পাকিস্তানে নির্বাচন মানেই নাটকীয়তায় পরিপূর্ণ। তবে এবার যেন নাটক কিছুটা বেশিই হচ্ছে। নির্বাচনের ফল ঘোষণা করতেই তিন দিন সময় নিয়েছে দেশটির নির্বাচন কমিশন ইসিপি! ফল ঘোষণা শেষ হওয়ায় এবার নাটকের পরবর্তী দৃশ্য মঞ্চস্থ হচ্ছে দেশটিতে। কোনো দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় জোট সরকার গঠন করতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে বড় দলগুলো। তবে অন্যবারের চেয়ে এবার কিছুটা কৌশলী হয়ে পদক্ষেপ নিচ্ছে বড় তিন দল—পিটিআই, পিএমএল-এন ও পিপিপি।
গত বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) পাকিস্তানে জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের ভোট হয়েছে। ভোটগ্রহণের তিন দিন পর ২৬৫ আসনের মধ্যে অবশেষে ২৬৪ আসনের ফল ঘোষণা করা হয়েছে। একটি আসনে ভোট স্থগিত করা হয়। আর অন্য একটি আসনে ফল স্থগিত থাকার ঘোষণা দেয় নির্বাচন কমিশন। ফলে ২৬৪ আসনে ফল ঘোষণা করা হয়েছে।
আলজাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি ৯৭ আসনে জয় পেয়েছেন ইমরান খানের দল পিটিআই সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। এরপরই পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ বা পিএমএল-এন ৭৬ আসনে, পাকিস্তান পিপলস পার্টি ৫৪ আসনে জয়ী হয়েছে। এ ছাড়া অন্যান্য ছোট দল পেয়েছে ৩৭টি আসন।
তবে শুক্রবার রাতে স্পষ্ট হয়ে যায় এবারের নির্বাচনে কোনো দলই এককভাবে সরকার গঠন করতে পারবে না। ফলে শুক্রবার রাতেই জোট সরকার গঠনের ঘোষণা দেন নওয়াজ শরিফ। বড় ভাইয়ের এমন ঘোষণার পরই মাঠে নেমে পড়েন শাহবাজ শরিফ। তিনি পিএমএল-এনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। শুক্রবার রাতে পিপিপির চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো ও সাবেক প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারির সঙ্গে দেখা করেন। তাদের এই বেঠক ৪৫ মিনিট স্থায়ী হয়। বৈঠক থেকেই কেন্দ্র ও পাঞ্জাবে জোট সরকার গঠনের বার্তা দেন তিনি। শুধু বার্তা দিয়েই ফিরে আসেননি, তাদের সম্মতি পর্যন্ত নিয়ে আসেন শাহবাজ।
এর আগেও পিএমএল-এনের সঙ্গে জোট করে সরকারে এসেছিল পিপিপি। তবে এবার জোট গড়ার বিষয়ে বেশ সতর্ক অবস্থানে পিপিপি। ক্ষমতা ভাগাভাগির সম্ভাব্য চুক্তি নিয়ে সতর্কভাবেই আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।
সরকার গঠনের ব্যাপারে পিএমএল-এন ও পিপিপি একমত হয়েছে গণমাধ্যমে এমন খবরের ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে বিলাওয়াল জানান, এমন কিছু ঘটেনি। তারা এখনো নির্বাচনের ফল ও দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছেন।
তবে বিলাওয়াল ভুট্টোকে ইসলামাবাদ থেকে লাহোরে তলব করেছেন দলের কো-চেয়ারম্যান ও তার বাবা আসিফ আলি জারদারি। সূত্রের বরাতে জিও নিউজ জানায়, সরকার গঠনের বিষয়ে শলা-পরামর্শ করতে আগামীকাল সোমবার বৈঠক করবে পিপিপি। এ জন্য রোববার বিলাওয়ালকে ইসলামাবাদ থেকে লাহোরে তলব করেছেন আসিফ আলি জারদারি। তাদের বৈঠকে জোট গঠনের প্রক্রিয়া, প্রেসিডেন্ট পদটি কে পাবেন, এসব বিষয়ে আলোচনা হবে।
অবশ্য জোট গড়তে শুধু পিপিপির সঙ্গে আলোচনা করছে না পিএমএল-এন। অন্য ছোট দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের দলে ভিড়াতে তাদের সঙ্গেও আলোচনার টেবিলে বসছে। এরই অংশ হিসেবে রোববার এমকিউএম-পির সঙ্গে জোট গঠনের বিষয়ে একমত হয়েছে নওয়াজ। এবারের নির্বাচনে তাদের অবস্থান চতুর্থ। মোট আসন পেয়েছে ১৭টি। পিএমএল-এনের তথ্য সচিব মরিয়ম আওরঙ্গজেব এক এক্সবার্তায় বলেছেন, প্রধান বিষয় নিয়ে দুই দলই একমত হয়েছে। দল দুটি দেশ ও জনগণের স্বার্থে একসঙ্গে কাজ করবে।
অন্যদিকে সরকার গঠনের আলোচনায় পিছিয়ে নেই কারাবন্দি ইমরান খানের দল পিটিআই। সরাসরি ভোটের মাঠে না থেকেই প্রথম স্থানে রয়েছে দলটি। পিটিআই জানিয়েছে, তারা পাঞ্জাব ও খাইবার পাখতুনখোয়ায় সরকার গঠন করবে। এ ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নিয়ে দলটি কেন্দ্রীয় সরকার গঠনের কথাও জানিয়েছে।
শনিবার আদিয়ালা কারাগারের বাইরে পিটিআইয়ের আইনজীবী উমায়ের খান নিয়াজি বলেন, দলের প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খান সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কেন্দ্রীয় সরকারসহ খাইবার পাখতুনখোয়া এবং পাঞ্জাবের প্রাদেশিক সরকার গঠন করবেন তিনি। তিনি বলেন, নওয়াজ শরিফকে জোট সরকার গঠনের মতো সুযোগ দেওয়া হবে না। কেননা অতীতে এ ধরনের জোট তেমন কাজে দেয়নি। অবশ্য বেশ আগেই পিপিপি বা পিএমএলএনের সঙ্গে জোট গঠনের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছে পিটিআই।
মন্তব্য করুন