হুমায়ূন কবির
প্রকাশ : ১৩ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ১৩ জুলাই ২০২৫, ০৯:৫৫ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

এআই মানুষের জন্য আশীর্বাদ না হুমকি

ছবি : কালবেলা গ্রাফিক্স
ছবি : কালবেলা গ্রাফিক্স

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) চিকিৎসা, বিজ্ঞান, শিক্ষাসহ বিভিন্ন খাতে যে বিপ্লব ঘটাবে তার পূর্বাভাস দিয়েছিলেন প্রযুক্তিবিদরা। বর্তমানে এ প্রযুক্তি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে উঠছে। এর ব্যাপক প্রভাব পড়ছে মানবজীবনে। এআই বিশ্বজুড়ে চিকিৎসক ও শিক্ষকের সংকট দূর করতে বড় ভূমিকা রাখছে। পাশাপাশি এটি শ্রমনির্ভর আরও কিছু পেশাও ঝুঁকিতে ফেলছে। এআই বা মানুষের সমান বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আর্টিফিশিয়াল জেনারেল ইন্টেলিজেন্সের (এজিআই) মতো প্রযুক্তি বহু মানুষের চাকরি কেড়ে নেবে, এ আলাপ শতাব্দী প্রাচীন। এখন সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে—এটি কি মানুষের মতো সক্ষমতা অর্জন করছে? সম্প্রতি গুগল ডিপমাইন্ডের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ২০৩০ সালের আগেই এজিআই মাত্রার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দেখা মিলতে পারে। বিশ্লেষকদের অনেকেরই ধারণা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ভবিষ্যতে মানুষের চেয়ে স্মার্ট হবে। এর ফলে মানবজাতি অস্তিত্বের ঝুঁকিতে পড়তে পারে। এর আদ্যোপান্ত নিয়ে লিখেছেন হুমায়ূন কবির

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা এআই হলো কম্পিউটার সিস্টেমের সেই ক্ষমতা, যা মানুষের মতো বুদ্ধি দিয়ে কাজ করতে পারে। এটি মূলত কম্পিউটার বিজ্ঞান এবং প্রকৌশলের একটি শাখা, যা লার্নিং মেশিন তৈরি করার চেষ্টা করে। এআইর মূল ধারণা হলো কম্পিউটারকে এমনভাবে প্রোগ্রাম করা যেন তারা মানুষের মতো চিন্তা করতে, শিখতে এবং সমস্যা সমাধান করতে পারে। এটি ডাটা বিশ্লেষণ, সমস্যা সমাধান, ভাষা বোঝা এবং নতুন কিছু শেখার মতো কাজ করতে পারে। সহজ কথায় বললে, মানুষের বুদ্ধিমত্তা ও চিন্তাশক্তিকে কৃত্রিম উপায়ে প্রযুক্তিনির্ভর করে যন্ত্রের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করাকে এআই বলে।

এআইর কয়েকটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি আরও পরিষ্কার হবে। যেমন গুগল ও টেসলার মতো কয়েকটি সংস্থা স্বয়ংক্রিয় গাড়ি তৈরি করছে, যা মানবচালক ছাড়াই সড়কে চলতে পারে। এমন কিছু এআই প্রযুক্তি রয়েছে, যেগুলো রোগ নির্ণয় করতে এবং চিকিৎসা পরিকল্পনা তৈরিতে সহায়তার জন্য চিকিৎসকদের সঙ্গে কাজ করছে।

ইতিহাস

এআইর ধারণা নতুন কিছু নয়। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এর দ্রুত অগ্রগতি হয়েছে এবং এটি বিভিন্ন শিল্প ও ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলায় বিশ্বব্যাপী হইচই পড়ে গেছে।

