পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশ, বিশেষ করে লাহোরের উপকণ্ঠে সম্প্রতি এক অদ্ভুত সংস্কৃতির উত্থান ঘটেছে। সাধারণ মানুষ যেমন পোষে কুকুর-বিড়াল, সেভাবেই এই শহরের বহু ব্যক্তি বাঘ, সিংহ, চিতা কিংবা জাগুয়ার পুষছেন। কারও কারও বাড়িতে রয়েছে একাধিক বড় বিড়াল প্রজাতির প্রাণী, যাদের অনেকেই অবৈধভাবে প্রজনন করিয়ে বিক্রি করছেন।
লাহোরের কাছে এমনই এক ফার্ম পরিচালনা করেন ফায়াজ আহমেদ, যিনি গত এক দশকে দেশে সবচেয়ে বড় বেসরকারি সিংহ-বিক্রেতা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। তার খামারে রয়েছে ২৬টি সিংহ-বাঘসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী। বৃষ্টিতে কাদা জমে গেলেও, পশুরা তার কাছে এসে শান্তভাবে খাবার খায়- এমনটাই দাবি করেন তিনি। তবে সব পশুই যে শান্ত, তা নয়। এক গর্জনকারী সিংহের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘এটা একটু আক্রমণাত্মক।’
এই প্রবণতা শুধু ফায়াজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। পাকিস্তানে বাঘ-সিংহ পোষা হয়ে উঠেছে সামাজিক মর্যাদা ও রাজনৈতিক আনুগত্যের প্রতীক। ক্ষমতাসীন পিএমএল-এন দলের নির্বাচনী প্রতীকও বাঘ। টিকটক-ইনস্টাগ্রামের মতো সামাজিক মাধ্যমে এই প্রাণীদের নিয়ে ভিডিও তৈরি করে জনপ্রিয়তা পাওয়ার হিড়িকও নতুন করে বাড়িয়ে দিয়েছে চাহিদা।
তবে এই চর্চার বিপজ্জনক দিকও প্রকাশ্যে এসেছে সম্প্রতি। লাহোরে একটি পোষা সিংহ ঘরবাড়ির পাঁচিল টপকে পালিয়ে গিয়ে এক নারী ও তার দুই শিশুর ওপর হামলা চালালে জনমনে আতঙ্ক ছড়ায়। এরপরই সরকার কঠোরভাবে পশু নথিভুক্তকরণ ও খামার নিয়ন্ত্রণে অভিযান শুরু করে।
নতুন নিয়ম অনুযায়ী, প্রতি প্রাণীর জন্য ৫০ হাজার পাকিস্তানি টাকা দিয়ে নিবন্ধন করতে হবে এবং এক খামারে সর্বোচ্চ ১০টি প্রাণী রাখা যাবে, তাও কেবল দুটি প্রজাতির। নিয়ম ভঙ্গ করলে জরিমানা ও জেল দুই-ই হতে পারে।
সরকারি অভিযান চালিয়ে একাধিক অবৈধ খামার চিহ্নিত করা হয়েছে। লাহোরের এক খামারে দেখা গেছে, খাঁচায় বন্দি পাঁচটি সিংহ শাবক। কিন্তু তাদের মা-বাবার কোনো খোঁজ নেই। বন বিভাগের কর্মকর্তারা সন্দেহ করছেন, মালিক ইচ্ছাকৃতভাবে প্রজনন ঘটিয়ে শাবকগুলো বিক্রি করছিলেন এবং অভিভাবক পশুদের গোপন জায়গায় সরিয়ে রেখেছেন।
বন্যপ্রাণী ও উদ্যান বিভাগের মহাপরিচালক মুবিন ইলাহি বলছেন, শুধু পাঞ্জাবেই এমন কয়েকশ জায়গা রয়েছে যেখানে পশুরা বেআইনিভাবে পোষা হচ্ছে। ইন-ব্রিডিংয়ের কারণে অনেক প্রাণীর মধ্যে জেনেটিক ত্রুটি দেখা দিচ্ছে, যাদের হয়তো পরে মেরে ফেলতে হতে পারে।
এই সংকটের মধ্যে গত বছরের একটি ঘটনাও দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে- লাহোরে পালানো একটি সিংহকে গুলি করে হত্যা করতে হয়। ফলে বড় প্রাণী পালনের সামাজিক হাওয়া এখন প্রশাসনের কড়া নজরদারির মধ্যে পড়ে গেছে। সরকার যেমন কঠোর হচ্ছে, তেমনি উঠছে প্রশ্ন- বাঘ-সিংহ কি আদৌ ঘরবন্দি রাখার প্রাণী?
সূত্র : বিবিসি
মন্তব্য করুন