গত কয়েক দিনে এ বিষয়ে অনেক ফোন পেয়েছি। তারা কেউ কেউ এ বিষয়ে লিখতে অনুরোধ করেছেন। কেউ মন্তব্য চেয়েছেন। এসব অনুরোধে বিব্রত হই। কারণ বিষয়গুলো স্পর্শকাতর। আবার আনন্দও পাই। কারণ যারা অনুরোধ করেন, তারা আমার সুহৃদ। তাই তারা আমার কাছে শুনতে চান। ভালোমন্দ বুঝতে চান। প্রশাসন ও সাংবাদিক দুপক্ষই এ দেশের মানুষ। তারা গুরুত্বপূর্ণ মানুষ। উভয়পক্ষই মানুষের কল্যাণে কাজ করেন। কিন্তু জাতীয়ভাবে আমাদের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও আস্থা নেই। আমরা একে অন্যকে প্রতিপক্ষ মনে করি। মনস্তাত্ত্বিকভাবে আমরা একে অন্যের প্রতি ঈর্ষান্বিত। তাই অনেক সময় আমরা ধৈর্যচ্যুত হই। সমঝোতা ও সহযোগিতার বদলে আমরা পরস্পরকে হেয় করে তৃপ্তিবোধ করি। এমন মনোভাব জাতির জন্য কল্যাণকর নয়। এমনটি আমাদের কাম্য নয়। এতে আলোচনার ঝড় ওঠে। ফলে উভয়পক্ষ হেয়প্রতিপন্ন হন। কেউ বলেন, লোকাল সাংবাদিকরা নিজেদের নানারকম স্বার্থ হাসিলের জন্য বাড়াবাড়ি করেন। তারা হলুদ সাংবাদিকতা করেন। অন্যদিকে কেউ কেউ বলেন, প্রশাসন বাড়াবাড়ি করে। তারা ক্ষমতার অপব্যবহার করেন। তাদের এমনটি করা সমীচীন নয়। আবার কিছু লোক মনে করেন, উভয়পক্ষই ক্ষমতার অপব্যবহার করেন। সাংবাদিকরা তার কলমকে হাতিয়ার করে প্রশাসনকে জিম্মি করতে চায় এবং প্রশাসনের হাতে আইনের খড়গ থাকায় তারা উত্তপ্ত থাকেন এবং ধরাকে সরা জ্ঞান করেন। এতে প্রতীয়মান হয়, প্রশাসন এবং সাংবাদিক উভয়পক্ষই ভুল পথে আছেন। উভয়পক্ষেরই আত্মসমালোচনা করা ও সংশোধন হওয়া দরকার। এ প্রসঙ্গে কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। ২০০৭-০৮ সালে আমি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব। তখন শিক্ষা বিটের সাংবাদিকদের কারও না কারও সঙ্গে আমার প্রতিদিনই দেখা হতো। তাদের একজন সরকারি কলেজের একজন অধ্যাপকের বদলির তদবির করেন। তিনি এটাও বলেন যে, তিনি মন্ত্রিপরিষদ সচিবের (তৎকালীন) কাজিন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বিদেশ যাওয়ার আগে বলে গেছেন আজকেই যাতে বদলি করে দেওয়া হয়। মন্ত্রিপরিষদ সচিবের রেফারেন্সটা আমার বিশ্বাস হয়নি। কারণ তিনি তখন আমাকে খুব স্নেহ করতেন (উল্লেখ্য, তিনি ড. সা’দত নন। ড. সা’দত তখন অবসরপ্রাপ্ত)। তিনি অন্য একজন। আমার মনে হয়েছে, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, এ ধরনের কথা বলতে পারেন না। কিছু বলার থাকলে তিনি আমাকেই বলতেন। আর কেউ কোনো কাজের জন্য জোরজবরদস্তি করলে আমি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি না। তাই আমি তাকে কয়েক দিন অপেক্ষা করতে বলি। বাজারে জোর গুজব ছিল যে, ওই সাংবাদিক সাহেব একটি গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্ট। সাংবাদিক সাহেব ওইদিন রাতে আমাকে ফোন করে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ শুরু করেন। আমি তার ফাঁদে পা দিলাম না। আমি অতি বিনয়ের সঙ্গে বললাম যে, ‘আজ কোনো কারণে আপনার মন খারাপ। আমরা
আরেক দিন কথা বলি।’ এ কথা বলে ফোন রেখে দিই। ফলে সাংবাদিক সাহেবের মিশন ব্যর্থ হয়।
ঘটনাটি আমি কাউকে বলিনি। আমার স্ত্রী, সহকর্মী, বস কাউকেই না। ওই সাংবাদিক সাহেব ২০১০ সালে এক অনুষ্ঠানে আমাকে গাড়ির দরজায় রিসিভ করেন। আমি আপ্লুত অথবা ব্যথিত কোনো মনোভাবই দেখালাম না। আমি স্বাভাবিক থাকলাম। তিনি আমাকে স্কট করে মঞ্চে পৌঁছে দিলেন। এজন্যই বলা হয়, সবুরে মেওয়া ফলে। ডিসি, ইউএনও এবং এসিল্যান্ড সাহেবদের বলব, উত্তেজিত হবেন না। উত্তেজিত হলেই হেরে গেলেন। দৃঢ় থাকুন, তবে আচরণে শোভনীয় থাকুন। আর সব জায়গায় আইন প্রয়োগ করবেন না। ধৈর্য ধরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করুন।
লেখক: সাবেক সচিব ও গবেষক