নিজ মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের সূচনাটা মোটেও সুখকর হলো না বাংলাদেশের জন্য। মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে প্রথম ওয়ানডেতে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে লাল-সবুজরা গুটিয়ে গেল মাত্র ২০৭ রানে। নিরুত্তাপ ব্যাটিং, ব্যর্থ টপ অর্ডার আর মাঝের ওভারে নিয়মিত উইকেট হারানোয় ব্যাটাররা গড়ে তুলতে পারেননি বড় সংগ্রহ।
কিউরেটর বদলালেও বদলায়নি মিরপুরের চেহারা। যতবারই নতুন করে আশার ফুলঝুরি ফোটে, শেষ পর্যন্ত ব্যাটারদের জন্য এই উইকেট থেকে পাওয়া যায় কেবল হতাশাই। সাবেক কিউরেটর গামিনি ডি সিলভার পর দায়িত্ব পেয়েছিলেন ইংলিশ গ্রাউন্ডসম্যান টনি হেমিং। কিন্তু তার হাতেও পরিবর্তন আসেনি ভাগ্যে—এই উইকেট এখনও রয়ে গেছে ধূসর, ধীর, আর স্পিনার-বান্ধব। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতেই সেই কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হলো বাংলাদেশ।
টস হেরে আগে ব্যাট করে ৪৯.৪ ওভারে অলআউট বাংলাদেশ তুলেছে মাত্র ২০৭ রান। পুরো ইনিংসজুড়েই এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে ছিলেন তাওহীদ হৃদয়, যিনি কঠিন উইকেটে ধৈর্যের পরীক্ষা দিয়ে খেলেছেন দলের সর্বোচ্চ ৫১ রানের ইনিংস। অভিষিক্ত মাহিদুল ইসলাম অঙ্কনও লড়েছেন দৃঢ়ভাবে, করেছেন ৪৬ রান। শেষদিকে রিশাদ হোসেনের ছোট্ট ঝড়ে কোনোমতে দুইশ ছুঁয়েছে লাল-সবুজরা।
ইনিংসের শুরুটিই ছিল ভয়ানক। দ্বিতীয় ওভারে সাইফ হাসান (৩) এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরতেই দলের স্কোর ৮। পরের ওভারেই সৌম্য সরকার (৪) ক্যাচ দিয়ে ফিরলে ৮ রানে ২ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে বাংলাদেশ। এমন অবস্থায় শান্ত ও হৃদয় মিলিয়ে গড়ে তোলেন ৭১ রানের জুটি, যা কিছুটা স্থিতি এনে দেয় ইনিংসে। তবে শান্ত ৩২ রানে ফিরতেই ফের ব্যাটিং ধসে পড়ে দল।
হৃদয় ধীর গতিতে রান তুললেও তার ইনিংস ছিল মূল্যবান। ৮৭ বলে ফিফটি পূর্ণ করে তিনি খেলেন ৯০ বলে ৫১ রানের পরিণত ইনিংস। তার বিদায়ের পর আস্থা জাগান অঙ্কন—নিজের প্রথম ওয়ানডেতে ৭৬ বলে ৪৬ রান করে দেখিয়েছেন মাটিতে দাঁড়িয়ে খেলার সামর্থ্য। কিন্তু রোস্টন চেজের স্পিনে স্লগ সুইপ খেলতে গিয়ে বোল্ড হলে শেষভাগে আবারও ধস নামে।
শেষ পর্যন্ত রিশাদ হোসেনের ১৩ বলে ২৬ রানের ঝড়ো ইনিংস দলকে টেনে নেয় দুইশর ঘরে। না হলে হয়তো স্কোরবোর্ডে আরও লজ্জাজনক সংখ্যা দেখা যেত।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলারদের মধ্যে জেডেন সিলস নিয়েছেন ৩ উইকেট, আর রোস্টন চেজ ও জাস্টিন গ্রিভস পেয়েছেন ২টি করে। স্পিনার খারি পিয়েরও ছিলেন কৃপণ, ১০ ওভারে দিয়েছেন মাত্র ১৯ রান।
এই ম্যাচে জয় পেতে এখন ক্যারিবিয়ানদের করতে হবে ২০৮ রান। কিন্তু তার চেয়ে বড় প্রশ্ন—মিরপুরের উইকেটের এই ‘রানখরা’ আর কতদিন চলবে? কিউরেটর বদলালেও যদি উইকেট না বদলায়, তাহলে বাংলাদেশের ব্যাটারদের মুক্তি কোথায়?
মন্তব্য করুন