এআইর প্রাথমিক যুগ হলো—১৯৪০ থেকে ৫০ সাল পর্যন্ত। অ্যালান টুরিং এআইর ভিত্তি স্থাপন করেন। তিনি প্রথম প্রশ্ন তোলেন, মেশিন কি চিন্তা করতে পারে? তার এ প্রশ্নের মাধ্যমে এ প্রযুক্তির ক্ষমতা যাচাই শুরু হয়। ১৯৫৬ সালে ডার্টমাউথ কনফারেন্সে বিজ্ঞানী জন ম্যাকার্থি ও মারভিন মিনস্কি এআই শব্দটির প্রচলন করেন। এরপর ধীরে ধীরে এর বিকাশ হয়। তবে নব্বইয়ের দশকে ব্যাপক উন্নয়ন হয়। কম্পিউটারে দ্রুতই উন্নত পরিসংখ্যান কৌশল, বড় পরিমাণে তথ্যের মধ্যে প্রবেশ এবং শিক্ষা ও উপলব্ধির ক্ষেত্রে অগ্রগতি লাভ করে। ২০১০-এর মাঝামাঝি পর্যন্ত, সারা পৃথিবীতে মেশিন লার্নিং অ্যাপ্লিকেশনগুলো ব্যবহার করা হতো। ২০১৫ সালে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জন্য একটি মাইলফলক বছর ছিল। গুগলের মধ্যে এআই ব্যবহার করার জন্য ২ হাজার ৭০০-এরও বেশি প্রকল্পে ‘স্পোরাইডিক ব্যবহার’ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ক্ষেত্রে ত্রুটির হার ২০১১ সাল থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে কমে এসেছে। ক্লাউড কম্পিউটিং অবকাঠামোর উত্থানের ফলে এবং গবেষণা সরঞ্জাম ও ডাটাসেটগুলোর বৃদ্ধির কারণে সাশ্রয়ী মূল্যের স্নায়ুবিক নেটওয়ার্কগুলো বৃদ্ধি পেয়েছে।

যেভাবে কাজ করে

এআই প্রথমে বিপুল পরিমাণ ডাটা সংগ্রহ করে এবং এরপর সেই ডাটা প্রক্রিয়া করে। এই ডাটা হতে পারে টেক্সট, ইমেজ, অডিও বা অন্য যে কোনো ধরনের। এরপর ব্যবহার হয় মেশিন লার্নিংয়ের মতো টুলস। মেশিন লার্নিং হলে এআইর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এতে কম্পিউটারকে ডাটার প্যাটার্ন চিনতে এবং সেই অনুযায়ী ভবিষ্যদ্বাণী করতে শেখানো হয়।

এর আরেকটি ধাপ হলো ডিপ লার্নিং। এটি হলো মেশিন লার্নিংয়ের একটি উন্নত রূপ। এটি নিউরাল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে ডাটা থেকে জটিল প্যাটার্নগুলো শিখতে পারে। আরেকটি ধাপ হলো স্বাভাবিক ভাষা প্রক্রিয়াকরণ (এনএলপি)। এ প্রযুক্তির মাধ্যমে কম্পিউটার মানুষের ভাষা বুঝতে পারে এবং সেই অনুযায়ী সাড়া দিতে পারে।

কম্পিউটার ভিশন হলো এআইর একটি শাখা, যা কম্পিউটারকে ছবি এবং ভিডিও থেকে তথ্য উপলব্ধি করতে সাহায্য করে। এ ছাড়া ডাটা এবং শেখার ক্ষমতার ওপর ভিত্তি করে এআই সিস্টেমগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

একসঙ্গে হাজার হাজার কাজ দ্রুত করার পাশাপাশি খুব অল্প সময়ে নতুন অনেক বিষয় শিখতে পারে। মূলত আগের তথ্য বিশ্লেষণ করেই বিভিন্ন সেবা দিয়ে থাকে এআই প্রযুক্তি।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির লক্ষ্য হলো এমন একটি কম্পিউটার সিস্টেম তৈরি করা, যা মানুষের আচরণ ও চিন্তাশক্তির আদলে জটিল সমস্যার সমাধান করবে। নির্ভুল তথ্যের পাশাপাশি মানুষের আদলে বুদ্ধিমত্তা থাকায় সাইবার নিরাপত্তা, ভিডিও গেমস, নকশা, স্মার্ট গাড়ি, ডাটা সেন্টার ব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন খাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির চাহিদা বাড়ছে। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তিরও উন্নয়ন হচ্ছে। ফলে ধীরে ধীরে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তিনির্ভর যন্ত্রও উন্নত হয়ে উঠছে, যা এক দিন মানুষের মস্তিষ্কের আদলে নিজেই সিদ্ধান্ত নিয়ে কাজ করতে পারবে।

