শামস্ সোহাগ
প্রকাশ : ১৩ জুলাই ২০২৫, ০৯:৩৬ পিএম
আপডেট : ১৩ জুলাই ২০২৫, ১০:১৮ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

বাইকারের জীবন রক্ষার প্রতীক ‘এএইচও’ বাংলাদেশে বাধ্যতামূলক হবে কবে?

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

মামা, হেডলাইট জ্বলে আছে!

ঢাকার রাস্তায় বা হাইওয়েতে অনেক সময়ই শুনে থাকবেন—‘মামা, হেডলাইট জ্বলে আছে!’ এটা যেন বাইকারদের জন্য একটা অদৃশ্য ডায়ালগ হয়ে উঠেছে। অথচ তারা জানে না দিনেও হেডলাইট জ্বলে থাকাটা এখন সময়ের দাবি। শুধু নিয়ম না, এটি জীবন বাঁচানোর মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তির নাম—অটোম্যাটিক হেডল্যাপ অন, সংক্ষেপে এএইচও (AHO)

একসময় মোটরসাইকেল চালানোর সময় দিনের বেলায় হেডলাইট জ্বালানোর প্রয়োজন হতো না। কিন্তু আধুনিক যুগে সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় নিরাপত্তার বিষয়টি ক্রমেই গুরুত্ব পাচ্ছে। এর ফলস্বরূপ যানবাহনে যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন প্রযুক্তি, যার মধ্যে এএইচও একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন। যে কারণে প্রশ্ন উঠেছে, বাইকারের জীবনরক্ষার প্রতীক ‘এএইচও’ বাংলাদেশে বাধ্যতামূলক হবে কবে?

এএইচও কী? এএইচও বা অটোমেটিক হেডল্যাম্প অন হলো এমন একটি প্রযুক্তি, যেখানে মোটরসাইকেলের ইঞ্জিন চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে হেডলাইট জ্বলে ওঠে। চালককে আলাদা করে লাইট অন করার প্রয়োজন পড়ে না। এটি এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে, যাতে হেডলাইট কখনো বন্ধ না থাকে – দিন হোক বা রাত। এএইচওকে আরেকভাবে ডিআরএল (DRL) বলা হয়, যার পুরো অর্থ - ডেটাইম রানিং লাইট।

কেন এই প্রযুক্তি জরুরি? আমাদের দেশে, বিশেষ করে গ্রামের রাস্তাঘাট, কুয়াশাচ্ছন্ন সকাল কিংবা শহরের ব্যস্ত যানজটে অনেক সময় মোটরসাইকেল চালকদের উপস্থিতি অন্য যানবাহনের চালকরা ঠিকমতো বুঝতে পারেন না। দিনের বেলায়ও দুই চাকার যানবাহন অন্যদের দৃষ্টিসীমায় সহজে পড়ে না। এই সমস্যা সমাধানের জন্যই এসেছে এএইচও। কারণ, হেডলাইট জ্বালানো থাকলে দূর থেকে মোটরসাইকেল সহজেই দেখা যায়, ফলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়।

একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ডিআরএল বা এএইচও ব্যবস্থার ফলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি ২০ শতাংশ পর্যন্ত কমতে পারে (বিশেষজ্ঞদের মতে)। অপরদিকে, ন্যাশনাল হাইওয়ে ট্রাফিক সেফটি অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এনএইচটিএসএ) -এর এক জরিপ অনুযায়ী, ডিআরএল চালিত গাড়ির সঙ্গে সংঘর্ষে মোটরসাইকেলের দুর্ঘটনার সম্ভাবনা ২৩ শতাংশ পর্যন্ত কমে।

এএইচও চালু হলো কবে? বিশ্বের অনেক দেশেই দীর্ঘদিন ধরে এএইচও বা ডিআরএল বাধ্যতামূলক। ২০১৭ সালের এপ্রিলে ভারতে BS-IV এমিশন নীতিমালার আওতায় নতুন উৎপাদিত সব মোটরসাইকেলে এএইচও বাধ্যতামূলক করা হয়।

বাংলাদেশে এখনো আইনি বাধ্যবাধকতা বা কোনো নিয়ম প্রণয়ন করা হয়নি। তবে ভারত থেকে আমদানিকৃত বা ভারতীয় স্ট্যান্ডার্ডযুক্ত বাইকগুলোতে এএইচও ফিচার ডিফল্টভাবে থাকে। এখন বাংলাদেশেও আসছে সচেতনতা।

কীভাবে কাজ করে? এএইচও প্রযুক্তিতে হেডল্যাম্প ইঞ্জিনের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে। ইঞ্জিন স্টার্ট নিলেই হেডলাইট স্বয়ংক্রিয়ভাবে জ্বলে ওঠে। অধিকাংশ বাইকে হেডলাইট অন/অফ সুইচ থাকে না। সাধারণত লো বিম (Low Beam) সারাক্ষণ জ্বলে থাকে।

চালকদের সাধারণ কিছু প্রশ্ন

প্রশ্ন : ব্যাটারি খরচ বেশি হয় না? উত্তর : না। বর্তমান মোটরসাইকেলগুলোর ইলেকট্রিক্যাল সিস্টেম এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যে, এই আলো ব্যাটারিতে কোনো অতিরিক্ত চাপ ফেলে না।

প্রশ্ন : বাল্ব কি বেশি নষ্ট হয়? উত্তর : হ্যাঁ, কিছুটা হতে পারে, কিন্তু এখনকার কোম্পানিগুলো উন্নতমানের বাল্ব ব্যবহার করছে যা দীর্ঘস্থায়ী।

প্রশ্ন : আমি যদি চাই লাইট বন্ধ রাখতে? উত্তর : এএইচও-এর মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে হেডলাইট বন্ধ না রাখা, তাই বাইকে সাধারণত বন্ধ করার অপশন রাখা হয় না। আপনি চাইলে অফ/অন সুইচ লাগিয়ে নিতে পারেন।

এএইচও বনাম ডিআরএল – পার্থক্য কী?

