ইসরায়েলের ভয়াবহ পরিণতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইরান। দেশটি বলছে, ইসরায়েলের আঞ্চলিক আগ্রাসন নিয়ন্ত্রণ না করলে ইরান আরও কঠোর ও বেদনাদায়ক প্রতিশোধমূলক জবাব দেবে।
সোমবার (১৬ জুন) মেহের নিউজ এজেন্সির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান সোমবার ওমানের সুলতান হাইথাম বিন তারিকের সঙ্গে ফোনালাপে যুক্তরাষ্ট্রকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তিনি বলেন, ইসরায়েলের আঞ্চলিক আগ্রাসন নিয়ন্ত্রণ না করলে ইরান আরও কঠোর ও বেদনাদায়ক প্রতিশোধমূলক জবাব দেবে।
পেজেশকিয়ান ওমানের সুলতানের সংহতি ও সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ও আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদারের গুরুত্বের ওপর জোর দেন। ইরানের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচি সংক্রান্ত আলোচনায় ওমানের গঠনমূলক ভূমিকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, মাস্কট এই আলোচনায় উল্লেখযোগ্য মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করেছে। তিনি জানান, এই আলোচনার সময় আমেরিকা দাবি করেছিল যে তারা ইসরায়েলকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং তেল আবিব যুক্তরাষ্ট্রের অনুমোদন ছাড়া ইরানের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেবে না।
প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ান জোর দিয়ে বলেন, ইরান বারবার স্পষ্ট করেছে যে তারা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে আগ্রহী নয় এবং আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) কারিগরি তদারকির জন্য প্রস্তুত। কিন্তু ইসরায়েল আন্তর্জাতিক নীতি লঙ্ঘন করে ইরানের বিরুদ্ধে হামলা চালিয়েছে। এতে যাতে বেশ কয়েকজন বিজ্ঞানী, সামরিক কমান্ডার ও বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের সমর্থন ও সবুজ সংকেত ছাড়া এ ধরনের অপরাধ ঘটত না।
তিনি আরও বলেন, শত্রুরা ইরানের জনগণের শক্তি, সক্ষমতা ও ঐক্যকে ভুলভাবে বিচার করেছে। তারা ইরানকে বোঝেনি এবং ভেবেছিল সামরিক নেতা ও বিজ্ঞানীদের হত্যা, বেসামরিক বাড়িতে হামলার মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করা যাবে। কিন্তু নেতার নির্দেশনা ও সশস্ত্র বাহিনীর দ্রুত প্রস্তুতির কারণে শত্রুরা সেই রাতেই ভারী ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। আগ্রাসন অব্যাহত থাকলে আরও কঠোর জবাব অপেক্ষা করছে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
পেজেশকিয়ান যুদ্ধ ও রক্তপাত এড়ানোর নীতিগত অবস্থান এবং প্রতিবেশী ও মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে সম্মানজনক ও ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ার প্রচেষ্টার কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, ইরানি জনগণের অভ্যন্তরীণ ঐক্য একটি বড় সম্পদ এবং সাম্প্রতিক শত্রুতামূলক পদক্ষেপ জাতিকে বিভক্ত করতে পারেনি। এমনকি সরকারের সমালোচকরাও দেশের প্রতিরক্ষায় ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন।
ইসরায়েলের চলমান উসকানির পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সরকার যদি এই হিংস্র শাসনকে নিয়ন্ত্রণ করতে এবং আঞ্চলিক অস্থিরতা রোধ করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে ইরানকে আরও কঠোর ও বেদনাদায়ক জবাব দিতে হবে।
তিনি জানান, ইরান সবসময় ন্যায়বিচার, জাতীয় অধিকার ও আন্তর্জাতিক নীতির ভিত্তিতে সংলাপের পক্ষে। তবে, হুমকি, জবরদস্তি ও আগ্রাসনের মধ্যে দিয়ে আলোচনা সম্ভব নয়। এই পথ অব্যাহত থাকলে ইরান তার অধিকার রক্ষায় দৃঢ় থাকবে এবং মুসলিম ভ্রাতৃদের সমর্থনের ওপর ভরসা করবে।
মন্তব্য করুন