রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় স্বল্প ও মাঝারি পাল্লার পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের ওপর দেওয়া স্থগিতাদেশ তুলে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। সোমবার (৪ আগস্ট) দেওয়া এই সিদ্ধান্তের জন্য ন্যাটোকে দায়ী করেছেন দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বর্তমানে জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের ডেপুটি চেয়ারম্যান দিমিত্রি মেদভেদেভ।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে ইংরেজিতে লেখা এক পোস্টে মেদভেদেভ বলেন, ‘মধ্য ও স্বল্পপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার সংক্রান্ত রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি ন্যাটো দেশগুলোর রাশিয়াবিরোধী নীতির ফল।’
তিনি আরও সতর্ক করে বলেন, এটি এক নতুন বাস্তবতা, যা আমাদের সব প্রতিপক্ষকে মেনে নিতে হবে। আরও পদক্ষেপের জন্য প্রস্তুত থাকুন। তবে এই ‘অতিরিক্ত পদক্ষেপ’ কী হতে পারে- তা তিনি স্পষ্ট করেননি।
এর আগে গত সপ্তাহে, মেদভেদেভের সঙ্গে অনলাইন বাকযুদ্ধের জের ধরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়ার কাছে ‘উপযুক্ত অঞ্চলে’ দুটি মার্কিন পারমাণবিক সাবমেরিন মোতায়েনের নির্দেশ দেন।
রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, ইউরোপ ও এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তা সংকট তাদের ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন নীতি পুনর্বিবেচনার কারণ হয়েছে। বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়, যুক্তরাষ্ট্র ওইসব অঞ্চলে মধ্য ও স্বল্পপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের দিকে এগোচ্ছে, তাই রাশিয়ার পক্ষ থেকে এ ধরনের অস্ত্র মোতায়েন না করার একতরফা প্রতিশ্রুতি আর বহাল রাখার যৌক্তিকতা নেই।
এর আগে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভও ইঙ্গিত দিয়েছিলেন- যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর উসকানিমূলক পদক্ষেপ অব্যাহত থাকলে রাশিয়াকে ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন সংক্রান্ত বিধিনিষেধ তুলে নিতে হতে পারে। গত ডিসেম্বর মাসে রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা রিয়া নভোস্তিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে লাভরভ বলেন, একতরফা স্থগিতাদেশ কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়েছে এবং তা প্রত্যাহার করা হবে।
তিনি তখন অভিযোগ করেন, যুক্তরাষ্ট্র ঔদ্ধত্যপূর্ণভাবে রাশিয়া ও চীনের সতর্কতা উপেক্ষা করে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে ইতোমধ্যেই এই শ্রেণির অস্ত্র মোতায়েন শুরু করেছে।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে ট্রাম্প তার প্রথম প্রেসিডেন্ট মেয়াদে রাশিয়ার বিরুদ্ধে মধ্যমপাল্লার পারমাণবিক অস্ত্র চুক্তি (আইএনএফ) লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলেন এবং যুক্তরাষ্ট্রকে চুক্তি থেকে প্রত্যাহার করে নেন। মস্কো সে সময় ঘোষণা দেয়, যদি ওয়াশিংটন এ ধরনের অস্ত্র মোতায়েন না করে, তবে তারাও একই পথ অনুসরণ করবে না।
আইএনএফ চুক্তি ১৯৮৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে স্বাক্ষরিত এক ঐতিহাসিক সমঝোতা, যার মাধ্যমে ইউরোপে ভূমিভিত্তিক মধ্যমপাল্লার পারমাণবিক ও প্রচলিত ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন নিষিদ্ধ করা হয়। এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিলেন সোভিয়েত নেতা মিখাইল গর্বাচেভ ও যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান।
সূত্র : আলজাজিরা
মন্তব্য করুন