স্মার্টফোন ছাড়া আধুনিক জীবনের একদিনও কল্পনা করা যায় না। বাজারে বিল দেওয়া থেকে শুরু করে টাকাপয়সার লেনদেন, অফিসের ইমেইল, সিনেমা দেখা, গান শোনা, দূরের প্রিয়জনের সঙ্গে যোগাযোগ—সবকিছুতেই আমরা নির্ভর করি ফোনের ওপর। কিন্তু এই অপরিহার্য ডিভাইসটি যতটা উপকারি, ততটাই ঝুঁকিপূর্ণও হয়ে উঠতে পারে যদি ব্যাটারিতে সমস্যা দেখা দেয়।
ফোনের সবচেয়ে সাধারণ সমস্যার একটি হলো ব্যাটারি গরম হয়ে যাওয়া। তবে আরও ভয়ংকর পরিস্থিতি তৈরি হয় যখন ব্যাটারি ফুলে যেতে শুরু করে। আগে যেসব ফোনের ব্যাটারি খোলা যেত, সমস্যা হলে সহজেই বদলে নেওয়া যেত। কিন্তু এখনকার স্মার্টফোনে ব্যাটারি ভেতরে ফিক্সড থাকে। ফলে ফুলে যাওয়া ব্যাটারি শুধু ফোনকেই ক্ষতিগ্রস্ত করে না, বরং বড় ধরনের দুর্ঘটনার ঝুঁকি তৈরি করে—এমনকি বিস্ফোরণ বা আগুন লাগতেও পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফুলে যাওয়া ব্যাটারির ভেতর জমে থাকা গ্যাস দাহ্য ও বিষাক্ত। তাই এমন পরিস্থিতি হলে দেরি না করে যত দ্রুত সম্ভব ফোনটি অথরাইজড সার্ভিস সেন্টারে নিয়ে গিয়ে ব্যাটারি বদালানো উচিত। তবে মনে রাখবেন, নিজের হাতে কেটে ফেলা বা ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়া বিপজ্জনক হতে পারে। সঠিক উপায় হলো রিসাইক্লিং বা ইলেকট্রনিক ওয়েস্ট কালেকশন সেন্টারে জমা দেওয়া।
কিন্তু প্রশ্ন জাগে, আসলে কেন ব্যাটারি ফুলে যায়? এবং কীভাবে প্রতিরোধ করা সম্ভব? চলুন তাহলে জেনে নিই কারণ ও প্রতিরোধের উপায়—
যেসব কারণে ব্যাটারি ফুলে যায়
১. ফোনে থাকে লিথিয়াম আয়ন পলিমার ব্যাটারি। ব্যাটারির ভেতরে পাতলা ধাতু, প্লাস্টিকের বেশ কয়েকটি স্তর থাকে রাসায়নিক আবরণ দিয়ে ভরা। অ্যালুমিনিয়াম ব্যাগে ইলেক্ট্রোলাইট জেলের সঙ্গে এই জিনিস রাখা হয়। ভ্যাকুয়াম ভরে এই ব্যাগ সিল করা থাকে তাপ দিয়ে, যাতে বাইরে থেকে ভেতরে কোনও বাতাস না ঢুকতে পারে। এই জেল গ্যাসে পরিণত হয়ে গেলেই ব্যাটারি ফুলে ওঠে।
২. অতিরিক্ত চার্জিংয়ের ফলে এমনটা হতে পারে। অর্থাৎ, বারবার ফোন চার্জ দেওয়া বা লম্বা সময় চার্জারে লাগিয়ে রাখা।
৩. ফোন গরম হলে বা চার্জ দেওয়ার সময় বেশি গরম হলে ব্যাটারির ভেতরে রাসায়নিক বিক্রিয়া হয়ে গ্যাস তৈরি হয়।
৪. নকল বা খারাপ চার্জার/ব্যাটারি ব্যবহারে এমনটা হতে পারে। চার্জার মানসম্মত না হলে ভোল্টেজ/কারেন্ট ঠিকমতো নিয়ন্ত্রণ হয় না।
৫. পুরোনো বা দীর্ঘদিন ব্যবহৃত ব্যাটারি ফুলে যেতে পারে। ব্যাটারির আয়ুষ্কাল সাধারণত ২-৩ বছর, এর পর স্বাভাবিকভাবেই ক্ষয় হতে থাকে।
৬. শর্ট সার্কিট বা ম্যানুফ্যাকচারিং ডিফেক্ট থেকেও এমনটা হতে পারে। ভেতরের সেলে সমস্যা হলে ব্যাটারি ফুলতে পারে।
প্রতিরোধের উপায়
১. ফোন সবসময় অরিজিনাল চার্জার দিয়ে চার্জ করুন।
২. ফোনকে অতিরিক্ত গরম হতে দেবেন না (গেম খেলার সময় বা রোদে রাখা এড়িয়ে চলুন)।
৩. দীর্ঘসময় ১০০ শতাংশ চার্জে ফেলে রাখবেন না।
৪. ২০-৮০শতাংশের মধ্যে চার্জ রাখার চেষ্টা করুন।
৫. ব্যাটারির বয়স ২-৩ বছর হলে প্রয়োজনে নতুন ব্যাটারি লাগান।
সূত্র : ব্যাটারি এম্প্যায়ার ও টাইমস অব ইন্ডিয়া
মন্তব্য করুন