শঙ্কা ও সম্ভাবনা

এআই প্রযুক্তি চিকিৎসা ও শিক্ষা খাতে বিপ্লব ঘটাবে—এমন পূর্বাভাস দিয়েছেন মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস। তার মতে, বিশ্বজুড়ে চিকিৎসক ও শিক্ষকের সংকট দূর করতে বড় ভূমিকা রাখতে যাচ্ছে এআই। পাশাপাশি শ্রমনির্ভর আরও কিছু পেশাও এ প্রযুক্তির কারণে ঝুঁকিতে পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি।

সম্প্রতি ‘পিপল বাই ডব্লিউটিএফ’ নামে একটি পডকাস্টে গেটস বলেন, এআই এসে চিকিৎসাসংক্রান্ত বুদ্ধিমত্তা জোগাবে, তখন আর চিকিৎসকের ঘাটতি থাকবে না। তার মতে, যেসব খাতে দক্ষ জনবলের অভাব প্রকট, সেসব জায়গায় এআই কার্যকর সমাধান হয়ে উঠতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসকের সংকট দিন দিন বাড়ছে। দেশটির আমেরিকান মেডিকেল কলেজের হিসাবে, ২০৩৬ সালের মধ্যে চিকিৎসকের ঘাটতি দাঁড়াতে পারে প্রায় ৮৬ হাজারে। শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই নয়, ভারত ও আফ্রিকার অনেক দেশও দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসা খাতে জনবলের সংকটে ভুগছে। এ বাস্তবতায় ‘সুকি’, ‘জেফায়ার এআই’ ও ‘টেনার’-এর মতো এআইভিত্তিক স্টার্টআপগুলো বিপুল অর্থ বিনিয়োগ পাচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠান এমন সফটওয়্যার তৈরি করছে, যেগুলোর মাধ্যমে রোগ নির্ণয়, ক্লিনিক্যাল ডকুমেন্টেশন, বিলিং কিংবা রোগী শনাক্তকরণের কাজ স্বয়ংক্রিয়ভাবে করা যাচ্ছে।

প্রযুক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ম্যাককিনসের এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, শুধু স্বাস্থ্য ও ওষুধ শিল্পেই জেনারেটিভ এআই প্রযুক্তি বছরে প্রায় ৩৭ হাজার কোটি ডলার পর্যন্ত উৎপাদনশীলতা যোগ করতে পারে। শুধু চিকিৎসা নয়, এআইর ব্যাপক প্রভাব পড়ছে শিক্ষা ক্ষেত্রেও। যুক্তরাষ্ট্রের কেএ-১২ পর্যায়ের ৮৬ শতাংশ পাবলিক স্কুল ২০২৩ সালে শিক্ষক নিয়োগে সমস্যা হয়েছে বলে জানিয়েছে। এর মধ্যে ৪৫ শতাংশ স্কুলে শিক্ষকের সংকট রয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাজ্যের ডেভিড গেম কলেজ পরীক্ষামূলকভাবে চ্যাটজিপিটির মতো এআই টুল ব্যবহার শুরু করেছে। প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীদের ইংরেজি ও গণিত শেখাতে ব্যবহার করা হচ্ছে এ প্রযুক্তি। যদিও শিক্ষার্থীদের এআইনির্ভরতার সমস্যা ও অসদুপায় ব্যবহারের শঙ্কা রয়েছে। শিক্ষকরা বলছেন, এটি পাঠদানে সময় সাশ্রয় করছে এবং শেখার অভিজ্ঞতাও উন্নত হচ্ছে।

বুদ্ধিবৃত্তিক কাজ ছাড়া শারীরিক শ্রমনির্ভর পেশাগুলোর ক্ষেত্রেও এআই ও রোবট প্রযুক্তির প্রভাব বাড়ছে বলে জানিয়েছেন গেটস। তিনি বলেন, “গুদামে পণ্য ওঠানো, মেঝে পরিষ্কার কিংবা নির্মাণ সাইটে কাজ করার মতো শারীরিক শ্রমও এআই রোবটের মাধ্যমে করা সম্ভব। এসব কাজের জন্য রোবটকে মানুষের মতো দক্ষ ‘হাত’ দরকার। আমরা এখন সেই পর্যায়ের কাছাকাছি পৌঁছে গেছি।” প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান এনভিডিয়া এরই মধ্যে এমন মানবাকৃতির রোবট তৈরির কাজ করছে, যেগুলো গুদাম ও নির্মাণ শিল্পে বিভিন্ন শারীরিক কাজ করতে পারবে। এতে শ্রমঘণ্টা ও খরচ কমে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে।

