রাশেদ রাব্বি
প্রকাশ : ২৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:২৩ এএম
আপডেট : ২৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮:১৪ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ঢাকাবাসীর নিঃশ্বাসে বিষ

বায়ুদূষণে বছরে মৃত্যু লাখের বেশি

বায়ুদূষণে বছরে মৃত্যু লাখের বেশি

প্রতি বছরের মতো এবারও শুষ্ক মৌসুমে দেশের বায়ুদূষণের মাত্রা নিয়ন্ত্রণহীন পর্যায়ে পৌঁছেছে। ঢাকার বায়ু বৃহস্পতিবার ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ দূষণে বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে উঠেছে। রিয়াল টাইম এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সের তথ্যে বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ঢাকার বাতাসের বায়ুমান ছিল ২৪৪, অর্থাৎ খুবই অস্বাস্থ্যকর। দূষণের এই মাত্রা ইস্কেমিক হার্ট ডিজিজ, স্ট্রোক, ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ, নিম্ন শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ এবং ফুসফুসের ক্যান্সারের সঙ্গে সম্পর্কিত। দূষিত বাতাসের কারণে প্রতি বছর কয়েক লাখ মানুষ নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করছেন; জন্ম নিচ্ছে অপরিণত শিশু; হাসপাতাল শয্যায় মৃত্যুর প্রহর গুনছে অগণিত মানুষ। এমন পরিস্থিতিতে পরিবেশ অধিদপ্তর বলছে, রাজধানী ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকায় প্রতিনিয়ত বাড়ছে বিষাক্ত বাতাস। এ অবস্থায় জনসাধারণকে মাস্ক পরাসহ বাইরে না যাওয়ার পরামর্শও দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

পরিবেশ অধিদপ্তর বলছে, গত সাত বছরে পরিবেশ দূষণ মাত্রায় দৃশ্যমান কোনো পরিবর্তন নেই। ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী, যেখানে বায়ুদূষণ মাত্রার বার্ষিক গড় মান ৩৫-এর কাছাকাছি থাকার কথা; সেখানে ঢাকায় এ মান থাকে ৮০-এর ওপরে।

রিয়াল টাইম এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সের তথ্য অনুসারে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ঢাকার বাতাসের বায়ুমান ছিল ২৪৪, সন্ধ্যা ৭টায় যা ২৭০-এ উন্নীত হয়। মানদণ্ড অনুযায়ী, স্কোর ৫১ থেকে ১০০ হলে তাকে মাঝারি বা গ্রহণযোগ্য মানের বায়ু হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ১০১ থেকে ১৫০ স্কোরকে সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর ধরা হয়। সংবেদনশীল গোষ্ঠীর মধ্যে আছেন বয়স্ক, শিশু, অসুস্থ ব্যক্তি ও অন্তঃসত্ত্বা। স্কোর ১৫১ থেকে ২০০ হলে তা অস্বাস্থ্যকর। স্কোর ২০১ থেকে ৩০০ হলে তাকে খুবই অস্বাস্থ্যকর ধরা হয়। ৩০১ থেকে তার ওপরের স্কোরকে দুর্যোগপূর্ণ বা ঝুঁকিপূর্ণ ধরা হয়।

জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের প্রাক্তন চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. রুহুল ফুরকান সিদ্দিক বলেন, বাংলাদেশের ফুসফুস সুন্দরবন ও ভাওয়াল গড় যক্ষ্মা আক্রান্ত। ফলে দূষিত বায়ু বিশুদ্ধ করার সক্ষমতা দেশের নেই। বাড়ছে দেশে অসংক্রামক রোগ। বায়ুদূষণের কারণে হাসপাতালগুলোতে ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারি ডিজিজ (সিওপিডি), ক্রনিক অ্যাজমা, ক্রনিক ব্রংকাইটিস রোগীর আধিক্য। তিনি বলেন, এ ছাড়া শহুরে এলাকা ও শিল্পাঞ্চলগুলোর দূষিত বায়ু থেকে ভারী ধাতু মানবদেহে প্রবেশ করে কিডনি, ক্যান্সার, লিভারের জটিল রোগ সৃষ্টি করছে। কিন্তু সরকারের এ বিষয়ে কোনো ভূমিকা দৃশ্যমান নয়।

গত ১৮ জানুয়ারি বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) এবং সেন্টার ফর রিসার্চ অন এনার্জি অ্যান্ড ক্লিন এয়ার (সিআরইএ) রিপোর্ট লঞ্চিং অনুষ্ঠানে ‘বাংলাদেশে সূক্ষ্মকণা বায়ুদূষণে জনস্বাস্থ্য প্রভাব’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে ঢাকাসহ দেশের অন্য প্রধান শহরগুলোতে বায়ুদূষণের ফলে স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে তথ্যভিত্তিক বিশ্লেষণ উপস্থাপন করা হয়।

