একসময় যাকে বলা হতো অনিয়মিত, শৃঙ্খলাহীন, প্রতিশ্রুতির চেয়ে প্রতিভার ভারে ক্লান্ত—সেই ওসমান দেম্বেলেই এখন ইউরোপের সেরা, বিশ্বের সেরা। সোমবার রাতে প্যারিসের শাতলে থিয়েটারে ঘোষিত হলো ২০২৫ ব্যালন ডি’অরের নাম—আর সেখানে বার্সার তরুণ তারকা লামিন ইয়ামালকে হারিয়ে ইতিহাসে জায়গা করে নিলেন ফরাসি তারকা।
পিএসজির হয়ে গত মৌসুমে দেম্বেলের পারফরম্যান্স নিছক দুর্দান্ত নয়, ছিল রূপকথার মতো। কিলিয়ান এমবাপ্পে ক্লাব ছাড়ার পর নেতৃত্বের ভার যিনি কাঁধে তুলে নেন, তিনিই দলকে এনে দেন অভূতপূর্ব সাফল্য—লিগ ওয়ান, ফ্রেঞ্চ কাপ, সুপার কাপ আর সর্বোপরি বহু প্রতীক্ষিত উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ। ইতিহাসের প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয় করে পিএসজি, আর সেই কৃতিত্বের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন দেম্বেলে। মৌসুমজুড়ে ৪৮টি গোল অবদান (৩৪ গোল ও ১৪ অ্যাসিস্ট)—এমন পরিসংখ্যানই তার শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণে যথেষ্ট।
এই পুরস্কার জয়ের পথে দেম্বেলের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বার্সেলোনার কিশোর সেনসেশন লামিন ইয়ামাল। শেষ ভোটের লড়াই জমে ওঠে দারুণভাবে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত চ্যাম্পিয়নস লিগে পিএসজির গৌরবই পাল্লা ভারি করে দেয় দেম্বেলের দিকে। ১৮ বছর বয়সী ইয়ামাল অবশ্য খালি হাতে ফেরেননি; তিনি টানা দ্বিতীয়বারের মতো জিতে নিয়েছেন অনূর্ধ্ব-২১ সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার ‘কোপা ট্রফি’।
মাত্র দুই বছর আগে কেউ ভাবেনি দেম্বেলে ফাইনাল তিনজনের তালিকায়ও থাকবেন। বার্সেলোনায় মেসির ছায়ায় কিংবা পিএসজিতে এমবাপ্পের নিচে—সবসময় যেন ছিলেন দ্বিতীয় সারিতে। তবে শৃঙ্খলা আর পরিশ্রমের মাধ্যমে নিজেকে নতুন করে গড়ে তোলেন তিনি। কোচ লুইস এনরিকের আস্থায় বদলে যান দেম্বেলে—দলের স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়া, লড়াকু মানসিকতা আর ধারাবাহিকতা তাকে পৌঁছে দেয় নতুন উচ্চতায়।
২০২৫-এর এই পুরস্কার দেম্বেলেকে শুধু ইতিহাসে স্থান দেয়নি, ফ্রান্সকেও দিয়েছে নতুন মর্যাদা। ২১শ শতকে মাত্র দ্বিতীয় ফরাসি হিসেবে ব্যালন ডি’অর জিতলেন তিনি; ২০২২ সালে করিম বেনজেমার পর এবার তার হাতেই উঠল সোনালি বল। জিনেদিন জিদান, রেমন্ড কোপা, জ্যঁ-পিয়ের পাপ্যাঁ আর জুস্ত ফঁতেনের পর দেম্বেলেই হলেন ষষ্ঠ ফরাসি যিনি ব্যালন ডি’অরের গর্বিত মালিক।
এক বছর আগে যাকে মাঠের বাইরে শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে শাস্তি পেতে হয়েছিল, সেই দেম্বেলেই আজ পিএসজি সমর্থকদের চোখের মণি। ফুটবলের জগতে অনিশ্চয়তার নামই বাস্তবতা, আর তারই জীবন্ত প্রমাণ ওসমান দেম্বেলে। আগামী শনিবার পার্ক দে প্রিন্সেসে অঁজের বিপক্ষে ম্যাচে যখন তিনি হাতে নিয়ে প্রবেশ করবেন সেই সোনালি ট্রফি, তখন প্যারিস আবারও সাক্ষী থাকবে এক নতুন অধ্যায়ের—যেখানে নায়ক দেম্বেলে।
মন্তব্য করুন