আজকাল আমরা সবাই কম-বেশি ইন্টারনেট ব্যবহার করি— ফেসবুকে ছবি দেই, অ্যাপ ডাউনলোড করি, অনলাইনে কেনাকাটা করি। এসব করতে গিয়ে একটা জিনিস প্রায়ই চোখে পড়ে— প্রাইভেসি পলিসি। কিন্তু আপনি কি কখনো ভেবে দেখেছেন, এটা আসলে কী? বা কেন এত দরকার?
চলুন, সহজ ভাষায় বুঝে নিই, প্রাইভেসি পলিসি মানে কী?
প্রাইভেসি পলিসি হচ্ছে একটা নিয়ম-কানুনের তালিকা, যেখানে কোনো ওয়েবসাইট বা অ্যাপ জানায়— তারা আপনার কোন তথ্য নিচ্ছে (যেমন : নাম, ই-মেইল, ফোন নম্বর), কেন নিচ্ছে, কোথায় রেখে দিচ্ছে এবং সেই তথ্য কার সঙ্গে শেয়ার করছে।
এটা একরকম চুক্তির মতো— যেখানে তারা বলছে, ‘আপনার তথ্য আমরা কীভাবে ব্যবহার করব, সেটা আপনি যেন আগে থেকেই জেনে নিন।’
প্রাইভেসি পলিসি আমাদের সাহায্য করে নিজের ব্যক্তিগত তথ্যের ব্যাপারে সচেতন সিদ্ধান্ত নিতে। ধরুন, আপনি একটা অ্যাপে ঠিকানা দিলেন। যদি তাদের প্রাইভেসি পলিসিতে লেখা থাকে, ‘এই ঠিকানা শুধু ডেলিভারির কাজে ব্যবহার হবে’— তাহলে আপনি নিশ্চিন্তে দিতে পারেন।
কিন্তু যদি লেখা থাকে, ‘তথ্য তৃতীয় পক্ষের (অন্যান্য কোম্পানি) সঙ্গে শেয়ার করা হতে পারে’— তাহলে আপনাকে ভাবতে হবে, আপনি রাজি কি না।
- আপনি কোন তথ্য দিচ্ছেন (নাম, ফোন, ব্রাউজিং হিস্টোরি ইত্যাদি)
- তারা কীভাবে নিচ্ছে (ফর্ম পূরণ, কুকি, অ্যাপ পারমিশন ইত্যাদি)
- তারা কেন নিচ্ছে (সার্ভিস উন্নত করতে, বিজ্ঞাপন দেখাতে)
- তারা তথ্য কতদিন রাখবে, কতটা সুরক্ষায় রাখবে
- আপনি চাইলে কীভাবে তথ্য মুছে ফেলতে পারবেন বা পরিবর্তন করতে পারবেন
- অনেক দেশে তথ্য সুরক্ষা নিয়ে কঠোর আইন আছে।
- ইউরোপে GDPR
- আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ায় CCPA
- আমাদের দেশেও আছে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট।
এইসব আইন বলছে— ব্যবহারকারীর তথ্য ব্যবহার করলে, তার আগে জানাতে হবে এবং অনুমতি নিতে হবে। কাজেই কোনো কোম্পানি যদি এড়িয়ে যায়, তাহলে তারা আইনি বিপদে পড়তে পারে।
তাহলে অবশ্যই আপনার প্রাইভেসি পলিসি থাকা দরকার। কারণ এটা—
- ব্যবহারকারীর বিশ্বাস বাড়ায়
- আপনাকে আইনি ঝুঁকি থেকে বাঁচায়
- আপনার ব্র্যান্ডকে আরও পেশাদার করে তোলে
আপনি চাইলে অনলাইনে সহজ প্রাইভেসি পলিসি জেনারেটর ব্যবহার করতে পারেন। তবে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য অবশ্যই পরিষ্কার করে লিখতে হবে।
- নতুন কোনো অ্যাপ বা ওয়েবসাইটে সাইন আপ করার আগে প্রাইভেসি পলিসি একবার চোখ বুলিয়ে নিন।
- অপ্রয়োজনীয় পারমিশন (যেমন- লোকেশন বা ক্যামেরা) দেওয়া থেকে বিরত থাকুন।
- যদি পলিসিতে লেখা থাকে, আপনি চাইলে তথ্য মুছতে পারেন— তাহলে দরকার হলে সে সুযোগ নিন।
ডিজিটাল দুনিয়ায় আপনার তথ্যই আপনার পরিচয়। প্রাইভেসি পলিসি ঠিকভাবে না জানলে, সেই তথ্য অন্য কেউ অন্যভাবে ব্যবহার করতে পারে।
তাই যেখানেই তথ্য দিচ্ছেন— সোশ্যাল মিডিয়া হোক বা অনলাইন শপিং— একটু সময় নিয়ে প্রাইভেসি পলিসি দেখে নিন। আপনার নিরাপত্তা, আপনার হাতেই।
একটি ছোট অভ্যাস বড় সুরক্ষা দিতে পারে। সচেতন থাকুন, সুরক্ষিত থাকুন।
মন্তব্য করুন