দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে ঢাকা-১৯ (সাভার) আসনে প্রতিমন্ত্রী ও প্রভাবশালী সাবেক সংসদ সদস্যকে হারিয়ে চমক দেখিয়েছেন আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক স্বতন্ত্র প্রার্থী সাইফুল ইসলাম। এই সাবেক ছাত্রনেতা ও ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে হেরেছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান এবং ঈগল প্রতীকের প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য তালুকদার মো. তৌহিদ জং মুরাদ। এমন ফল নিয়ে চলছে বিস্তর আলোচনা, খোঁজা হচ্ছে এর নেপথ্য কারণ।
রোববার অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে সাইফুলের প্রতীক ছিল ট্রাক। এ প্রতীক নিয়ে সাইফুল পেয়েছেন ৮৪ হাজার ৪১২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মুরাদ পেয়েছেন ৭৬ হাজার ২০২ ভোট। এ আসনে নৌকার প্রার্থী এনামুর রহমান পেয়েছেন ৫৬ হাজার ৩৬১ ভোট। হেভিওয়েট প্রার্থী মুরাদকে ৮২১০ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে বাজিমাত করেছেন সাইফুল।
অন্য প্রার্থীদের মধ্যে এনপিপির ইসরাফিল হোসেন আম প্রতীকে ৫৪১ ভোট, গণফ্রন্টের নুরুল আমীন মাছ প্রতীকে ১১০, তৃণমূল বিএনপির মাহবুবুল হাসান সোনালী আঁশ প্রতীকে ২৬৮, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির আইরিন পারভীন কাঁঠাল প্রতীকে ১৮৭, বাংলাদেশ কংগ্রেসের মিলন কুমার ডাব প্রতীকে ১৭৭, বিএনএমের সাইফুল ইসলাম নোঙ্গর প্রতীকে ১৩৭ ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির মো. জুলহাস একতারা প্রতীকে ১৬৬ ভোট পেয়েছেন।
সাভার উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন, একটি পৌরসভা ও ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড মিলে এ আসন।
ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ঢাকা-১৯ আসনে ৮০টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে মনে করা হচ্ছিল। তবে দিন শেষে গোটা তিনেক বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া শান্তিপূর্ণভাবে এ আসনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এবার নির্বাচনে এই আসনটি নানা কারণে আলোচনায় ছিল। এ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মুরাদ ১০ বছর পর রাজনীতিতে ফিরে চমক দেখিয়েছিলেন। অনেকের ধারণা ছিল, এই মুরাদের সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে পারে নৌকার প্রার্থীর। এমনকি নৌকার পরাজয়ও হতে পারে। তবে ঘোষিত ফলাফলে দেখা যায়, ঈগলের সঙ্গে ট্রাকের লড়াই হয়েছে। অবশেষে স্বনির্ভর ধামসোনা ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের পদ ছেড়ে এবার প্রার্থী হওয়া সাইফুলের ট্রাক বিজয়ী হয়েছে।
এর কারণ হিসেবে শ্রমিক নেতা সারওয়ার হোসেন কালবেলাকে বলেন, করোনাকালে মানুষের পাশে থাকা এবং শ্রমিকদের পাশে থেকে তাদের সেবা দিয়ে মন জয় করেছেন সাইফুল। এ ছাড়া যে কোনো মানুষের যে কোনো প্রয়োজনে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান হিসেবে তাকে পাশে পেয়েছেন সবাই। দায়িত্ব পালনকালে তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ ওঠেনি। বিশেষ করে শ্রমিকরাই তাকে ভোট দিয়েছেন।
সাইফুলের এক কর্মী রুবেল আহমেদ বলেন, সাইফুল বিশেষ করে হতদরিদ্র জনগোষ্ঠী ও খেটে খাওয়া মানুষের জন্য সবসময়ই নিবেদিতপ্রাণ। তিনি যখন ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তখন থেকেই তিনি একজন স্বচ্ছ রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত হয়েছিলেন। এ ছাড়া সাভার-আশুলিয়ার সাধারণ ভোটাররা একটি পরিবর্তন চেয়েছিলেন। এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সাধারণ মানুষের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটেছে।
মুরাদ জং ও এনামুর রহমানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কয়েকবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি।
সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সাভারের ইউএনও ফেরদৌস ওয়াহিদ কালবেলাকে বলেন, কোনো অপ্রীতিকর ঘটনাই ছাড়াই নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। নির্বাচন স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ করতে প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের কড়া নির্দেশনা ছিল।