কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার জেরে পাকিস্তানের সঙ্গে সিন্ধু নদীর জল-বণ্টন চুক্তি স্থগিত করেছিল ভারত। শনিবার (১০ মে) স্থানীয় সময় বিকাল ৫টা থেকে ভারত ও পাকিস্তান যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হলেও ওই স্থগিতাদেশ এখনো প্রত্যাহার করা হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চারজন ভারতীয় কর্মকর্তার বরাতে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্ত কার্যকর হলেও সিন্ধু জলচুক্তি পুনরায় চালুর বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি দিল্লি।
প্রসঙ্গত, ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে চালানো ওই হামলায় ২৬ জন নিহত হন। ভারত সরকার এ ঘটনায় পাকিস্তানকে দায়ী করে। এরপর একাধিক কূটনৈতিক পদক্ষেপ নেয় ভারত, যেমন : আকাশসীমা ব্যবহারে বিধিনিষেধ, পাকিস্তানি পণ্যের আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা এবং গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক ফোরামগুলোতে পাকিস্তানবিরোধী প্রচার।
সর্বশেষ চুড়ান্তকারে ৭ মে ভারত চালায় ‘অপারেশন সিঁধুর’। দিল্লির দাবি, এই অভিযানে কেবল পাকিস্তানের সীমান্তের ভেতর থাকা সন্ত্রাসী ঘাঁটিগুলোতেই হামলা চালানো হয়। পাল্টা জবাবের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে ইসলামাবাদও।
এই উত্তেজনার মধ্যেই পারমাণবিক অস্ত্রধারী প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধের আশঙ্কা জেগে ওঠে। তখনই হস্তক্ষেপ করে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ জানান, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় রাতভর আলোচনার পর ভারত ও পাকিস্তান পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে।
পরবর্তীতে ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিক্রম মিশ্রি জানান, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ডিজিএমও-এর সঙ্গে ভারতীয় সেনা কর্মকর্তার ফোনালাপে দুই পক্ষই বিকাল ৫টা থেকে সব ধরনের হামলা বন্ধে একমত হয়।
এদিকে পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ইসহাক দার এক বিবৃতিতে বলেন, পাকিস্তান আঞ্চলিক শান্তির পক্ষে, তবে সার্বভৌমত্ব ও রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতার প্রশ্নে কোনও আপস করবে না।
যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়িত হলেও সিন্ধু নদীর জলবণ্টন চুক্তি স্থগিতই থাকছে—এই অবস্থান নতুন করে দুই দেশের মধ্যে আস্থার সংকট তৈরি করেছে বলে মত বিশ্লেষকদের।
এই পরিস্থিতিতে আগামীদিনে চুক্তি পুনর্বহাল বা স্থায়ী সমঝোতার কোনো সম্ভাবনা তৈরি হয় কিনা, তা নির্ভর করছে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক অগ্রগতির ওপর।
চুক্তিটি ১৯৬০ সালে বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত হয় এবং এতদিন তা ভারত-পাকিস্তানের সম্পর্কের টেকসই একটি ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছিল।
মন্তব্য করুন