ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চললেও উত্তেজনা এখনো বিদ্যমান। এর মধ্যে ভারতের অরুণাচল প্রদেশের ২৭টি জায়গার নতুন নামকরণ করেছে চীন। এ বিষয়ে ভারত তীব্র প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে।
ভারত দাবি করেছে, অরুণাচল প্রদেশ তাদের অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং চীনের এই ‘বৃথা ও অযৌক্তিক’ প্রচেষ্টা বাস্তবতাকে কখনোই পরিবর্তন করতে পারবে না। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, অরুণাচল প্রদেশ ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল, আছে এবং সব সময় থাকবে।
বুধবার (১৪ মে) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুস্তান টাইমস প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
চীনের বেসামরিকবিষয়ক মন্ত্রণালয় গত ১১ মে অরুণাচলের ২৭টি জায়গার নতুন নামকরণ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে ১৫টি পাহাড়, ৪টি রাস্তা, ২টি নদী, ১টি লেক এবং ৫টি বসতি এলাকা। চীন এই নামকরণটি করেছে তার পঞ্চম দফায়, যা ২০১৭ সাল থেকে শুরু।
এই সময়ের মধ্যে চীন একাধিকবার অরুণাচলের জায়গাগুলোর নাম পরিবর্তন করেছে। ২০১৭ সালে ৬টি, ২০২১ এবং ২০২৩ সালে ১৫টি এবং ২০২৪ সালের মার্চে আরও ৩০টি জায়গার নাম পাল্টানো হয়েছে।
ভারত এই নামকরণকে স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জসওয়াল বলেন, চীনের এই প্রচেষ্টা বাস্তবতা পরিবর্তন করতে পারে না। ভারত বরাবরই অরুণাচল প্রদেশকে তার অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে দাবি করে আসছে এবং চীনের এই ধরনের পদক্ষেপকে তারা বেআইনি এবং অযৌক্তিক হিসেবে বিবেচনা করছে।
চীন অরুণাচল প্রদেশকে ‘জাংনান’ নামে ডাকে এবং দাবি করে যে এটি দক্ষিণ তিব্বতের অংশ। তাদের দাবি অনুযায়ী, অরুণাচল প্রদেশের অধিকাংশ জায়গা তাদের ভূখণ্ডের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। চীনের সঙ্গে এই বিতর্ক দীর্ঘদিনের, এবং গত কয়েক বছরে আরও জটিল হয়েছে।
২০২০ সালে গালওয়ান উপত্যকায় ভারত এবং চীনের সেনাদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়, যেখানে ২০ ভারতীয় এবং ৪ চীনা সেনা নিহত হয়। এই ঘটনার পর থেকে ভারত এবং চীনের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক অনেকটাই তলানিতে পৌঁছেছিল। তবে সম্প্রতি, চার বছর পর দুই দেশ আবার তিব্বতে কৈলাস মানস সরোবর যাত্রা পুনরায় শুরু করতে রাজি হয়েছে, যা দুই দেশের মধ্যে আস্থা বাড়ানোর লক্ষ্যে একটি পদক্ষেপ।
এদিকে, পাক-ভারত সংঘাত পরিস্থিতিতে প্রকাশ্যে চীন পাকিস্তানকে সহায়তা করেছে। যা ভারতের জন্য আরও এক নতুন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যার ফলে চীনের এই সহযোগিতার ফলে দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠছে। এই উত্তেজনা ভারতকে একাধিক সামরিক ও কূটনৈতিক প্রতিকূলতার মধ্যে ফেলে দিচ্ছে।
এই ঘটনাগুলোর মাধ্যমে, ভারত, পাকিস্তান এবং চীনের মধ্যে চলমান উত্তেজনা দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও অনিশ্চিত এবং উত্তপ্ত করে তুলছে। বিশেষ করে, চীনের অরুণাচল নিয়ে সৃষ্ট বিরোধ এবং পাকিস্তানকে সহযোগিতা করার পরিস্থিতি, ভারতকে নতুন কূটনৈতিক কৌশল অবলম্বন করতে বাধ্য করবে।
মন্তব্য করুন