হঠাৎ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তামিম ইকবাল। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচ খেলেই বৃহস্পতিবার (০৬ জুলাই) দুপুরে এমন ঘোষণা দেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।
তামিম ইকবালের এমন বিদায়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। অনেকেই তার এমন সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারছেন না। তামিমের এমন ঘোষণায় অবাক মোহাম্মদ আশরাফুলও। ফেসবুক লাইভে তিনি বলেছেন, ‘আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়ে ফেলেছেন তামিম ইকবাল। এটা শুনে অবাক হয়েছি। ২০০৭ সালে আমি ও নাফিস ইকবাল পাকিস্তানে এক সঙ্গে অনূর্ধ্ব-১৭ এশিয়া কাপ খেলতে গিয়েছিলাম। নাফিস অধিনায়ক ছিল, আমি ছিলাম সহঅধিনায়ক। তখন থেকেই আমি তামিমকে চিনি। সে এয়ারপোর্টে এসেছিল হাফপ্যান্ট পরে। যদিও আমিও তখন ছোট ছিলাম। তামিমও অনেক ছোট ছিল। আমাদের থেকে সে ৪-৫ বছরের জুনিয়র।’
তামিম চমৎকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জানিয়ে সাবেক এই অধিনায়ক বলেন, ‘তাকে যতটুকু চিনি, সে হুট করে সিদ্ধান্ত নেয়। তবে খুব অনড় থাকে। তামিম সবার পরিসংখ্যান মনে রাখে। তবে তার সিদ্ধান্তে একটু অবাক হয়েছি। এটাও ঠিক, সে চমৎকার একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তামিম একটু ভিন্ন, বেশিই আবেগপ্রবণ। ওর গত কয়েকটা সিরিজ চোটে যাচ্ছিল। আফগানিস্তানের বিপক্ষে তার শুরুটা ভালো হয়নি। তামিমের এভাবে সরে যাওয়াটা আমি জানি না কতটুকু ভালো হয়েছে। আবার আরেক দিকে যদি চিন্তা করি, সে আসলে সবকিছু হুটহাট করে। ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও সে যায়নি। যদিও সে লম্বা সময় তখন বাইরে ছিল। চোটের কারণে সে এক বছর টি-টোয়েন্টির বাইরে ছিল। সেখান থেকেই হয়তো সিদ্ধান্ত নিয়েছে, মিডিয়ায় যখন কথা হচ্ছিল তাকে নেবে কিনা, তখন নিজে থেকে সরে গেছে।’
তামিমকে আবার ফেরার অনুরোধ জানিয়ে আশরাফুল বলেন, ‘কিছুদিন বিশ্রাম নিয়ে হলেও যেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরে আসে তামিম। তামিম গত ১৯টা বছর তুমি আমাদের অনেক বিনোদন দিয়েছ। আমি বলব ২০১৪-২০১৮ পর্যন্ত তোমার ক্যারিয়ারের সেরা সময় গেছে। ওই সময় তোমার গড় ৭০ প্লাস ছিল। অসাধারণ নেতৃত্ব দিয়েছ। বাংলাদেশের হয়ে অনেক অবদান রেখেছ। যদিও তুমি আমার অনেক জুনিয়র। যেখানে আমি অবসর নিইনি, মাশরাফি অবসর গ্রহণ করেনি, তুমি সিদ্ধান্ত নিয়েছ। আমি আশা করব ঘরোয়া ক্রিকেটে সে আরও ৩-৪ বছর খেলবে। কিছুদিন বিশ্রাম নিয়ে আবার হয়তো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও আসতে পারে। কারণ অবসর নেওয়ার মতন তার বয়স এমন কিছু হয়নি। চোটে অবশ্য তামিম একটু বেশিই পড়েছে। শেষ কয়েকটা বছর বেশ কয়েকটি সিরিজের আগে দেখা যাচ্ছিল সে শতভাগ ফিট থাকত না।’
আশরাফুল বলেন, ‘ওপেনার হিসেবে ২০০৭ থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত ওপেনিং করাটা ক্রিকেটে সবচেয়ে কঠিন। সে জিনিসটা তুমি করেছ। তাই আমার হঠাৎ করে মনে হলো, তুমি অন্যান্য ক্রিকেটারদের চেয়ে ভিন্ন, সেটা সবাইকে বলি। আমি মনে করি, সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছ। যেহেতু বিশ্বকাপের আরেকটা চাপ থাকত, আর এই সিরিজটাও এত সহজ হবে না।’
১৬ বছর ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিয়মিত মুখ তামিম। দলের অন্যতম সেরা ওপেনারও তিনি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে চোট ও ফিটনেস নিয়ে ভালোই ভুগতে হচ্ছিল বাঁহাতি এই ওপেনারকে। বিভিন্ন সিরিজের আগে ছিটকে যাওয়া কিংবা পারফরম্যান্স তলানিতে পৌঁছানো মিলিয়ে সময়টা ভালো যাচ্ছিল না তার।
চোট থাকার পরও আফগানিস্তানের বিপক্ষে খেলার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় কোচ ও বিসিবি সভাপতির অসন্তোষের কারণও হন তিনি। এসব নিতে না পেরেই নাকি এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তামিম।
তামিমের ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, কিছুদিন ধরেই বোর্ড ও টিম ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে সময়টা ভালো যাচ্ছিল না তামিমের। বোর্ডের বিভিন্ন সিদ্ধান্তে মানসিকভাবে চাপে পড়েন তিনি। সেসব নিতে না পেরেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। যদিও তামিম সে রকম কোনো কিছু তার সংবাদ সম্মেলনে প্রকাশ করেননি। তবে তার কান্নাভেজা চোখে স্পষ্ট সিদ্ধান্তটা এতটাও সহজ ছিল না।
এর আগে দুপুর দেড়টায় চট্টগ্রামের একটি হোটেলে অবসরের ঘোষণা দেন তামিম। বলেন, ‘গতকাল আফগানিস্তানের বিপক্ষে আমার শেষ ম্যাচ ছিল। আমি এখন অবসরের ঘোষণা দিলাম।’
নিজের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ১৬ বছরের দীর্ঘ ক্যারিয়ারের জন্য তামিম সতীর্থ, কোচ, বিসিবি, পরিবার ও সমর্থকদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘ক্যারিয়ারের এই দীর্ঘ পথচলায় আমার সব সতীর্থ, সব কোচ, বিসিবির কর্মকর্তারা, আমার পরিবার ও যারা আমার পাশে ছিলেন, নানাভাবে সহায়তা করেছেন, ভরসা রেখেছেন এবং আমার ভক্ত-সমর্থক, বাংলাদেশ ক্রিকেটের অনুসারী, সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। আপনাদের সবার অবদান ও ভালোবাসায় আমি চেষ্টা করেছি সব সময় দেশের জন্য নিজের সবটুকু উজাড় করে দিতে।’
তামিম অবসর পরবর্তী জীবনের জন্য সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘জীবনের নতুন অধ্যায়ের জন্য সবার কাছে দোয়া চাই। সবাইকে আবারও ধন্যবাদ।’
মন্তব্য করুন