ইউক্রেনে এযাবৎকালের সবচেয়ে বড় ড্রোন হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। শনিবার (২৪ মে) রাতভর একাধিক শহরে চালানো এই আক্রমণে প্রায় ৩৬০টি ড্রোন ব্যবহার করেছে রুশ সেনারা। হামলায় অন্তত ১২ জন নিহত এবং ৬০ জনের বেশি আহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন ইউক্রেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইহর ক্লাইমেঙ্কো।
টেলিগ্রামে দেওয়া এক বার্তায় ক্লাইমেঙ্কো বলেন, এই হামলা ছিল সম্পূর্ণভাবে ইউক্রেনের বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্য করে পরিচালিত একটি সমন্বিত এবং নিষ্ঠুর অপারেশন। শত্রুরা আবারও প্রমাণ করল- তাদের উদ্দেশ্য শুধুই ধ্বংস ও আতঙ্ক ছড়িয়ে দেওয়া।
এই হামলার পর এক প্রতিক্রিয়ায় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরও কঠোর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা জারির আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘যতক্ষণ বিশ্ব এবং যুক্তরাষ্ট্র চুপ করে থাকবে, এই যুদ্ধ থামবে না। বরং এটি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে আরও উৎসাহিত করছে।’
তিনি আরও যোগ করেন, এ ধরনের হামলাই যথেষ্ট প্রমাণ যে, রাশিয়ার ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ সময়ের দাবি। আমরা শুধু প্রতিরক্ষাই করছি, কিন্তু আগ্রাসন বাড়ছেই।
এদিকে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইউক্রেনও শনিবার রাতে পাল্টা হামলায় ৯৫টি ড্রোন ছুড়েছে, যেগুলোর বেশিরভাগই রাশিয়ার ভেতরে প্রতিহত করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের দাবি অনুযায়ী, এই হামলায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি, তবে মস্কোর বিমানবন্দরগুলোতে সাময়িকভাবে ফ্লাইট স্থগিত রাখা হয় নিরাপত্তাজনিত কারণে।
এই হামলার প্রকৃতি এবং ব্যাপকতা দেখে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা প্রশ্ন তুলেছেন, পুতিনের আসল লক্ষ্য কী? বিশেষ করে এমন সময় এই হামলা চালানো হলো যখন ইউক্রেন ও পশ্চিমা মিত্রদের মধ্যে নতুন সামরিক সহায়তা নিয়ে আলোচনা চলছে।
বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করছেন, এই ধরনের ‘আতঙ্ক সৃষ্টি’ কৌশলের মাধ্যমে পুতিন একদিকে ইউক্রেনের মনোবল ভাঙতে চাইছে, অন্যদিকে পশ্চিমা দেশগুলোর ‘যুদ্ধ ক্লান্তি’ বাড়িয়ে তাদের সহানুভূতি ও সহায়তা কমিয়ে আনতে চাইছেন।
এই রেকর্ড সংখ্যক ড্রোন হামলা শুধু সামরিক দিক থেকেই নয়, কূটনৈতিক দিক থেকেও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধকে নতুন এক মাত্রায় নিয়ে গেছে বলে ধারণা বিশ্লেষকদের। কারণ এতে করে পশ্চিমা মিত্রদের ওপর চাপ আরও বাড়বে- তারা কি ইউক্রেনের পাশে কঠোরভাবে দাঁড়াবে, না কি সহানুভূতির জায়গা থেকে ধীরে ধীরে সরে যাবে?
যুদ্ধের মাঝখানে এই সর্ববৃহৎ ড্রোন হামলা প্রমাণ করে যে, সংকট নিষ্পত্তি এখনো অনেক দূরে। এবং এই প্রশ্নটি আবারও সামনে চলে আসে-আসলে কী চান পুতিন?
মন্তব্য করুন