বিল গেটস বলেন, ভবিষ্যতে এমন একসময় আসতে পারে, যখন মানুষ সপ্তাহে মাত্র ১৫ ঘণ্টা কাজ করলেই চলবে। তিনি অর্থনীতিবিদ জন মেনার্ড কেইন্সের ১৯৩০ সালের একটি ভবিষ্যদ্বাণীর কথা স্মরণ করিয়ে দেন, যেখানে বলা হয়েছিল, শিল্পায়ন ও প্রযুক্তির অগ্রগতিতে কর্মঘণ্টা কমে আসবে। তবে বাস্তবতা হলো, আজও অধিকাংশ মানুষ সপ্তাহে ৪০ ঘণ্টার বেশি সময় কাজ করছেন। তার মতে, ‘এআই প্রযুক্তির ব্যাপক বিস্তার আমাদের কাজ, সময় ও জীবনের ধরন নিয়ে নতুনভাবে ভাবতে বাধ্য করছে। ফলে সামনে আমাদের কর্মসংস্কৃতি ও অবসরের সংজ্ঞাও হয়তো বদলে যাবে।’

হুমকি নাকি আশীর্বাদ

এআই বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন আনছে এবং বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। এআই অর্থনীতি, জনসেবা এবং মানবজীবনের মান উন্নয়নে বিপুল সম্ভাবনা নিয়ে এসেছে।

এ প্রযুক্তি বহু জটিল সমস্যার সমাধানের একটি সম্ভাবনাময় উপায় হিসেবে দেখা হচ্ছে। যেমন দূরবর্তী এলাকায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়া, কৃষি উৎপাদন বাড়ানো এবং আরও বেশি মানুষকে আর্থিক সেবার আওতায় আনা।

এআই চালিত চিকিৎসা যন্ত্রপাতি দিয়ে দ্রুত ও সঠিকভাবে রোগ নির্ণয় করা সম্ভব, বিশেষ করে যেসব এলাকায় চিকিৎসকের সংখ্যা কম। আবার এআই ব্যবহার করে কৃষকরা আবহাওয়া, ফসলের রোগ এবং বাজারের খবর সহজেই পেতে পারেন, ফলে তারা সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে উৎপাদন বাড়াতে পারে।

তবে এর বিপদের দিক হলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার পক্ষপাতিত্ব। এআইর মডেলগুলো সাধারণ এমন তথ্যের ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়, যেখানে সব ধরনের মানুষের প্রতিনিধিত্ব হয় না।

আরেকটি উদ্বেগ হচ্ছে গোপনীয়তা। এই এআই সিস্টেমগুলোকে কার্যকর করতে ব্যাপক তথ্যের প্রয়োজন হয়। বাংলাদেশের মতো দেশে, যেখানে ডাটা সুরক্ষা আইন এখনো পূর্ণাঙ্গ নয়, ব্যক্তিগত তথ্য চুরির ঝুঁকি সবসময়ই থাকে। ফলে, এ প্রযুক্তির অপব্যবহারের ফলে সমাজ একটি নজরদারি সমাজে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, যা ব্যক্তি স্বাধীনতাকে হুমকির মুখে ফেলবে। এআই প্রযুক্তির আগমন সামাজিক জীবনে গভীর প্রভাব ফেলছে। এআই দ্রুত বিস্তার লাভ করছে, যার ফলে শ্রমবাজারে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটছে। অনেক খাতে এআইচালিত যন্ত্রপাতি মানুষের কাজ কেড়ে নেওয়ার ফলে বেকারত্ব বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে, বিশেষ করে কম দক্ষতার কাজে নিযুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে।

মানবজাতির ধ্বংসের কারণ হবে কি এআই

অনেকেরই ধারণা, এআই ভবিষ্যতে মানুষের চেয়ে স্মার্ট হবে। এর ফলে এআই মানবসভ্যতার অস্তিত্বের জন্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে বলেও মনে করেন তারা।

