ইব্রাহিম রাইসির আকস্মিক মৃত্যুতে ইরানের পররাষ্ট্রনীতি বা অভ্যন্তরীণ রীতিতে বড় কোনো পরিবর্তন আসার ইঙ্গিত নেই। তবে তার মৃত্যুতে যে শূন্যস্থান তৈরি হয়েছে তা থেকে কে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে সে প্রশ্নই ঘুরছে সবার মুখে মুখে। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির পরবর্তী উত্তরসূরি হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছিল রাইসিকে। ফলে এ শূন্যস্থান পূরণ করতে অনেকটাই মুখ্য ভূমিকা পালন করবে অভ্যন্তরীণ রাজনীতি। আর নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও থাকবে দেশি-বিদেশি প্রভাব। ফলে রাইসির প্রস্থানে কে হচ্ছেন আসল বিজয়ী, এ প্রশ্নের উত্তর জানতে চায় সবাই।
মার্কিন ম্যাগাজিন দ্য আটলান্টিকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ধর্মীয় শাসকগোষ্ঠীর কাছে প্রেসিডেন্ট হিসেবে সবচেয়ে নিরাপদ পছন্দ ছিলেন রাইসি। ইরানের সংবিধান অনুসারে, শুধু গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা থাকা ধর্মীয় নেতা রাষ্ট্রের প্রধান হতে পারবেন। এ যোগ্যতা থাকা বেশিরভাগ ধর্মীয় নেতা মারা গেছেন অথবা রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছেন। ফলে রাইসির জন্য মাঠ ছিল ফাঁকা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, রাইসি একজন দুর্বল সর্বোচ্চ নেতা হতেন। এতে করে ক্ষমতার মূল চাবিকাঠি ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী বা ক্ষমতার অন্য কেন্দ্রগুলোতে চলে যাওয়ার শঙ্কা ছিল। রাইসি ছিলেন ইরানের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় শহর মাশাদের পবিত্র মাজারের জামিনদার। এমনকি মাশাদের জুমার নামাজের ইমামের মেয়েকে বিয়ে করেছেন রাইসি। ফলে রক্ষণশীলদের আশঙ্কা ছিল, খামেনির মৃত্যুর পর মাশহাদ গোষ্ঠী ক্ষমতায় চলে আসতে পারে।
রাইসির এমন দুর্বল ক্ষমতাকে যারা নিজেদের রাজনৈতিক উত্থানের সুযোগ হিসেবে দেখেছিল তাদের একজন হলেন পার্লামেন্টের স্পিকার মোহাম্মদ বাকে কালিবাফ। রক্ষণশীল প্রধান রাজনৈতিক দল ও আইআরজিসির অনেক শাখার সমর্থন রয়েছে কালিবাফের প্রতি। আগামী ২৮ জুন ইরানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে ইরানের বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মোখবার ছাড়াও সড়ক ও নগর উন্নয়নমন্ত্রী মেহরদাদ বাজরপাশ, জাভেদ জারিফ, আলি আকবর সালেহি ও সাবেক প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির মিত্র আলি লারিজানিসহ গুরুত্বপূর্ণ শীর্ষ কর্মকর্তাদের নাম শোনা যাচ্ছে।
অনেকে মনে করছেন, আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির ঘনিষ্ঠ বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মোখবার ও বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলি বাঘেরি কানির ক্ষমতায় আসার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়াও প্রতিযোগিতার তালিকায় আছেন ইরানের সুপ্রিম ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের সাবেক প্রধান আলি শামখানি। গত বছর চীনের মধ্যস্থতায় সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক পুনস্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন তিনি।
মন্তব্য করুন