আগস্ট বিল্পবের পর বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি পদে সৈয়দ আশরাফুল হকের নামটি জোড়ের সঙ্গেই উচ্চারিত হচ্ছিল। বাংলাদেশের ক্রিকেটের প্রতিটি বাঁকে জড়িয়ে থাকা এই ব্যক্তি তার ক্রিকেটীয় গুণে অনেকের মতো প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পছন্দের তালিকাতেও ছিলেন, এখনো আছেন। অজ্ঞাতকারণে সৈয়দ আশরাফুল হককে প্রথম দফায় দেখা যায়নি সে পদে। হঠাৎ করেই জাতীয় দলের অধিনায়ক ফারুক আহমেদকে এই গুরুদায়িত্ব দেওয়া হয়।
অস্বাভাবিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে নয় মাস না পেরোতেই হটিয়ে দেওয়া হলো সেই ফারুক আহমেদকে। বিসিবির সভাপতির পদটি জাতীয় দলের আরেক সাবেক অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম বুলবুলকে তুলে দেওয়ার সব প্রক্রিয়াই সম্পন্ন। আর দায়িত্ব নেওয়ার আগেই বুলবুলের ঘোষণা, দীর্ঘ মেয়াদের নয়, আমি দায়িত্ব নিতে পারি স্বল্প মেয়াদের জন্য। নির্বাচন আয়োজন করব, কিন্তু নির্বাচনে অংশ নেব না… এরপর চলে যাব আইসিসি এশিয়ার অঞ্চলের উন্নয়ন কর্মকর্তার পুরোনো চাকরিতে।
বুলবুলের এমন কথায় আবারও আলোচনায় সৈয়দ আশরাফুল হক। সূত্র জানিয়েছে, তাকে ঘিরেই সাজানো হচ্ছে সব পরিকল্পনা। দীর্ঘমেয়াদের জন্য সৈয়দ আশরাফুল হককে দায়িত্ব দেওয়াই এখন মূল কাজ ক্রীড়া প্রশাসনের। আর কাজটি করতে সামনে রাখা দেশের ক্রিকেটের পরীক্ষিত কর্মী, ক্রিকেট পাড়ায় সৈয়দ আশরাফুল হকের কাছের মানুষ হিসেবে পরিচিত আমিনুল ইসলাম বুলবুলকে।
যাকে ঘিরেই এ আয়োজন সেই সৈয়দ আশরাফুল হকের কাছে কালবেলার পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হয় বিসিবির সভাপতির দায়িত্ব নিতে আপনি কতটুকু প্রস্তুত? কোনো রাখঢাক বা কৌশলের আশ্রয় নিয়ে সোজাসাপটা উত্তর, ‘কেন নয়? আমি পুরোপুরি প্রস্তুত। আমি একটি সুযোগ চাই। আমাকে যদি সুযোগটা দেওয়া হয় আমি কৃতজ্ঞ থাকব।’
স্থানীয় ক্রিকেটের সঙ্গে অনেকদিন সম্পৃক্ততা নেই। আপনার সম্পর্কে বর্তমান ক্রিকেট-সংশ্লিষ্টদের ধারণাও ততটা নেই। পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে রাখাটাও অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। এসব নিয়ে কথা উঠতে দৃঢ়তার সঙ্গে সৈয়দ আশরাফুল বললেন, ‘ক্রিকেট দুনিয়ার সঙ্গে আমার যোগাযোগ এখন আরও বেড়েছে। গত কয়েক মাস ধরে ভাবছিলাম, বিসিবির দায়িত্ব পেলে আমার পক্ষে অনেক কিছু করা সম্ভব। অভিজ্ঞতাও তো আছেই। আমি তো আর বাইরের কেউ না।’
ঘরোয়া ক্রিকেটে বল হাতে এক ম্যাচে সাত উইকেট পাওয়া সৈয়দ আশরাফুল হক খেলেছেন জাতীয় দলেও। ১৯৯৭ সাল থেকে বাংলাদেশ ক্রিকেটে পরিবর্তনের শুরুতে ছিলেন অন্যতম কান্ডারি। সাংগঠনিক মুনশিয়ানায় ১৯৯৮ সালের ঢাকা মিনি বিশ্বকাপ, ১৯৯৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেটের অংশ নেওয়া, টেস্ট স্ট্যাটাস অর্জনে বিশাল ভূমিকা রাখা সৈয়দ আশরাফুল হককে বাংলাদেশ ক্রিকেট থেকে দূরে রাখা হলেও এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের আজকের অবস্থানের জন্য প্রধান নির্বাহীর দায়িত্বে থাকা তাকেই গণ্য করা হয়। ক্রিকেটকে সারা বিশ্বে সরিয়ে দিতে আইসিসির ডেভেলপমেন্ট কর্মকাণ্ডের সবকিছুতেই ছিল তার সংশ্লিষ্টতা।
গত দু-তিন দিনে বাংলাদেশের ক্রিকেটে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনার প্রায় সবকিছুই জানা আছে তার। বললেন, ‘যা হচ্ছে তাতে অবশ্য আইসিসির ভূমিকা নেই বললেই চলে।’ সবকিছু ছাপিয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেট ভালো থাকুক এই কামনা করে জানালেন, সত্যি কথা কী, আমার জীবনটাই ক্রিকেট নিয়ে। এর বাইরে কোনো কিছু কোনোদিন করিনি। শেষ বয়সটাও ক্রিকেট নিয়ে থাকতে চাই। বিশ্বাস আছে, দেশের ক্রিকেটের জন্য অনেক কিছু করতেও পারব। এখন সুযোগ পাওয়ার অপেক্ষায় আছি। সুযোগ পেলে নিজেকে কৃতার্থ মনে করব।
মন্তব্য করুন