ক্রীড়াঙ্গনে সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি) বিভিন্ন সংস্থা ও ক্রীড়া ফেডারেশনগুলোকে তাগিদ দিচ্ছে। সে ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের (বিওএ) বিগত পাঁচ অর্থবছরের ব্যয় সংক্রান্ত অডিট প্রতিবেদন চাওয়া হয়েছে।
সংস্থাটির বিগত দিনের কার্যক্রম পরিচালনায় আদৌ সুসাশন ছিল কি না—এ নিয়ে বড় প্রশ্ন উঠছে। কারণ বিওএ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ১৯৭৬ সালে, তা আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির (আইওসি) স্বীকৃতি পায় ১৯৮০ সালে। অথচ প্রথম সাধারণ পরিষদ সভা ডাকা হয়েছিল ২০১৭ সালে। ওই বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি কুর্মিটোলা গলফ ক্লাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে প্রথম সাধারণ পরিষদ সভা। সর্বশেষ সাধারণ পরিষদের সভা হয়েছে ২০২৩ সালের ১৯ আগস্ট। অবাক করা বিষয় হচ্ছে, সাধারণ পরিষদ সভা করা হলেও সরকারের কাছে সাম্প্রতিক অডিট প্রতিবেদন পাঠানো হয়নি। এ কারণে বিগত পাঁচ বছরের অডিট প্রতিবেদন একসঙ্গে চাওয়া হয়েছে। সিনিয়র সহকারী সচিব নাজমুল হামিদ রেজা স্বাক্ষরিত পত্রের মাধ্যমে এ প্রতিবেদন চাওয়া হয়েছে।
বিগত পাঁচ অর্থবছরে বিভিন্ন খাতে ৪২ কোটি ৪০ লাখ ৬১ হাজার ৩৭৫ টাকা বিওএর অনুকূলে বরাদ্দ করেছে সরকার। ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রশিক্ষণ খাতে ২ কোটি ২০ লাখ এবং বিভিন্ন গেমসে ও আন্তর্জাতিক আয়োজনে ভ্রমণ খাতে ২ কোটি ১৫ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। ২০২১-২২ অর্থবছরে বরাদ্দ করা হয়েছিল ৭ কোটি ৬২ লাখ ৭৪ হাজার ৩৯৫ টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ভ্রমণ খাতে ৪ কোটি ১৯ লাখ ৭৭ হাজার এবং প্রশিক্ষণ খাতে ৭ কোটি ২১ লাখ টাকা বরাদ্দ করেছিল সরকার। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রশিক্ষণ খাতে ৫ কোটি ৬০ লাখ এবং ভ্রমণ খাতে ১১ কোটি ২৫ লাখ টাকা সরকারের কাছ থেকে নিয়েছে বিওএ। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রশিক্ষণ খাতে ১৩ কোটি ১৬ লাখ এবং ভ্রমণ খাতে ১ কোটি ৯৩ লাখ ৪৯ হাজার টাকা বিওএর নানা কার্যক্রমের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছিল।
সরকারের কাছ থেকে বরাদ্দ পাওয়া অর্থ খরচে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির (আইওসি) চার্টার্ড এবং নিজস্ব গঠনতন্ত্রও মানা হয়নি! গঠনতন্ত্রের আর্টিক্যাল ১১ সাধারণ পরিষদ সভার ‘এ’-তে বলা আছে বছরে অন্তত একবার সাধারণ পরিষদ সভা আয়োজন করতে হবে, যা মানা হয়নি। সাধারণ সভার সুনির্দিষ্ট কাজগুলোর অন্যতম পরবর্তী বছরের বাজেট অনুমোদন করা। যার কথা আর্টিক্যাল ১১-এর ‘এ’-৪ ধারায় বলা আছে। এটাও মানা হয়নি। গঠনতন্ত্রমাফিক কাজ না করে ২৪ জুন বিওএ কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট অনুমোদনের জন্য তোলা হয়েছিল, যা ছিল অসংগতিপূর্ণ। এ নিয়ে সভায় একাধিক সদস্য আপত্তি জানিয়েছেন। বিধিমাফিক কাজ করতে চলতি বছরেই দুটি সাধারণ পরিষদ সভা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যার প্রথমটি ৩০ জুলাই অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। যার আলোচ্য সূচিতে দুটি অর্থবছরের আয়-ব্যয়ের হিসাব রাখা হয়েছে। আলোচ্য সূচি ৪-এ ২০২৩-২৪ অর্থবছরের নিরীক্ষা প্রতিবেদন উপস্থাপন ও অনুমোদন এবং আলোচ্য সূচি ৫-এ ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট ঘটনাত্তোর অনুমোদনের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু অননুমোদিত প্রক্রিয়ায় অর্থ ব্যয় হয়ে যাওয়ার পর তা আদৌ অনুমোদন করা যায় কি না—এ নিয়ে প্রশ্ন থাকছে।
সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য একদিকে সরকারের তাগিদ অন্যদিকে আইওসি চার্টার্ড এবং নিজস্ব ঘটনতন্ত্রমাফিক কাজ না হওয়া নিয়ে সদস্যদের আপত্তির পরও সার্বিক কর্মকাণ্ড বিধিমাফিক হচ্ছে তো!
মন্তব্য করুন