একসময়ের সেই ছোট্ট মেয়ে, যে বিমান দেখে বিস্মিত হয়ে গিয়েছিল, আজ তিনি ভারতের আকাশে ওড়াচ্ছেন রাফাল যুদ্ধবিমান। গর্বের সঙ্গে প্রতিনিধিত্ব করছেন দেশের আধুনিক প্রতিরক্ষা শক্তিকে। তিনি লেফটেন্যান্ট শিবাঙ্গী সিংহ — ভারতের একমাত্র নারী রাফাল ফাইটার পাইলট। এবার তার চোখ মহাকাশ জয়ের লক্ষ্যে।
ভারতে রাফাল যুদ্ধবিমানের প্রথম এই নারী পাইলট সম্প্রতি সংবাদ সংস্থা এএফপিকে একটি সাক্ষাৎকার দেন। সাক্ষাৎকারটি নিয়ে একটি ফিচার প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি। প্রতিবেদনটির আক্ষরিক অনুবাদ তুলে ধরা হলো—
২৯ বছর বয়সী শিবাঙ্গী, যিনি উত্তরপ্রদেশের বারাণসীতে জন্মগ্রহণ করেন, বর্তমানে ভারতীয় বায়ুসেনার আধুনিকীকরণের এক উজ্জ্বল মুখ। নয়াদিল্লির এয়ার ফোর্স মিউজিয়ামে দাঁড়িয়ে তিনি সংবাদ সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘এই জায়গা থেকেই আমার স্বপ্নের যাত্রা শুরু। ছোটবেলায় প্রথমবার এখানে এসে বিমানের দিকে তাকিয়েই বুঝে গিয়েছিলাম, বড় হয়ে আমাকে পাইলটই হতে হবে।’
২০১৫ সালে ভারতীয় বিমানবাহিনীতে প্রথমবারের মতো নারী ফাইটার পাইলটদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সেই পথেই এগিয়ে শিবাঙ্গী সিংহ আজ রাফাল উড়িয়ে ইতিহাস গড়েছেন। তার কথায়, এটি শুধু সমাজের আধুনিকীকরণ নয়, এটি আমাদের স্বপ্নপূরণের সুযোগও। বহু নারী আজ এই পেশায় আসছেন — এটি সত্যিই গর্বের বিষয়।
তিনি আরও জানান, তার মা সবসময় চেয়েছিলেন তিনি শুধু শিক্ষিতই না, বরং স্বনির্ভরও হন। শিবাঙ্গীর স্বামীও একজন ফাইটার পাইলট।
ফ্রান্সের দ্যাসো অ্যাভিয়েশন কোম্পানির তৈরি রাফাল যুদ্ধবিমান ভারতের প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন। ভারত ইতিমধ্যেই ৩৬টি রাফাল যুদ্ধবিমান সংগ্রহ করেছে এবং সম্প্রতি আরও ২৬টি কেনার জন্য চুক্তি করেছে। এই চুক্তি পাকিস্তান ও চীনের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার পটভূমিতে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।
কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলা ও ২৬ জন সাধারণ মানুষ নিহতের পর দেশজুড়ে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে। যদিও পাকিস্তান এই হামলার সঙ্গে কোনও সংযোগ অস্বীকার করেছে, তবুও নয়াদিল্লি ইসলামাবাদের দিকেই আঙুল তুলছে। একইসঙ্গে চীনের ওপরও নজর রাখছে ভারত, বিশেষত ২০২০ সালে গালওয়ান উপত্যকায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর।
শিবাঙ্গীর যুদ্ধবিমানে প্রথম ফ্লাইট ছিল একটি মিগ-২১ বিমানে। তিনি জানান, প্রথমে একটু নার্ভাস ছিলাম, কিন্তু একা একা আকাশে ওড়ার অভিজ্ঞতা ছিল অবিশ্বাস্য। তখনই বুঝলাম, একজন ফাইটার পাইলট হওয়া কতটা দক্ষতা ও সাহসের প্রয়োজন।
২০২০ সালে ফ্রান্সের প্রশিক্ষকদের সঙ্গে সিমুলেটর ট্রেনিংয়ের পর রাফাল চালানোর জন্য তিনি চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হন। তিনি বলেন, রাফালের প্রতিক্রিয়াশীলতা অসাধারণ। ককপিট এতটাই আরামদায়ক যে মনে হয় যেন এটি শুধুই আপনার জন্য তৈরি।
রাফাল ওড়ানোর পর এবার শিবাঙ্গীর চোখ মহাকাশ অভিযানে। ভারত সরকারের আসন্ন ‘মানব মহাকাশ মিশনে’ অংশ নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন তিনি। এর জন্য তিনি পরীক্ষামূলক পাইলট প্রশিক্ষণের জন্য আবেদনও করেছেন।
শিবাঙ্গীর ভাষায়, আমি এমন একটি ক্ষেত্র দখল করতে পেরেছি যা বহুদিন পুরুষদের জন্য সংরক্ষিত ছিল। ‘আমি পারলে, অন্য নারীরাও যেকোনো ক্ষেত্রেই সফল হতে পারেন,’— দৃঢ় প্রত্যয়ে বলেন শিবাঙ্গী।
বর্তমানে ভারতীয় বিমান বাহিনীতে ১৬০০-র বেশি নারী অফিসার রয়েছেন, যাঁদের মধ্যে অনেকেই পাইলট। বিশ্বে বেসরকারি বিমান পরিষেবাতেও নারীদের অংশগ্রহণে শীর্ষে রয়েছে ভারত — মোট পাইলটদের প্রায় ১৪ শতাংশই নারী।
অনেকে বলছেন, শিবাঙ্গীর এই সাফল্য এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কেবল একজন ব্যক্তির গল্প নয়, বরং ভারতীয় নারীর অদম্য মনোবলের প্রতীক।
মন্তব্য করুন