আইসিসি ওয়ানডে ক্রিকেট বিশ্বকাপের ১৩তম আসরের শিরোপার পথে সবচেয়ে এগিয়ে থেকেই সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছিল ভারত। ৯ ম্যাচের ৯টি জিতেই বিশ্বকাপের প্রথম সেমিফাইনালে ২০১৯ বিশ্বকাপের রানার্সআপ নিউজিল্যান্ডের মুখোমুখি হয়েছিল রোহিত শর্মার দল। এই বিশ্বকাপে নিজেদের দশম ম্যাচেও কোনো অঘটন হতে দিল না দুইবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। প্রথমে ব্যাট করে বিরাট কোহলির রেকর্ড শতক ও শ্রেয়াস আইয়ারের দুর্দান্ত শতকে রানের পাহাড়ে বসে মেন ইন ব্লুরা। রেকর্ড রান তাড়ায় একসময় লড়াইয়ের আভাস দিলেও মোহাম্মদ শামির বোলিং তোপে কিউইদের হারিয়ে দুই আসর পর ফাইনাল নিশ্চিত করল বিরাট কোহলি-রোহিত শর্মারা।
মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়েতে প্রথমে ব্যাটিং করে কিউই বোলারদের কচুকাটা করে রানের পাহাড় গড়েন কোহলি-আইয়াররা! জিততে হলে নতুন করে ইতিহাস লিখতে হতো কিউইদের। তা করতে পারল না কেইন উইলিয়ামসনের দল। একসময় ম্যাচ জমিয়ে তুলেও ৭০ রানের পরাজয় মেনে নিতে হলো ব্লাক ক্যাপসদের।
বুধবার (১৫ নভেম্বর) মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে ৩৯৭ রান করে ভারত। সর্বোচ্চ ১১৭ রান এসেছে বিরাট কোহলির ব্যাট থেকে। তাছাড়া সেঞ্চুরি পেয়েছেন শ্রেয়াস আইয়ারও।
জবাবে খেলতে নেমে ৪৮ ওভার ৫ বলে সবকটি উইকেট হারিয়ে ৩২৭ রানে থেমেছে নিউজিল্যান্ড। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ১৩৪ রান করেছেন ড্যারিল মিচেল। তাছাড়া ৭৩ বলে ৬৯ রান করেছেন উইলিয়ামসন। ভারতের হয়ে ৭ উইকেট শিকার করেছেন মোহাম্মদ শামি।
৩৯৮ রানের রেকর্ড তাড়ায় কিউইদের শুরুটা যে খারাপ হয়েছে তা বলা যাবে না। এই বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে কম খরুচে বোলার জাসপ্রীত বুমরাহকে দুই চার মেরে ইনিংস শুরু করেছিল নিউজিল্যান্ডের ওপেনার ডেভন কনওয়ে। উড়ন্ত শুরু না হলেও ৫ ওভারে ৩০ রান ঠিক খারাপ বলা যাবে না।
কিউই ওপেনাররা স্বাচ্ছন্দে বুমরাহ-সিরাজকে খেলার কারণেই হয়তো ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মা বোলিংয়ে নিয়ে আসেন নিজের তুরুপের তাস মোহাম্মদ শামিকে। এই বিশ্বকাপে দুর্দান্ত ছন্দে থাকা শামি এই দিনও হতাশ করেননি রোহিতকে। বোলিং এসে দুই ওভারের মধ্যেই ফেরান দুই কিউই ওপেনারকে।
কনওয়ের পর দুর্দান্ত ছন্দে থাকা রাচিন রবীন্দ্র ফিরে যাওয়ার পর অবশ্য পাল্টা আক্রমণ শুরু করেন কিউই অধিনায়ক কেইন উইলিয়ামসন ও ড্যারিল মিচেল। তাদের মধ্যকার ১৮১ রানের জুটি অসম্ভব এক জয়ের স্বপ্ন দেখাচ্ছিল কিউইদের। তবে আবারও বাধা হয়ে দাড়ালেন শামি।
অসম্ভব এক ম্যাচ বের করার স্বপ্ন দেখাতে থাকা দুই ব্যাটারের দাপটে নিশ্চুপ হয়ে গিয়েছিল পুরো ওয়াংখেড়ে। তবে এক ওভারেই নিশ্চুপ ওয়াংখেড়েকে জাগিয়ে তুললেন ভারতীয় পেসার মোহাম্মদ শামি। এক ওভারের মধ্যেই ফেরান উইলিয়ামসন ও লাথামকে। ৭৩ রান করে উইলিয়ামসন ফেরার পরই মূলত পথ হারায় দল।
মিচেল এক প্রান্তে দুর্দান্ত খেললেও তাকে যোগ্য সঙ্গ দিতে পারেননি কেউই। শেষ পর্যন্ত ৯ চার আর ৭ ছক্কায় ১১৯ বলে ১৩৪ রান করে থেমেছেন মিচেল। এই মিডল অর্ডার ব্যাটার ফেরার পর নূন্যতম প্রতিরোধটুকুও গড়তে পারেনি দল। এক শামির আগুনেই পুড়ে ছাই কিউইরা! এই পেসার একাই শিকার করেছেন ৭ উইকেট। বর্তমানে বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারিও তিনি।
এর আগে টস জিতে মুম্বাইয়ে প্রথমে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেয় ভারত। ইনিংসের শুরু থেকেই নিউজিল্যান্ডের বোলারদের ওপর চড়াও হন দুই ওপেনার রোহিত শর্মা ও শুভমান গিল। নবম ওভারে ৪টি চার ও ছক্কায় ২৯ বলে ৪৭ রানের ঝোড়ো ইনিংস খেলেন ভারত অধিনায়ক। বিরাট কোহলির সঙ্গে দারুণ ব্যাটিং করতে ছিলেন আরেক ওপেনার গিল। কিন্তু হাফ সেঞ্চুরি পূরণের পর অসুস্থ্য হয়ে মাঠ ছাড়েন ওয়ানডের এক নম্বর ব্যাটার। মাঠ ছাড়ার আগে ৬৫ বলে ৭৯ রানের ক্যামিও উপহার দেন গিল।
১৬৪ রানে গিল মাঠ ছাড়লে ক্রিজে আসেন শ্রেয়াস আইয়ার। দ্বিতীয় উইকেটে ১৬৪ রানের জুটি গড়েন আইয়ার-কোহলি। ৪৪তম ওভারে ক্যারিয়ারের ৫০তম ওয়ানডে শতক তুলে ১১৭ রানে আউট হন কোহলি। এদিন তিনি শচীন টেন্ডুলকারকে টপকে সর্বোচ্চ শতক হাঁকানোর রেকর্ড গড়েন। নেদারল্যান্ডসের পর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও ঝোড়ে সেঞ্চুরির দেখা পান আইয়ার। মাত্র ৬৭ বলে ৩টি চার ও ৮টি ছক্কায় তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগারে পৌচ্ছান ডানহাতি এই ব্যাটার। ১০৫ রানের টর্নেডো ইনিংস খেলে সাজঘরে ফেরেন আইয়ার।
শেষ পর্যন্ত লোকেশ রাহুলের ২০ বলে ৩৯ ও পুনরায় মাঠে নামা গিলের ৮০ রানের অপরাজিত ইনিংসে ৪ উইকেট হারিয়ে ৩৯৭ রানে থামে ভারত। টিম সাউদি ১০ ওভারে ১০০ রানের বিনিময়ে ৩টি উইকেট শিকার করেন।
মন্তব্য করুন