কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ২৬ জুলাই ২০২৫, ০৭:২৫ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

পাকিস্তানে কেন বাঘ ও সিংহ পুষছেন অনেকে?

ছবি : সংগৃহীত
ছবি : সংগৃহীত

পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশ, বিশেষ করে লাহোরের উপকণ্ঠে সম্প্রতি এক অদ্ভুত সংস্কৃতির উত্থান ঘটেছে। সাধারণ মানুষ যেমন পোষে কুকুর-বিড়াল, সেভাবেই এই শহরের বহু ব্যক্তি বাঘ, সিংহ, চিতা কিংবা জাগুয়ার পুষছেন। কারও কারও বাড়িতে রয়েছে একাধিক বড় বিড়াল প্রজাতির প্রাণী, যাদের অনেকেই অবৈধভাবে প্রজনন করিয়ে বিক্রি করছেন।

লাহোরের কাছে এমনই এক ফার্ম পরিচালনা করেন ফায়াজ আহমেদ, যিনি গত এক দশকে দেশে সবচেয়ে বড় বেসরকারি সিংহ-বিক্রেতা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। তার খামারে রয়েছে ২৬টি সিংহ-বাঘসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী। বৃষ্টিতে কাদা জমে গেলেও, পশুরা তার কাছে এসে শান্তভাবে খাবার খায়- এমনটাই দাবি করেন তিনি। তবে সব পশুই যে শান্ত, তা নয়। এক গর্জনকারী সিংহের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘এটা একটু আক্রমণাত্মক।’

এই প্রবণতা শুধু ফায়াজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। পাকিস্তানে বাঘ-সিংহ পোষা হয়ে উঠেছে সামাজিক মর্যাদা ও রাজনৈতিক আনুগত্যের প্রতীক। ক্ষমতাসীন পিএমএল-এন দলের নির্বাচনী প্রতীকও বাঘ। টিকটক-ইনস্টাগ্রামের মতো সামাজিক মাধ্যমে এই প্রাণীদের নিয়ে ভিডিও তৈরি করে জনপ্রিয়তা পাওয়ার হিড়িকও নতুন করে বাড়িয়ে দিয়েছে চাহিদা।

তবে এই চর্চার বিপজ্জনক দিকও প্রকাশ্যে এসেছে সম্প্রতি। লাহোরে একটি পোষা সিংহ ঘরবাড়ির পাঁচিল টপকে পালিয়ে গিয়ে এক নারী ও তার দুই শিশুর ওপর হামলা চালালে জনমনে আতঙ্ক ছড়ায়। এরপরই সরকার কঠোরভাবে পশু নথিভুক্তকরণ ও খামার নিয়ন্ত্রণে অভিযান শুরু করে।

নতুন নিয়ম অনুযায়ী, প্রতি প্রাণীর জন্য ৫০ হাজার পাকিস্তানি টাকা দিয়ে নিবন্ধন করতে হবে এবং এক খামারে সর্বোচ্চ ১০টি প্রাণী রাখা যাবে, তাও কেবল দুটি প্রজাতির। নিয়ম ভঙ্গ করলে জরিমানা ও জেল দুই-ই হতে পারে।

সরকারি অভিযান চালিয়ে একাধিক অবৈধ খামার চিহ্নিত করা হয়েছে। লাহোরের এক খামারে দেখা গেছে, খাঁচায় বন্দি পাঁচটি সিংহ শাবক। কিন্তু তাদের মা-বাবার কোনো খোঁজ নেই। বন বিভাগের কর্মকর্তারা সন্দেহ করছেন, মালিক ইচ্ছাকৃতভাবে প্রজনন ঘটিয়ে শাবকগুলো বিক্রি করছিলেন এবং অভিভাবক পশুদের গোপন জায়গায় সরিয়ে রেখেছেন।

বন্যপ্রাণী ও উদ্যান বিভাগের মহাপরিচালক মুবিন ইলাহি বলছেন, শুধু পাঞ্জাবেই এমন কয়েকশ জায়গা রয়েছে যেখানে পশুরা বেআইনিভাবে পোষা হচ্ছে। ইন-ব্রিডিংয়ের কারণে অনেক প্রাণীর মধ্যে জেনেটিক ত্রুটি দেখা দিচ্ছে, যাদের হয়তো পরে মেরে ফেলতে হতে পারে।

এই সংকটের মধ্যে গত বছরের একটি ঘটনাও দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে- লাহোরে পালানো একটি সিংহকে গুলি করে হত্যা করতে হয়। ফলে বড় প্রাণী পালনের সামাজিক হাওয়া এখন প্রশাসনের কড়া নজরদারির মধ্যে পড়ে গেছে। সরকার যেমন কঠোর হচ্ছে, তেমনি উঠছে প্রশ্ন- বাঘ-সিংহ কি আদৌ ঘরবন্দি রাখার প্রাণী?

সূত্র : বিবিসি

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

হানিমুন থেকে ফিরে খুনসুটিতে রাজ-সামান্থা

নিরাপদ মা ও সুস্থ শিশুর জন্য গর্ভকালীন পরিচর্যার গুরুত্ব

দেশকে নেতৃত্বহীন করতে হাদির ওপর হামলা, বহুজন হিট লিস্টে : আসিফ মাহমুদ

হাদিকে হত্যাচেষ্টা, সন্দেহের তালিকায় ৪ জন

‎শিক্ষার পাশাপাশি আমাদের দেশপ্রেম থাকতে হবে : রিতা

হাদির ওপর হামলা / আটকের পর যা বললেন মোটরসাইকেল মালিক হান্নান 

৪০০ কোটির দ্বারপ্রান্তে ‘ধুরন্ধর’

ব্রাজিল সমর্থকদের জন্য বড় সুসংবাদ

সামনে আরও হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে : মির্জা ফখরুল

হাদিকে গুলি, ফয়সালের সব ব্যাংক হিসাব জব্দ

১০

চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর গেলেন ড. খন্দকার মোশাররফ

১১

হাদির ওপর হামলায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক সম্পর্কে যা জানা গেল

১২

গাজায় হামলা চালিয়ে শীর্ষ কমান্ডারকে হত্যার দাবি ইসরায়েলের

১৩

কোথায় হারালেন সৌরভ-দর্শনা?

১৪

বিপিএল মাতাতে আসছেন দু’বারের বিশ্বকাপজয়ী তারকা

১৫

পেটের ক্যানসারে ভুগছেন কি না বুঝে নিন আপনার মুখ দেখেই

১৬

হার দিয়ে রেসলিং ক্যারিয়ারের ইতি টানলেন জন সিনা

১৭

যে ৫ ব্যক্তির দোয়া কখনোই কবুল হয় না

১৮

সিরিয়ায় গুপ্ত হামলা, দুই সেনাসহ তিন মার্কিনি নিহত

১৯

হাসিনার গুলিকে যারা ভয় পায়নি, তারা আর কাউকে ভয় পাবে না : হান্নান

২০
X