ভারতীয় লেখিকা, আইনজীবী এবং সামাজিক কর্মী বানু মুশতাক ইতিহাস গড়েছেন। তিনি কানাড়া ভাষায় লেখা ছোটগল্প সংকলন হার্ট ল্যাম্পের জন্য আন্তর্জাতিক বুকার পুরস্কার জিতেছেন। এ ভাষায় প্রথম বুকার পুরস্কার জিতেছেন তিনি।
বুধবার (২১ মে) বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ছোটগল্প সংকলন হার্ট ল্যাম্প নিয়ে কানাড়া ভাষায় লেখা প্রথম লেখক হিসেবে আন্তর্জাতিক বুকার পুরস্কার জিতে ইতিহাস গড়েছেন বানু মুশতাক। এটি এই মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার জয়ী প্রথম ছোটগল্প সংকলন। বিচারকরা তার চরিত্রগুলোকে ‘বেঁচে থাকার এবং প্রতিরোধের আশ্চর্যজনক প্রতিকৃতি’ হিসেবে প্রশংসা করেছেন।
১৯৯০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে মুশতাকের লেখা ১২টি ছোটগল্প নিয়ে গঠিত হার্ট ল্যাম্প দক্ষিণ ভারতের মুসলিম নারীদের জীবনের কষ্ট ও সংগ্রামকে গভীরভাবে তুলে ধরে। গল্পগুলো কনাড়া ভাষা থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন দীপা ভাসথি। তিনিও মুশতাকের সঙ্গে ৫০,০০০ পাউন্ডের এ পুরস্কার ভাগ করে নেবেন।
প্রথম ভারতীয় অনুবাদক হিসেবে আন্তর্জাতিক বুকার জয়ী ভাসথি বলেন, তিনি আশা করেন এই জয় কানাড়া এবং অন্যান্য দক্ষিণ এশীয় ভাষায় আরও অনুবাদকে উৎসাহিত করবে।
বানু মুশতাক কে? মুশতাক কর্ণাটকের একটি ছোট শহরে একটি মুসলিম পাড়ায় বেড়ে ওঠেন এবং তার চারপাশের অধিকাংশ মেয়েদের মতো স্কুলে উর্দু ভাষায় কোরআন অধ্যয়ন করেন। তার বাবা একজন সরকারি কর্মচারী ছিলেন। মাত্র আট বছর বয়সে তাকে একটি কনভেন্ট স্কুলে ভর্তি করেন তার বাবা। এ স্কুলে পড়াশোনার মাধ্যম ছিল রাজ্যের সরকারি ভাষা—কনাড়া।
মুশতাক কানাড়া ভাষায় সাবলীল হতে কঠোর পরিশ্রম করেন। এই অপরিচিত ভাষা পরে তার সাহিত্যিক অভিব্যক্তির মাধ্যম হয়ে ওঠে। তিনি স্কুলে থাকতেই লেখালেখি শুরু করেন এবং তার সমবয়সীরা যখন বিয়ে করে সংসার শুরু করছিলেন, তখন তিনি কলেজে পড়তে যান।
তার প্রথম ছোটগল্প প্রকাশিত হয় তার জীবনের একটি বিশেষ চ্যালেঞ্জিং সময়ে। ২৬ বছর বয়সে নিজের পছন্দের একজনকে বিয়ে করার পর, তার প্রথম গল্প একটি স্থানীয় ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়। কিন্তু তার প্রাথমিক বিবাহিত জীবনে অনেক কঠিন সময় পার করতে হয়েছে।
ভোগ ম্যাগাজিনের এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, আমি সবসময় লিখতে চেয়েছিলাম, কিন্তু হঠাৎ করে প্রেমের বিয়ের পর আমাকে বোরকা পরতে এবং গৃহস্থালির কাজে নিজেকে নিয়োজিত করতে বলা হয়।
দ্য উইক ম্যাগাজিনের আরেক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, তাকে কীভাবে ঘরের চার দেয়ালের মধ্যে জীবনযাপন করতে বাধ্য করা হয়েছিল। তারপর, একটি চাঞ্চল্যকর প্রতিরোধের কাজ তাকে মুক্ত করে।
তিনি বলেন, একবার হতাশার মধ্যে আমি নিজের ওপর পেট্রল ঢেলে আগুন ধরানোর ইচ্ছা করেছিলাম। সৌভাগ্যবশত, আমার স্বামী সময়মতো বুঝতে পেরে আমাকে জড়িয়ে ধরেন এবং ম্যাচবাক্সটি কেড়ে নেন। তিনি আমার পায়ের কাছে আমাদের শিশুকে রেখে অনুরোধ করেন, ‘আমাদের ছেড়ে যেও না।
তার ক্যারিয়ারে তিনি কর্ণাটক সাহিত্য অ্যাকাডেমি পুরস্কার এবং দানা চিন্তামণি আত্তিমাব্বে পুরস্কারসহ অসংখ্য স্থানীয় ও জাতীয় পুরস্কার জিতেছেন। ২০২৪ সালে, ১৯৯০ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে প্রকাশিত তার ৫টি ছোটগল্প সংকলনের ইংরেজি অনুবাদ হাসিনা অ্যান্ড আদার স্টোরিজ পেন ট্রান্সলেশন পুরস্কার জিতেছে।
মন্তব্য করুন