মানুষের সমান বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে এজিআই বলা হয়ে থাকে। সম্প্রতি গুগল ডিপমাইন্ডের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ২০৩০ সালের আগেই এজিআই মাত্রার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দেখা মিলতে পারে। তখন বিশ্বজুড়ে এজিআইর বিশাল সম্ভাবনা ও প্রভাব থাকবে। এর ফলে মানবজাতি অস্তিত্বের ঝুঁকিতে পড়তে পারে। এমনকি মানবতাকে স্থায়ীভাবে ধ্বংসও করতে পারে এজিআই।

ডিপমাইন্ডের গবেষণায় এজিআইর ঝুঁকিকে এআইর অপব্যবহার, ভুল ক্ষেত্রে প্রয়োগ, এআইর ভুল ও কাঠামোগত ঝুঁকি—এ চারটি শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয়। গবেষণায় ঝুঁকি মোকাবিলায় বিভিন্ন কৌশল তুলে ধরা হলেও এজিআইর কারণে কীভাবে মানবসভ্যতা ধ্বংস হবে, তা সুনির্দিষ্টভাবে বলা হয়নি। তবে ভবিষ্যতে মানবজাতিকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার পাশাপাশি এজিআই প্রযুক্তির উন্নয়ন ও তত্ত্বাবধানের জন্য জাতিসংঘের আদলে সংস্থা তৈরি করা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন ডিপমাইন্ডের সিইও ডেমিস হাসাবিস।

এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতেও ডিপমাইন্ডের ডেমিস হাসাবিস এজিআইর প্রভাব নিয়ে নিজের শঙ্কার কথা জানিয়েছিলেন। তিনি আগামী ৫ থেকে ১০ বছরের মধ্যে এজিআই প্রযুক্তির দেখা মিলতে পারে বলে জানিয়েছিলেন।

বিশ্লেষকদের ভাষ্য

স্টিফেন হকিং থেকে শুরু করে ইলন মাস্ক—বিশ্বের শীর্ষ কয়েকজন বিজ্ঞানী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, এটি একসময় হয়তো মানব প্রজাতির জন্য একটি হুমকি হয়ে উঠতে পারে।

কিন্তু নতুন একটি বইতে বলা হচ্ছে, রোবট আসলে নিজে থেকে সচেতন হয়ে উঠছে না বা তাদের মানুষ প্রভুর বিরুদ্ধে কোনো মনোভাব তৈরি করছে না, যেটি মানুষের জন্য ভয়ের কারণ হতে পারে। কিন্তু আসলে এসব যন্ত্রের জন্য নির্ধারিত কাজ সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে এগুলো এতটাই দক্ষ হয়ে উঠছে যে, হয়তো দুর্ঘটনাবশত বা অনিচ্ছাকৃতভাবে তাদের ভুল কোনো কাজে লাগানোর মাধ্যমেই মানবজাতির অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যেতে পারে।

‘হিউম্যান কম্প্যাটিবল: এআই অ্যান্ড দ্য প্রবলেম অব কন্ট্রোল’ নামে বইয়ে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও আধুনিক যন্ত্র সক্ষমতা প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ স্টুর্ট রাসেল বলেন, ‘হলিউডের সিনেমায় দেখানো হয় যে, যন্ত্রগুলো নিজে থেকেই সচেতন হয়ে উঠছে এবং তারপর তারা মানুষকে ঘৃণা করতে শুরু করে আর সবাইকে মেরে ফেলতে চায়। কিন্তু রোবটের কোনো মানবিক অনুভূতি থাকে না। এখানে আসলে খারাপ মনোভাবের কোনো ব্যাপার নেই। আমাদের আসলে তাদের দক্ষতার ক্ষমতা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত।’

তিনি আশঙ্কার দিকটা যেভাবে ব্যাখ্যা করেছেন, তা হলো কল্পনা করুন যে, আমাদের একটি শক্তিশালী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবস্থা আছে, যেটি বিশ্বের জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এবং সেটি ব্যবহার করে আমার প্রাক-শিল্প পর্যায়ের কার্বন ডাইঅক্সাইড মাত্রার আবহাওয়ায় ফিরে যেতে চাই। তখন সেটি ঠিক করল যে, এটা করার সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে পৃথিবী থেকে সব মানুষকে সরিয়ে ফেলা, কারণ পৃথিবীতে কার্বন ডাইঅক্সাইড নিঃসরণের দিক থেকে মানুষই সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে। আপনি হয়তো বলতে চাইবেন, তুমি যা চাও সবকিছুই করতে পারবে, শুধু মানুষের ক্ষতি করতে পারবে না। তখন ওই সিস্টেম কী করবে? এটি তখন আমাদের সন্তান কম নেওয়ার ব্যাপারে প্রভাবিত করবে, যতক্ষণ না পৃথিবী থেকে মানুষ শেষ হয়ে যায়।’

