ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলায় ২৪ হাজারের বেশি শিশু তাদের পিতা-মাতার একজন বা দুজনকে হারিয়েছে। যুদ্ধের মধ্যে এই হিসাব পাওয়া কঠিন হওয়া সত্ত্বেও অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ইউরো-মেডিটারেনিয়ান হিউম্যান রাইটস মনিটরের এক সাম্প্রতিক প্রতিবেদনের বরাতে এই তথ্য জানিয়েছে বিবিসি।
গাজার ২৩ লাখের মানুষের প্রায় অর্ধেক শিশু। ভয়াবহ এই যুদ্ধের কারণে তাদের জীবনও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ইসরায়েল বেসামরিক নাগরিকদের প্রাণহানি এড়ানোর দাবি করলেও ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মতে, ইসরায়েলি হামলায় সাড়ে ১১ হাজারের বেশি শিশু নিহত হয়েছে। এমনকি এর চেয়ে আরও বেশি শিশু আহত হয়েছে।
গাজা যুদ্ধের ভয়াবহতার মধ্যেই হাসপাতালে একটি শিশু জন্মগ্রহণ করেছে। তার কোনো নাম নেই। কেননা তার কোনো নাম রেখে যেতে পারেনি মা। এর আগেই ইসরায়েলি হামলায় তিনি পৃথিবী থেকে চলে গেছেন। সদ্য জন্ম নেওয়া শিশুটা আর কোনো দিন বাবা-মায়ের আদর পাবে না।
ওই শিশুর মায়ের নাম হান্না। তিনি ইসরায়েলি বিমান হামলায় গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে সন্তান প্রসব করলেও মেয়ের নাম রেখে যেতে পারেননি তিনি। মধ্য গাজার দেইর আল-বালাহের আল-আকসা হাসপাতালে ছোট্ট এই নবজাতকের সেবা-যত্ন করেন নার্স ওয়ার্দা আল-আওদা। তিনি বলেন, ওকে আমরা এখন শুধু হান্না আবু আমশার মেয়ে বলে ডাকি।
যুদ্ধের মাঝে শিশুদের পুরো পরিবার প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। তাদের দেখভাল করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিত্সক ও উদ্ধারকর্মীদের। ওই নার্স বলেন, আমরা ওর পরিবারের সাথে যোগাযোগ হারিয়ে ফেলেছি। ওর কোনো আত্মীয় আসেনি। ওর বাবার ভাগ্যে কী হয়েছে তা আমরা জানি না।
ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে পায়ে ও পেটে গুরুতর আঘাত পেয়েছে ১০ বছর বয়সী ইব্রাহিম আবু মুস। কিন্তু দুঃখ তার নিজের জন্য নয়, সে কষ্ট পাচ্ছে ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে প্রাণ হারানো মা, দাদা ও বোনের জন্য। ইব্রাহিম বলেছে, আমাকে এত দিন বলা হতো তাদের হাসপাতালের উপরের তলায় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু আমি বাবার ফোনে ছবি দেখে সত্যটা জেনে যাই। আমি এতটাই কেঁদেছিলাম যে আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি।
মন্তব্য করুন