, তখনই আপনাকে জাকাতের অঙ্ক কষতে হবে, সেটা যে মাসেই পড়ুক, যে সপ্তাহেই পড়ুক, যে দিনেই পড়ুক।
কিন্তু আমাদের সমাজে একটা প্রচলন হয়ে গেছে, যারা জাকাত দেন, তারা রমজান মাসেই জাকাত দেন, রমজানে বেশি ফজিলত লাভের আশায়।
কিন্তু এ বিষয়ে ইসলামি চিন্তাবিদরা বলেছেন, জাকাত যদি রমজানের আগের মাস অর্থাৎ শাবান মাসে ফরজ হয়, তাহলে রমজানের ফজিলত পাওয়ার আশায় সে জাকাত ধরে রাখা যাবে না। কারণ এটা গরিবের অধিকার, গরিবের হক। যত দ্রুত সম্ভব, নিজ দায়িত্বে তাদের কাছে এই টাকা পৌঁছে দিতে হবে।
আর যদি রমজানের পরের মাসে অর্থাৎ শাওয়াল মাসে জাকাত ফরজ হয়, সেক্ষেত্রে রমজানের ফজিলত লাভের আশায় যদি এক মাস আগে জাকাত আদায় করে দিতে চান, দিতে পারবেন। অর্থাৎ আগে দেওয়া যাবে, কিন্তু পরে নয়। যেমন ধরে নেই, এক বছর পূর্ণ হয়ে গিয়েছে শাবান মাসের ২৭ তারিখে, সেক্ষেত্রে রমজান মাত্র দুদিন দেরিতে হলেও আপনি জাকাত আদায়ে এই দুদিনও দেরি করতেও পারবেন না। এটাই হলো জাকাতের মাহাত্ম্য।
আবার অনেকে জাকাতে কাপড়চোপড় দিয়ে দেন, এতে কিন্তু জাকাত আদায় হবে না। আপনার জাকাতের টাকা আপনি গরিবের হাতে উঠিয়ে দেন। সেই টাকা দিয়ে তিনি কি লবণ কিনবেন, নাকি চিনি কিনবেন, নাকি ডাল কিনবেন, নাকি কাপড় কিনবেন, তার সিদ্ধান্ত তিনিই গ্রহণ করবেন।
জেনে রাখা জরুরি যে, যার কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ আছে— এমন স্বাধীন ও পূর্ণবয়স্ক মুসলিম নর-নারী জাকাত আদায় করবে। কারণ, তাদের ওপর জাকাত ফরজ। তবে এর জন্য শর্ত হলো—
১. সম্পদের ওপর পূর্ণাঙ্গ মালিকানা থাকতে হবে। ২. সম্পদ উৎপাদনক্ষম ও বর্ধনশীল হতে হবে। ৩. নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকতে হবে। ৪. সারা বছরের মৌলিক প্রয়োজন মেটানোর পর অতিরিক্ত সম্পদ থাকলেই শুধু জাকাত ফরজ হবে। ৫. জাকাত ফরজ হওয়ার জন্য ঋণমুক্ত হওয়ার পর নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকা শর্ত। ৬. কারও কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ পূর্ণ এক বছর থাকলেই শুধু ওই সম্পদের ওপর জাকাত দিতে হবে।
নিসাব পরিমাণ সম্পদ পূর্ণ এক বছর থাকলেই কেবল জাকাত আদায় করতে হয়। কিন্তু অনেক মানুষ মনে করে যে, জাকাত শুধু রমজান মাসে আদায় করার আমল। অথচ এ ধারণা ঠিক নয়। কারণ, নিসাব পরিমাণ সম্পদের ওপর এক চান্দ্র বছর অতিবাহিত হলেই সেই সম্পদের জাকাত দেওয়া ফরজ।
সুরা তাওবার ৬০ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে যে ফকির, মিসকিন, জাকাত আদায় কর্মী, নওমুসলিম ও অনুরাগী, দাস-দাসী, ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি, মুজাহিদ ও বিপদগ্রস্ত মুসাফিরকে জাকাত দিতে হবে।
মন্তব্য করুন