ইউক্রেন সফরে যাচ্ছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। রাশিয়ার পরপরই ইউক্রেনে তার এই সফরকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গুরুত্ববহ বলে মনে করা হচ্ছে। আগামী ২৩ আগস্ট তার এ সফর হতে পারে। ইউক্রেন সফরে নরেন্দ্র মোদি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ বন্ধের প্রক্রিয়া নিয়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে আলোচনা হতে পারে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর। খবর এনডিটিভির।
গত মাসেই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে দেখা করেছিলেন নরেন্দ্র মোদি। সে সময়ও তিনি যুদ্ধ থামানোর বিষয়ে কথা বলেছিলেন। পুতিনের সঙ্গে নৈশভোজের আসরে মোদি বলেছিলেন, জাতিসংঘের নীতিকে সম্মান জানানো উচিত। যুদ্ধক্ষেত্রে কোনো সমস্যার সমাধান হয় না। কূটনীতি ও আলোচনাই পথ দেখাবে।
ইউক্রেন যদি যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার চেষ্টা থেকে সরে আসে, তবে মস্কো যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে পারে বলে জানিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এই পরিস্থিতিতে মোদির সফরে রুশ-ইউক্রেন রক্তক্ষয়ী সংঘাত বন্ধ হওয়ার আশা দেখছেন কূটনীতি বিশেষজ্ঞদের একাংশ।
২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরে এই প্রথম ইউক্রেন সফরে যাচ্ছেন মোদি। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানাচ্ছে, সংঘাতের ইতি টানতে ভারতের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সব প্রচেষ্টা চালানো হবে বলে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে জানিয়েছেন মোদি।
গত জুন মাসে জি৭ সম্মেলনে যোগ দিতে ইটালি গিয়ে জেলেনস্কির সঙ্গে পার্শ্ববৈঠক করেছিলেন নরেন্দ্র মোদি। তার আগে জাপানেও দুজনের একান্তে আলোচনা হয়েছিল। একাধিকবার ফোনেও দুই প্রধানমন্ত্রীর কথা হয়েছে।
অন্য দিকে, চলতি মাসে মস্কোয় গিয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে আলিঙ্গন করলেও মোদি তার সামনেই ইউক্রেনে আগ্রাসন এবং শিশুহত্যার স্পষ্ট নিন্দা করেছেন। যদিও মোদির মস্কো সফর এবং পুতিনকে আলিঙ্গনের নিন্দা করে জেলেনস্কি বলেছিলেন, বৃহত্তম গণতন্ত্রের প্রধানমন্ত্রী একজন যুদ্ধাপরাধীকে আলিঙ্গন করছেন। শান্তিপ্রক্রিয়ায় পক্ষে এটা বিরাট ধাক্কা।
মোদি-পুতিন বৈঠক নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিল আমেরিকাও। এ প্রসঙ্গে আমেরিকার বিদেশ দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার বলেছিলেন, আমরা ভারতকে বলছি, ইউক্রেনে শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য তাদের সমর্থন প্রয়োজন।
২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে উজবেকিস্তানে শাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও)-এর বৈঠকের ফাঁকে পুতিনের সঙ্গে প্রথম বার মুখোমুখি বৈঠক করেছিলেন নরেন্দ্র মোদি। সেই বৈঠকেই মোদি পুতিনকে বলেছিলেন, ‘এটা যুদ্ধের সময় নয়।’
রুশ অধিকৃত ডনেৎস্ক, লুহানস্ক, জাপোরিজিয়া এবং খেরসনে পুতিন সরকার তথাকথিত গণভোটের আয়োজন করার পরে জেলেনস্কিকে ফোনে মোদি আশ্বাস দিয়েছিলেন, কোনো অবস্থাতেই ইউক্রেনের অখণ্ডতার প্রতি আঘাতে সমর্থন দেবে না ভারত।
অন্য দিকে, ইউক্রেনের জমি দখলের রুশ তৎপরতার বিরুদ্ধে জাতিসংঘে আমেরিকাসহ পশ্চিমি দেশগুলি বারবার প্রস্তাব আনলেও ভারত সেই ভোটাভুটিতে অংশ নেয়নি। আবার এরই পাশাপাশি, ইউক্রেনবাসীর জন্য মানবিক সাহায্য চালিয়ে যাওয়ার কথা মোদী সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয় আন্তর্জাতিক মঞ্চে।
জেলেনস্কির পাশাপাশি রুশ বিদেশমন্ত্রী সের্গেই লাভারভও ইতিমধ্যেই যুদ্ধ থামাতে নয়াদিল্লির ‘বৃহত্তর ভূমিকা’র সম্ভাবনার বার্তা দিয়েছেন। মোদির ইউক্রেন সফরে কি সত্যি হবে সেই পূর্বাভাস? সেটা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে আরও একটু।
মন্তব্য করুন