দীর্ঘদিন পর চালু হতে যাচ্ছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বৃত্তি পরীক্ষা। চলতি বছর থেকেই ডিসেম্বরের বার্ষিক পরীক্ষা শেষে পৃথকভাবে এ বৃত্তি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এতে অংশ নেবে পঞ্চম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে বাছাই করা শিক্ষার্থীরা।
তবে বৃত্তি পরীক্ষায় কোন শিক্ষার্থী অংশ নিতে পারবে, তাদের কীভাবে বাছাই করা হবে এবং কত বিষয় ও কত নম্বরের প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা হবে—এসব বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
এবার গুঞ্জন ছিল যে বৃত্তি পরীক্ষায় কিন্ডারগার্টেন বা বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও রেজিস্ট্রেশন করে বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে। তবে সেই সুযোগ রাখা হয়নি। শুধু সরকারি প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরাই অংশ নিচ্ছে।
অধিদপ্তরের নীতিমালা অনুযায়ী, দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পিটিআই সংলগ্ন পরীক্ষণ বিদ্যালয় এবং সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সংলগ্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর (যেখানে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক একসঙ্গে) নির্দিষ্ট সংখ্যক শিক্ষার্থী এ পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে। এর মধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পিটিআই সংলগ্ন পরীক্ষণ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য পরীক্ষায় অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক।
কারা সুযোগ পাবে
অধিদপ্তর জানায়, তিন ধরনের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবে। তবে সেসব বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির সব শিক্ষার্থীকে আবার সুযোগ দেওয়া হবে না। শুধু ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থীকে মনোনীত করা হবে। অর্থাৎ কোনো বিদ্যালয়ে ১০০ জন শিক্ষার্থী থাকলে সর্বোচ্চ ৪০ জন এবং ৫০ জন শিক্ষার্থী থাকলে সর্বোচ্চ ২০ জন পরীক্ষা দিতে পারবে।
অধিদপ্তরের নির্দেশনামতে, প্রথম সাময়িক পরীক্ষার (প্রথম প্রান্তিক) ফলাফলের ভিত্তিতে ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থীকে বাছাই করা হবে বৃত্তি পরীক্ষার জন্য।
প্রথম সাময়িক পরীক্ষার ফলাফলে যারা প্রথম দিকে আছে, সেই মেধাক্রম অনুযায়ী ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থী বাছাই করে তাদের রেজিস্ট্রেশন করাতে হবে। আগামী ২৪ জুলাইয়ের মধ্যে এ নিয়মে শিক্ষার্থী বাছাই করে সেই তথ্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্ধারিত ছকের মাধ্যমে পাঠাতে হবে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের বৃত্তি শাখার এক কর্মকর্তা জানান, শিক্ষার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে নীতিমালা না মানলে সেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পঞ্চম শ্রেণির শ্রেণিশিক্ষক ও প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কোন বিষয় ও কত নম্বরের পরীক্ষা
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্যমতে, দীর্ঘদিন পর চালু হতে যাওয়া বৃত্তি পরীক্ষা হবে পাঁচ বিষয়ের ওপর। এর মধ্যে তিনটি বিষয়ের ওপর ১০০ নম্বর করে এবং দুটি বিষয় একসঙ্গে করে ৫০ নম্বর করে ১০০ নম্বরের পরীক্ষা নেওয়া হবে।
বিষয়গুলোর মধ্যে বাংলা, ইংরেজি, প্রাথমিক গণিত বিষয়ের ওপর ১০০ নম্বরের প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা হবে। প্রতিদিন একটি করে বিষয়ের পরীক্ষা নেওয়া হবে। পরীক্ষার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে ২ ঘণ্টা ৩০ মিনিট।
এ ছাড়া বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় এবং প্রাথমিক বিজ্ঞান বিষয়ের পরীক্ষা হবে এক দিনে। দুটি বিষয়কে একটি ধরে পরীক্ষা নেওয়া হবে। বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় অংশ থেকে ৫০ নম্বর এবং প্রাথমিক বিজ্ঞান থেকে ৫০ নম্বরের প্রশ্নপত্র থাকবে। এ পরীক্ষার জন্যও শিক্ষার্থীরা ২ ঘণ্টা ৩০ মিনিট সময় পাবে।
কবে হতে পারে পরীক্ষা
প্রতিবছর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্লাস-পরীক্ষা ও ছুটির তালিকাসহ বার্ষিক শিক্ষাপঞ্জি প্রকাশ করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। ২০২৫ সালের শিক্ষাপঞ্জি অনুযায়ী, প্রাথমিকে তৃতীয় প্রান্তিক বা বার্ষিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে ১ থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এ বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হওয়ার ১০ থেকে ১৫ দিন পর বৃত্তি পরীক্ষা নেওয়া হবে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর বৃত্তির পরীক্ষার সম্ভাব্য একটি তারিখও জানিয়েছে। সেটি হলো ২১, ২২, ২৩ ও ২৪ ডিসেম্বর। সেই হিসাবে ২১ ডিসেম্বর বাংলা, ২২ ডিসেম্বর ইংরেজি, ২৩ ডিসেম্বর গণিত এবং ২৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় এবং প্রাথমিক বিজ্ঞান পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে পারে।
এই তারিখে পরীক্ষা হওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে জানিয়েছেন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
মন্তব্য করুন