ক্যাপসের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার এবং সিআরইএর বায়ুমান বিশ্লেষক ড. জেমি কেলি বলেন, পিএম ২.৫ (পাট পার মিলিয়ন ২.৫)-এর কারণে বছরে দেশে প্রায় ১ লাখ ২ হাজার ৪৫৬ জনের মৃত্যুর জন্য দায়ী, যা ইস্কেমিক হার্ট ডিজিজ, স্ট্রোক, ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ, নিম্ন শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ এবং ফুসফুসের ক্যান্সারের সঙ্গে সম্পর্কিত। পাঁচ বছরের নিচের শিশুরা বিশেষভাবে ঝুঁকিতে থাকে, যাদের মধ্যে প্রতি বছর প্রায় ৫ হাজার ২৫৮ জনের মৃত্যু হয় পিএম ২.৫ নিম্ন শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের কারণে।

সিআরইএ এর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিশ্লেষক ড্যানিয়েল নেসান বলেছেন, বিভিন্ন বায়ুমানের মানদণ্ড, বাংলাদেশের বর্তমান মান এবং ২০০৫ ও ২০২১ সালের ডব্লিউএইচওর নির্দেশিকা তুলনায় দেখা গেছে, পিএম ২.৫ স্তরে সামান্য উন্নতিও জাতীয় পর্যায়ে উল্লেখযোগ্য স্বাস্থ্য সুবিধা এনে দিতে পারে। কঠোর নিয়ন্ত্রণ বাস্তবায়ন এবং পরিচ্ছন্ন জ্বালানি গ্রহণের মাধ্যমে বায়ুদূষণের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো সম্ভব।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবীর বলেন, শুষ্ক মৌসুমে দেশের বায়ুদূষণ চরম পর্যায়ে পৌঁছায়। এই সময়ে বাতাস উত্তর থেকে দক্ষিণে প্রবহমান থাকে। ঢাকার উত্তরে অসংখ্য ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়া উত্তর থেকে ঢাকা শহরে প্রবেশ করে। এ ছাড়া শহরের ৮৫ শতাংশ নগর পরিবহন (বাস) মেয়াদোত্তীর্ণ। এসব গাড়ি থেকে কালো ধোঁয়া নির্গত হয়, যা ঢাকার বাতাসকে ভীষণভাবে দূষিত করে। এ ছাড়া শুষ্ক মৌসুমে ঢাকায় সব ধরনের নির্মাণকাজ হয়ে থাকে। একদিকে সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের খোঁড়াখুঁড়ি, অন্যদিকে সরকারি বেসিরকারি স্থাপনা নির্মাণ। এসব কাজ এমনভাবে ঢেকে করার কথা, যাতে কোনো ধুলাবালু বাতাসে ছড়িয়ে না পাড়ে। কিন্তু আমাদের দেশে এগুলো মানা হয় না, ফলে সব ধুলাবালু বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে।

স্টেট অব গ্লোবাল এয়ারের (এসওজিএ) ২০২৪ সালের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়াসহ পূর্ব-পশ্চিম, মধ্য এবং দক্ষিণাঞ্চলীয় আফ্রিকার দেশগুলোতে বায়ুদূষণজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে বেশি। শুধু ২০২১ সালেই বাংলাদেশে ২ লাখ ৩৫ হাজারের বেশি মৃত্যুর কারণ ছিল এই বায়ুদূষণ।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

‘বিএনপি ছাড়া দেশে শান্তি আসবে না’

এক ইলিশ ১০ হাজার টাকা

ভাতের হোটেলের পাওনা চাওয়ায় গুলি

ব্যক্তি স্বার্থে দলকে ব্যবহার করা যাবে না : সেলিমুজ্জামান

‘জনগণের অধিকার ও মৌলিক চাহিদা নিশ্চিত করতে কাজ করছে বিএনপি’

নিউইয়র্কের প্রবাসীদের এনআইডি কার্যক্রমের উদ্বোধন

কুয়েতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য সুখবর

ফের জামায়াতের সমালোচনা করলেন হেফাজত আমির

জবি ক্যাম্পাসে ছাত্রদল নেতা হাসিবুলের প্রথম জানাজা সম্পন্ন

গণতন্ত্রে উত্তরণে বিশ্বের সমর্থন পাওয়া গেছে : মির্জা ফখরুল

১০

আমরা পা ছেড়ে মাথার রগে ফোকাস করছি, মজার ছলে সর্ব মিত্র

১১

নাটকীয় ম্যাচ জিতে টাইগারদের সিরিজ জয়

১২

জবি ছাত্রদল নেতার মৃত্যুতে হাসপাতালে ভিপি সাদিক কায়েম

১৩

হঠাৎ খিঁচুনিতে জবি ছাত্রদল নেতার মৃত্যু

১৪

আবারও ইনজুরিতে ইয়ামাল

১৫

ঈদগাহের নামকরণ নিয়ে দ্বন্দ্ব, দুই গ্রামবাসীর সংঘর্ষ

১৬

খুলনায় ছেলের হাতে বাবা খুন

১৭

চাকসু নির্বাচন / ১৫ সেকেন্ডে দিতে হবে ১ ভোট

১৮

‘ভোটের অধিকার না থাকায় শ্রমজীবীরা বেশি অমর্যাদার শিকার’

১৯

এক গ্রামে ১১ জনের শরীরে মিলল অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ

২০
X