কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ১৩ নভেম্বর ২০২৩, ০২:১৭ পিএম
আপডেট : ১৭ নভেম্বর ২০২৩, ০৬:২৪ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

নির্যাতিত উইঘুর মুসলিমদের ইতিহাস

উইঘুর জাতি । ছবি : রয়টার্স
উইঘুর জাতি । ছবি : রয়টার্স

বর্তমানে সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত জনগোষ্ঠীর নাম উইঘুর। চীনের জিনজিয়াং প্রদেশে থাকা এই মুসলিম জনগোষ্ঠীর ওপর চালানো নির্যাতনের দৃশ্য প্রকাশ পায় না গণমাধ্যমেও। যদিও এক সময় ‘পূর্ব তুর্কিস্তান’ নামে স্বাধীন একটি দেশ ছিল তাদের। যা বর্তমানে চীনের জিনজিয়াং প্রদেশ। উইঘুররা মূলত তুর্কি বংশোদ্ভূত এবং তুর্কি ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্গত উইঘুর ভাষায় কথা বলে থাকেন। তাদের বর্ণমালা আরবি হরফে লিখা হয়। যদিও নিজেদের সংস্কৃতি ও ভাষার ওপর দখলদারিত্ব বজায় রাখতে চরম মূল্য দিতে হচ্ছে অঞ্চলটির মুসলিমদের।

১৮৮৪ সালে চীনের মাঞ্চু রাজবংশের সঙ্গে দীর্ঘ আট বছরের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর স্বাধীনতা হারায় পূর্ব তুর্কিস্তান। তারপরই অঞ্চলটির নামকরণ করা হয় জিনজিয়াং। চীনের কাছে স্বাধীনতা হারানোর পর উইঘুররা একে একে হারাতে থাকে নিজেদের ভাষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য। ১৯১১ সালে মাঞ্চু সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন শুরু হওয়ার পর ১৯৩৩-৪৪ সালে দুবার স্বাধীনতা লাভ করে উইঘুররা।

এ সময় পূর্ব তুর্কিস্তান রিপাবলিক নামে একটি স্বাধীন দেশ গঠন করা হয়। তবে ১৯৪৯ সালে কমিউনিস্ট বিপ্লবের পর বামপন্থি সেনাদের অভিযানে আবারও স্বাধীনতা হারায় উইঘুররা। বর্তমানে মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলটিতে বাড়ছে চীনের হান জনগোষ্ঠীর বসবাস। মূলত মুসলিমদের সংখ্যালঘু করার প্রক্রিয়া অনুসরণ করে সেখানে এমন পদক্ষেপ নিয়েছে চীন সরকার। ১৯৪৯ সালে পূর্ব তুর্কিস্তানে উইঘুর মুসলিমদের সংখ্যা ছিল ৯৫ শতাংশ, ১৯৮০ সালের মধ্যেই তা ৫৫ শতাংশে নেমে আসে। বর্তমানে নিজেদের ভূখণ্ডে উইঘুরদের হার প্রায় ৪৬ শতাংশ।

প্রতিবাদী এক উইঘুর নারী । ছবিঃ এনবিসি নিউজ চীনের দখলে যাওয়ার পর থেকেই পূর্ব তুকিস্তান তথা জিনজিয়াংয়ে মুসলিমদের নিধন করতে ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করে কমিউনিস্ট সরকার। ১৯৯০ সালে সেখানে এক ভয়াবহ দাঙ্গা উসকে দেয় চীন সরকার। পরে দাঙ্গার অভিযোগে গ্রেপ্তার ও হত্যা করা হয় কয়েক হাজার উইঘুর যুবকদের। সেই থেকে এখন পর্যন্ত উইঘুরদের দমনে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে চীন। পরিবারের অধিকাংশ পুরুষকেই রাখা হয় পুনঃশিক্ষা কেন্দ্রে। সেখানে মুসলিম পরিচয় মুছে দিয়ে গ্রহণ করতে বাধ্য করা হয় চীনা জাতীয়তাবাদ। নারীদের আটকে রেখে চালানো হয় নানা ধরনের যৌন নির্যাতন।

নির্যাতন থেকে বাঁচতে কেউ পালিয়ে গেলে পরিবারের ওপর নেমে আসে নির্যাতনের খড়্গ। শিশুদের পিতা-মাতা থেকে আলাদা করে পাঠানো হয় বিভিন্ন ক্যাম্পে। জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশটির সন্ত্রাসবিরোধী বিভিন্ন ক্যাম্পে আটকে রাখা হয়েছে ১০ লাখের বেশি উইঘুর নাগরিককে।

উইঘুরদের মধ্যে চীনা জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে ২০১৬ সালে মেকিং ফ্যামিলি নামে একটি ঘৃণ্য ও অভিনব পদ্ধতি চালু করে চীন। এর আওতায় উইঘুর পরিবারগুলোতে প্রতি মাসে কয়েক দিন অতিথি হয়ে থাকেন হান পুরুষরা। এ সময় পরিবারের নারীদের বাধ্য করা হয় এসব চীনা পুরুষদের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে। শিক্ষা দেওয়া হয় চীনা জাতীয়তাবাদ ও কমিউনিস্ট আদর্শ।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

যুদ্ধজাহাজ উদ্বোধনের সময় দুর্ঘটনায় দায়ী ৩ জনকে আটক

অটোরিকশা চালকের চোখ উপড়ানো মরদেহ উদ্ধার

সন্ত্রাসী ‘ঢাকাইয়া আকবর’ মারা গেছেন

রাজধানীতে ট্রাকের চাপায় পিষ্ট দুই মোটরসাইকেল আরোহী

সীমান্তে ২ বাংলাদেশিকে বিএসএফের গুলি

বজ্রবৃষ্টিতে ১৩ জনের মৃত্যু

কবি নজরুলের স্মৃতিবিজড়িত ২ বাড়ি 

চাঁপাইনবাবগঞ্জে আ.লীগ নেতা মুক্তা গ্রেপ্তার

জাল সনদে এমপিও আবেদনে মাদ্রাসাশিক্ষকদের কঠোর নির্দেশনা অধিদপ্তরের

ইরান-যুক্তরাষ্ট্র পরমাণু আলোচনা থমকে গেল পাঁচ কারণে

১০

অ্যাশেজের টানা কনসার্ট

১১

চবির ব্যাচ-৪২ এর সভাপতি তাহিরা মিশু, সম্পাদক আলীমুল 

১২

দুপুরের মধ্যে যেসব জেলায় ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের শঙ্কা

১৩

সড়কজুড়ে গর্ত, সংস্কারে উদ্যোগ নেই কর্তৃপক্ষের

১৪

গণ-অভ্যুত্থানসহ জাতীয় আন্দোলনের অনুপ্রেরণা ছিল কাজী নজরুল : রিজভী

১৫

সৌদি পৌঁছেছেন ৫৯ হাজার ১০১ হজযাত্রী

১৬

পঞ্চগড় থেকে উদ্ধার সেই নীলগাইয়ের মৃত্যু

১৭

গোপনে ভিডিও ধারণ, ছাত্রীকে হল থেকে বের করে দিলেন শিক্ষার্থীরা

১৮

টিভিতে আজকের খেলা

১৯

২৫ মে : কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

২০
X