বিভিন্ন দেশের বড় বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তিনির্ভর চ্যাটবট ব্যবহার করায় এরই মধ্যে বিভিন্ন খাতের বহু পেশাজীবী চাকরি হারিয়েছেন। চাকরি হারানোর ঝুঁকিতেও রয়েছেন অনেকে। বিশেষ করে শ্রমনির্ভর কাজের পেশাজীবীরা চাকরি নিয়ে বেশি সংকটে আছেন। বিভিন্ন বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা সতর্ক করছেন যে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এআইর কারণে লাখ লাখ কর্মী চাকরি হারাবেন।
সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গার্টনার জানিয়েছে, জেনারেটিভ এআইর ক্রমবর্ধমান উন্নতির ফলে সফটওয়্যার প্রকৌশলীরা কাজ হারানোর শঙ্কায় রয়েছেন। ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রম্পট ইঞ্জিনিয়ারিং ও রিট্রিভাল অগমেন্টেড জেনারেশনের (আরএজি) মতো নতুন নতুন প্রযুক্তিতে নিজেদের দক্ষ না করলে ৮০ শতাংশ সফটওয়্যার প্রকৌশলী ভবিষ্যতে কাজ হারাতে পারেন।
গত জুনে অ্যামাজনের বস অ্যান্ডি জ্যাসি সতর্ক করে বলেছেন, এ প্রযুক্তির কারণে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে করপোরেট কর্মীর সংখ্যা কমে যাবে।
গোটা বিশ্বে দ্রুত চাকরি হারানোর আশঙ্কার মধ্যে নিজেদের এআই ব্যবহারের পরিকল্পনা প্রকাশ করে প্রযুক্তি জায়ান্ট অ্যামাজন।
জ্যাসি বলেছেন, তিনি আশা করছেন, কাজের ‘দক্ষতা বাড়াতে’ সহায়তা করবে এআই, যার ফলে কোম্পানির পক্ষে তাদের করপোরেট কর্মীর সংখ্যা কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।
গত মে মাসে এআই স্টার্টআপ ‘অ্যানথ্রোপিক’-এর প্রধান নির্বাহী দারিও আমোডেই সংবাদ ওয়েবসাইট অ্যাক্সিওসকে বলেছেন, এআইর কারণে অফিসের সাধারণ বা প্রাথমিক স্তরের অনেক চাকরি, এমনকি এই স্তরের অর্ধেক চাকরি হারিয়ে যেতে পারে।
প্রযুক্তি জায়ান্ট মাইক্রোসফটও চলতি বছর আরও এক দফা বড় ধরনের কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, তারা বিশ্বজুড়ে প্রায় ৯ হাজার কর্মী ছাঁটাই করতে যাচ্ছে, যা কোম্পানির মোট কর্মীর প্রায় ৪ শতাংশ। মে মাসে চতুর্থ দফায় তারা প্রায় ৬ হাজার কর্মী ছাঁটাই করেছিল।
ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) এক গবেষণায় বলা হয়েছে, এআই বিশ্বব্যাপী চাকরির বাজারে ব্যাপক একটা ধাক্কা দিচ্ছে। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের বিশ্লেষণের তথ্য তুলে ধরে সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বলেন, উন্নত দেশের ৬০ শতাংশ চাকরিকে প্রভাবিত করবে এআই। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআইর কারণে ভবিষ্যৎ বিশ্বে সব ধরনের চাকরির অন্তত ৪০ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কারণে অধিকাংশ চাকরির ক্ষেত্রেই বৈষম্য বাড়বে। ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা আরও বলেন, ‘বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যাবে, এআইর কারণে বৈষম্য পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে।’
তবে আইএমএফের এই বিশ্লেষণের সঙ্গে একমত নন মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস। সম্প্রতি এক ভবিষ্যদ্বাণীতে বিল গেটস বলেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে পৃথিবীর সব মানুষের জীবনে পরিবর্তন আনবে। এআইর উত্থান নিয়ে অনেকেই ভয় পাচ্ছেন। এআই প্রযুক্তি বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মানুষের চাকরি খেয়ে ফেলবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কিন্তু তিনি মনে করেন, ইতিহাসে যখন নতুন প্রযুক্তি এসেছে, তখন ভীতিও সৃষ্টি হয়েছে। তবে ভয় কাটিয়ে ওঠার পর নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, এআইর জগতে টিকে থাকতে বহুমাত্রিক দক্ষতা প্রয়োজন। এআই-সংক্রান্ত কাজে নিযুক্ত হতে কোডিং-দক্ষতা বা কম্পিউটার সায়েন্সের জ্ঞানের পাশাপাশি গণিত, পরিসংখ্যানসহ বিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞানের জ্ঞান প্রয়োজন। বর্তমান বিশ্বের অধিকাংশ সমস্যাই জটিল আর সেগুলো সমাধানে দরকার ইন্টারডিসিপ্লিনারি, অর্থাৎ বহুমাত্রিক জ্ঞান।
মন্তব্য করুন