অনেকে এএইচও (Automatic Headlamp On) এবং ডিআরএল (Daytime Running Light)-কে এক মনে করলেও, এদের মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য রয়েছে।

এএইচও হলো এমন একটি ব্যবস্থা যেখানে বাইকের ইঞ্জিন চালু হলেই হেডলাইট স্বয়ংক্রিয়ভাবে জ্বলে ওঠে এবং চালক সেটি বন্ধ করতে পারেন না। এটি সাধারণত মূল হেডল্যাম্প (লো বিইম) ব্যবহার করে। এই প্রযুক্তি দুই চাকার যানবাহনে বেশি ব্যবহৃত হয়।

অন্যদিকে, ডিআরএল সাধারণত একটি আলাদা লেড লাইট বা স্ট্রিপ যা দিনে সবসময় জ্বলে থাকে, কিন্তু রাতে হেডলাইটের মতো আলো দেয় না। এটি চার চাকার যানবাহনে বেশি দেখা যায় এবং এটি মূল হেডল্যাম্প নয়, বরং আলাদা ইউনিট।

এএইচও একটি বাধ্যতামূলক ও সরাসরি হেডল্যাম্প ব্যবস্থাপনা, আর ডিআরএল হলো আলাদা ইউনিটভিত্তিক, দিনের বেলা দৃশ্যমানতা বৃদ্ধির জন্য ব্যবহৃত প্রযুক্তি। চার চাকার যানবাহনে বেশি ব্যবহৃত।

শেষ কথা সড়কে চলাচলকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ছোট ছোট এমন প্রযুক্তি আমাদের জীবনের জন্য অনেক বড় পরিবর্তন আনতে পারে। এএইচও এমনই একটি উদ্ভাবন যা আজকের দিনে মোটরসাইকেল চালকের জন্য শুধু আলো নয়, আশ্বাস হয়ে উঠেছে।

আপনার বাইকে যদি এএইচও না থাকে, তাহলে নিজেই প্রতিদিন ইঞ্জিন চালুর সঙ্গে সঙ্গে হেডলাইট জ্বালানোর অভ্যাস করুন। কারণ, একটি জ্বলন্ত আলো হয়তো বাঁচিয়ে দিতে পারে একটি জীবন।

[ নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার, প্রতিক্রিয়া প্রভৃতিতে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। দৈনিক কালবেলার সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক, আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের, দৈনিক কালবেলা কর্তৃপক্ষের নয়। ]
কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

গণভবনকে যার সঙ্গে তুলনা করলেন ফরাসি রাষ্ট্রদূত

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগে কমিশনের নতুন ফর্মুলা

পিএসজিকে বিধ্বস্ত করে শিরোপা জিতল চেলসি

লন্ডনে সাউথেন্ড বিমানবন্দরে বিমান বিধ্বস্ত

দশম শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা কারাগারে

‘হাসিনাকে বাংলার মসনদে ফেরাতে ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে’

আবু সাঈদ হত্যায় ফরেনসিক বিশ্লেষণে দুটি বিষয় স্পষ্ট : আসিফ নজরুল

সোহাগকে বাঁচাতে কেন এগিয়ে আসেননি বাহিনীর সদস্যরা, জানালেন আনসারপ্রধান

অবশেষে আ.লীগের মন্ত্রীর ভাইকে সরানো হলো মুদ্রণ শিল্প সমিতি থেকে

আগামী ২ দিনের আবহাওয়া নিয়ে নতুন বার্তা

১০

চবি ছাত্রদল কর্মীর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি ও ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ

১১

নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্তকারীদের জনগণ প্রত্যাখ্যান করবে : আমীর খসরু

১২

ফিল্মি কায়দায় প্রবাসীকে অপহরণ, পুলিশের অভিযানে উদ্ধার

১৩

ফজলে করিমের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

১৪

চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করে ইংরেজিতে দক্ষ হবেন যেভাবে 

১৫

অধ্যাপক ব্রজ গোপাল বৈষ্ণবের পরলোকগমন

১৬

নৌবাহিনীর দায়িত্বে চট্টগ্রাম বন্দরে বেড়েছে গড় কনটেইনার হ্যান্ডলিং

১৭

তপশিলে নৌকা প্রতীক নিয়ে ইসির সিদ্ধান্ত

১৮

সোহাগ হত্যাকাণ্ডকে ‘সংখ্যালঘু নির্যাতন’ বলে প্রচার করছে ভারতীয় গণমাধ্যম

১৯

বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতি ভালো : বিশ্বব্যাংক

২০
X