গাজা যুদ্ধের ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে দুই মাসের যুদ্ধবিরতির নতুন প্রস্তাব দিয়েছে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস।
শনিবার (১৭ মে) কাতারের দোহায় অনুষ্ঠিত আলোচনায় গোষ্ঠীটি জানিয়েছে, তারা ৯ জন ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দিতে প্রস্তুত- যদি এর বিনিময়ে গাজায় ৬০ দিনের জন্য যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা হয়।
এই প্রস্তাব এমন এক সময়ে এসেছে, যখন ইসরায়েল গাজার উত্তরাঞ্চলে নতুন করে বড় ধরনের হামলা শুরু করেছে। একইদিনে ‘অপারেশন গিদিওনস চ্যারিয়ট’ নামে ইসরায়েলি বাহিনী ব্যাপক সামরিক অভিযানের ঘোষণা দেয়, যেটি সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে গাজায় সবচেয়ে ভয়াবহ বলে বিবেচিত হচ্ছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে এক ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা জানান, হামাসের নতুন প্রস্তাবে বলা হয়েছে- প্রতিদিন গাজায় ৪০০ ট্রাক ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি এবং আহতদের চিকিৎসার জন্য গাজা থেকে সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থার কথাও অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
জিম্মি মুক্তির প্রস্তাবের পর ইসরায়েল হামাসের কাছ থেকে অবশিষ্ট সব জিম্মির জীবিত থাকার প্রমাণ ও বিস্তারিত তথ্য চেয়েছে। দোহায় এই আলোচনায় মধ্যস্থতা করছে কাতার ও যুক্তরাষ্ট্র।
তবে ইসরায়েল এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি। আলোচনার আগে দেশটি পরিষ্কারভাবে জানিয়েছিল, তারা গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহার করবে না এবং যুদ্ধ বন্ধে কোনো প্রতিশ্রুতি দেবে না। বিবিসি জানায়, হামাসের প্রস্তাবে এই বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
এদিকে, ইসরায়েলের নতুন হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে গাজায় অন্তত ৩০০ মানুষ নিহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে রয়েছে হাসপাতালের রোগী, শরণার্থীশিবিরের বাসিন্দা ও শিশুরা। গত ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি ভেঙে হামলা শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত গাজায় নিহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৩ হাজার।
গাজার বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, খাদ্য, পানি, ওষুধ- সবকিছুতেই মারাত্মক সংকট দেখা দিয়েছে। সাংবাদিক গাদা আল কুর্দ বিবিসিকে বলেন, তার পরিবার দিনে মাত্র একবার খেতে পারছে। তিনি অভিযোগ করেন, ইসরায়েল পরিকল্পিতভাবে খাদ্যকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে।
জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থাগুলো গাজায় দুর্ভিক্ষ ও শিশুমৃত্যুর আশঙ্কায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে। ইতোমধ্যে বহু শিশু অপুষ্টিতে কঙ্কালসার হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছে বিভিন্ন সংস্থা।
এই অবস্থায় জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস, স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ ও ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তোনিও তাজানি স্থায়ী যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন। জার্মানির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলের নতুন হামলা গাজার জনগণ ও জিম্মিদের জন্য ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের ঝুঁকি তৈরি করেছে।
হামাসের নতুন প্রস্তাবকে ঘিরে মধ্যপ্রাচ্যের উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে সাময়িক স্বস্তি আসতে পারে কি না- এখন তা নির্ভর করছে ইসরায়েলের পরবর্তী পদক্ষেপের ওপর।
মন্তব্য করুন