যুক্তরাজ্যের ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর দ্য স্টাডি অব এক্সিসটেনশিয়াল রিস্ক বলছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এ পদ্ধতি যতই শক্তিশালী হয়ে উঠবে, ততই এটি অতিবুদ্ধির অধিকারী হয়ে উঠবে। এটি হয়তো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মানুষের সক্ষমতাকেও ছাড়িয়ে যাবে।

এ কারণেই অধ্যাপক রাসেল বলছেন, মানুষের উচিত রোবট বা যন্ত্রের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে রাখা। তিনি বলেন, ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যন্ত্রকে আরও বেশি সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য বা কাজ ঠিক করে দেওয়া এ সমস্যার সমাধান নয়। কারণ, মানুষ নিজেরাই ঠিকমতো জানে না যে, এসব উদ্দেশ্য আসলে কী?

আমরা জানি না যে, কোনো কিছু না ঘটা পর্যন্ত আসলে আমরা কোনো কিছু পছন্দ করতে পারি না। এখন যদি একটি যন্ত্র এমন একটি উদ্দেশ্যে কাজ করতে শুরু করে, যা ঠিক নয়, তখন সেটি মানবসভ্যতার জন্য শত্রু হয়ে উঠতে পারে। যে শত্রু আমাদের চেয়ে অনেক শক্তিশালী হবে।’

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

প্রধান বিচারপতি নিয়োগে প্যানেল পদ্ধতির প্রস্তাব এবি পার্টির

মেট্রোরেলের ঢাবি স্টেশন বন্ধ থাকবে সোমবার

অন্তিম মুহূর্তে তৃষ্ণার গোলে নাটকীয় জয় বাংলাদেশের!

চাঁদার টাকাসহ বিএনপি নেতাকে হাতেনাতে ধরল সেনাবাহিনী

ডিম সেদ্ধ না ভাজা, কোনটি বেশি স্বাস্থ্যকর?

রোটারি ক্লাব চিটাগং এরিস্টোক্রেটের নতুন কমিটি

৩৯ প্রভাবশালীর দখলে পাউবোর ৩২০ কোটি টাকার জমি

দীর্ঘ খরা কাটিয়ে অবশেষে লিটন দাসের ব্যাটে আলো

বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে বিএনপির ‘মনিটরিং সেল’ 

বাইকারের জীবন রক্ষার প্রতীক ‘এএইচও’ বাংলাদেশে বাধ্যতামূলক হবে কবে?

১০

শাজাহান সিরাজের পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী সোমবার

১১

দাবি আদায়ে সচিবালয় অভিমুখে তথ্য আপাদের পদযাত্রা ও স্মারকলিপি

১২

মিয়ানমারে উলফার ৪ ঘাঁটিতে ভারতীয় সেনাদের ব্যাপক হামলার অভিযোগ

১৩

এমপি হচ্ছেন হর্ষবর্ধন শ্রিংলা

১৪

ছোট আমদানি-রপ্তানিকারকদের ‘বড় সুখবর’ দিল বাংলাদেশ ব্যাংক

১৫

লিটন-শামিমের ব্যাটে চড়ে বাংলাদেশের লড়াকু সংগ্রহ

১৬

আবারও ৬ বলে ৬ ছক্কা দেখল ক্রিকেটবিশ্ব!

১৭

বিএনপির বিরুদ্ধে চিহ্নিত গোষ্ঠী অপপ্রচার চালাচ্ছে : ড্যাব

১৮

প্রিন্স মামুনের বিরুদ্ধে লায়লার মামলা খারিজ 

১৯

জোতাকে ছাড়া প্রথম ম্যাচ : দুঃখ, গর্ব আর শ্রদ্ধার এক অনন্য বিকেল

২০
X