গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের নির্বিচার হামলা ও সামরিক অভিযানের কারণে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে জার্মানি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে ভাবছে। অক্টোবর মাসে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। সেই সম্মেলনের আগে বার্লিন তাদের আনুষ্ঠানিক অবস্থান স্পষ্ট করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রেডরিখ মেরৎজ, যিনি বর্তমানে স্পেন সফরে রয়েছেন, স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছেন যে জার্মান সরকার ইতোমধ্যেই বিষয়টি উচ্চপর্যায়ে আলোচনা শুরু করেছে। তিনি বলেন, ‘খুব শিগগিরই আমরা জার্মান সরকারের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবো। বর্তমানে বিষয়টি ইউরোপীয় পর্যায়ে আলোচনার টেবিলে রয়েছে।’
চ্যান্সেলর আরও জানান, আগামী সপ্তাহে জার্মান মন্ত্রিসভায় বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে। মেরৎজ আশাবাদ ব্যক্ত করেন, ১ অক্টোবর কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিতব্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে জার্মানি তাদের অবস্থান প্রকাশ করতে সক্ষম হবে।
ইউরোপীয় কমিশন ইতোমধ্যেই কঠোর অবস্থান নিয়েছে। গাজা যুদ্ধ ও ফিলিস্তিনে চলমান মানবিক সংকটকে কেন্দ্র করে তারা ইসরায়েলের সঙ্গে বিদ্যমান বাণিজ্যচুক্তি স্থগিত করার প্রস্তাব দিয়েছে। আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, এই প্রস্তাব কার্যকর হলে ইসরায়েলের অর্থনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব পড়তে পারে। শুধুমাত্র ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারেই তাদের প্রায় ৬.৮৭ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভেতরে এ বিষয়ে ভিন্নমত রয়েছে। স্পেন, আয়ারল্যান্ড ও বেলজিয়াম গাজা যুদ্ধের শুরু থেকেই ইসরায়েলের সমালোচনায় সরব, তারা কঠোর পদক্ষেপের পক্ষে। অন্যদিকে হাঙ্গেরি ও চেক প্রজাতন্ত্র ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতা করছে।
বিশ্লেষকেরা মনে করেন, জার্মানির অবস্থান পরিবর্তন বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাসের কারণে বার্লিন সবসময় ইসরায়েলের প্রতি এক ধরনের রাজনৈতিক ও নৈতিক দায়বদ্ধতা অনুভব করেছে। এই কারণেই এতদিন তারা তুলনামূলক নরম অবস্থান বজায় রেখেছে। কিন্তু গাজায় সাধারণ মানুষের মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ায় এবং মানবিক পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার নেয়ায় জার্মানির অভ্যন্তরে রাজনৈতিক চাপ বেড়েছে। বিরোধী দলসহ নাগরিক সমাজ সরকারকে কঠোর অবস্থান নেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে।
বিশ্লেষকদের মতে, জার্মানি যদি নিষেধাজ্ঞার পথে যায়, তাহলে এটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সিদ্ধান্ত প্রক্রিয়ায় বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে। কারণ জার্মানি ইইউর সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনীতি এবং রাজনৈতিকভাবে অন্যতম প্রভাবশালী দেশ। এর ফলে অন্য সদস্য রাষ্ট্রগুলোও নিষেধাজ্ঞার পক্ষে অবস্থান নিতে উৎসাহিত হতে পারে।
অন্যদিকে, ইসরায়েলের সঙ্গে দীর্ঘদিনের কূটনৈতিক ও প্রতিরক্ষা সম্পর্ক জার্মানির জন্য এই সিদ্ধান্তকে সহজ করছে না। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এটি ইউরোপ ও ইসরায়েলের মধ্যে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে, যা অর্থনৈতিক ও কৌশলগত উভয় ক্ষেত্রেই গভীর প্রভাব ফেলবে।
মন্তব্য করুন