ভারত থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর শুল্ক আরও বাড়াতে পারেন বলে হুমকি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই নতুন পদক্ষেপ নিতে পারেন বলে সতর্ক করেছেন তিনি। মঙ্গলবার এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প এ কথা জানান।
তার দাবি, রাশিয়া থেকে বিপুল পরিমাণ জ্বালানি তেল কেনা ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। আর এ কারণে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন তিনি।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনবিসিকে দেওয়া ওই সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, ‘ভারত আমাদের ভালো বাণিজ্যিক অংশীদার নয়। তারা আমাদের সঙ্গে প্রচুর ব্যবসা করে, কিন্তু আমরা তাদের সঙ্গে তেমন ব্যবসা করি না। এই কারণেই ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছি। তবে আমি মনে করি, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এই হার আরও উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করা উচিত, কারণ তারা এখনো রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কিনছে।’
ট্রাম্পের এই সতর্কতা এসেছে এমন সময়, যখন ৭ আগস্ট থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন পাল্টা শুল্ক নীতি কার্যকর হতে যাচ্ছে। এর আগে সোমবার নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যালে’ দেওয়া এক পোস্টে তিনি রাশিয়ার তেল কেনার দায়ে ভারতের পণ্যের ওপর শুল্ক বৃদ্ধি করার ঘোষণা দেন।
গত ৩১ জুলাই ট্রাম্প একটি নির্বাহী আদেশে বিভিন্ন দেশের ওপর নতুন শুল্ক আরোপের নির্দেশ দেন। ওই আদেশে ভারতীয় পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপের পাশাপাশি রাশিয়ার কাছ থেকে তেল আমদানির কারণে অতিরিক্ত জরিমানার বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
যদিও কত শতাংশ জরিমানা আরোপ হবে, তা তখন প্রকাশ করা হয়নি। ট্রাম্প প্রশাসনের পরিকল্পনা অনুযায়ী, নতুন শুল্ক ও জরিমানা ৭ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ভারত বিশ্ববাজারে রাশিয়ার অন্যতম প্রধান জ্বালানি ক্রেতা হিসেবে উঠে এসেছে। সস্তায় অপরিশোধিত তেল কিনে দেশটির শোধনাগারগুলো স্থানীয় বাজার ও রপ্তানির জন্য তা প্রক্রিয়াজাত করছে। যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলো শুরু থেকেই এ বিষয়ে আপত্তি জানালেও নয়াদিল্লি এখনো রাশিয়ার তেল কেনা বন্ধে কোনো নির্দেশ দেয়নি।
ব্লুমবার্গের বরাত দিয়ে জানা গেছে, মার্কিন চাপ থাকা সত্ত্বেও ভারতীয় শোধনাগারগুলো রাশিয়ার জ্বালানি আমদানি অব্যাহত রেখেছে।
বাণিজ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যদি ট্রাম্পের শুল্ক বৃদ্ধির পদক্ষেপ বাস্তবায়িত হয়, তবে তা ভারতের রপ্তানি খাতের ওপর সরাসরি আঘাত হানবে। বিশেষ করে টেক্সটাইল, ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য, ফার্মাসিউটিক্যাল ও তথ্যপ্রযুক্তি সেবা যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়তে পারে।
একই সঙ্গে, দুই দেশের কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্কে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি হতে পারে, যা বৈশ্বিক বাজারেও অস্থিতিশীলতা বাড়াতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে এই শুল্কবিরোধ কতটা গভীরে যাবে, তা নির্ভর করছে আগামী কয়েক দিনের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক অগ্রগতির ওপর।
মন্তব্য করুন