দেশের সড়ক-মহাসড়ক যে মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে—এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। কেননা এক দিনের ব্যবধানে বড়-ছোট মিলিয়ে একাধিক ভয়াবহ দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪০-এর অধিক! এর মধ্যে বুধবার ঝালকাঠিতে মর্মান্তিক এক দুর্ঘটনায় ১৪ এবং গত মঙ্গলবার ফরিদপুরের কানাইপুরে বাস ও পিকআপের সংঘর্ষে আরেক দুর্ঘটনায় ১৫ নিহতের ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া মঙ্গলবার আলাদা ঘটনায় ছয় জেলায় দুই দম্পতিসহ আরও ১১ জন নিহত হয়েছে। সড়কে এ মৃত্যুর মিছিলের শেষ কোথায়, কে দেবে এই প্রশ্নের উত্তর?
বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, বুধবার দুপুর পৌনে ২টার দিকে ঝালকাঠির গাবখান সেতুর টোল প্লাজায় টাকা দেওয়ার অপেক্ষায় ছিল তিনটি ইজিবাইক, একটি পণ্যবাহী ছোট ট্রাক, একটি প্রাইভেটকারসহ বেশ কয়েকটি গাড়ি। এ সময় খুলনা থেকে ছেড়ে আসা সিমেন্টবাহী একটি ট্রাক সেতুর দক্ষিণ দিক থেকে দানবের মতো প্রচণ্ড গতিতে টোল প্লাজার সামনে থাকা সব গাড়িকে ধাক্কা দেয় এবং প্রতিবন্ধক ভেঙে রাস্তার পশ্চিম পাশে খাদে পড়ে যায়। এতে মর্মন্তুদ ঘটনাটি ঘটে। প্রাইভেটকারটি ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে পিষে যায় এবং কারটিতে এক পরিবারের ছয়জনসহ সাত আরোহীর মৃত্যু হয়। আর ঘটনাস্থলেই নিহত হন ইজিবাইকের চার আরোহী। আহতদের মধ্যে একাধিক ব্যক্তির মৃত্যু হয় হাসপাতালে। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে সাতজন পুরুষ, তিনজন নারী ও চার শিশু। আমরা দুর্ঘটনায় নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি এবং নিহত সবার পরিবার ও স্বজনদের আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি।
সড়কে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলেই দুর্ঘটনায় দায়ী যানবাহনের বিভিন্ন অনিয়ম সামনে আসা একটি সাধারণ নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারপর সেসব কিছুদিন আলোচনায় সরবও থাকে দেশের মিডিয়াসহ বিভিন্ন মহলে। শোনা যায় নানা উদ্যোগ-পদক্ষেপের কথা। কিন্তু কাজের কাজ হয় না কিছুই। অর্থাৎ সড়কে মৃত্যুর মিছিলটির শেষ কোথায়, তা কারও দৃষ্টিগোচর হয় না। ফলে এসব মৃত্যু যে এখন স্বাভাবিক প্রক্রিয়া—তা বলাইবাহুল্য!
ঝালকাঠি ও ফরিদপুরের ঘটনায়ও একইভাবে দুর্ঘটনার জন্য দায়ী, দুর্ঘটনাকবলিতরা এবং দুর্ঘটনা রোধে নিয়োজিত রাষ্ট্রের সব ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রেও দেখা গেছে এসব অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা-দুর্বলতা-উদাসীনতার নানা চিহ্ন। ঝালকাঠির ঘটনা যদি ধরি তাহলে দেখা যাচ্ছে, যে সিমেন্টবোঝাই ট্রাকটি জব্দ করা হয়েছে, তার অনুমোদিত ধারণক্ষমতা ১৩ টন হলেও সিমেন্টবোঝাই ছিল প্রায় ২০ টন। ট্রাকচালকের ছিল না এমন ভারী যান চালানোর লাইসেন্স। একই সঙ্গে ওই রাস্তায় এমন ভারী ধারণক্ষমতার যান চলারও নেই কোনো নিয়মনীতি। পাশাপাশি যে ইজিবাইকগুলো দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে, এ থ্রি-হুইলারেরও অনুমোদন নেই সড়কে চলাচলের। ধারণা করা হচ্ছে, অতিরিক্ত ধারণক্ষমতার কারণে চালক একপর্যায়ে ট্রাকটির গতিরোধ করতে পারেনি।
প্রশ্ন হচ্ছে, বিভিন্ন সময় নেওয়া সড়ক নিরাপত্তায় হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প, শত শত সুপারিশ, টাস্কফোর্স—কিছুই কাজে আসছে না কেন? কেন দিন দিন দুর্ঘটনা ও হতাহতের পরিমাণ বাড়ছেই? সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর, হাইওয়ে পুলিশসহ সরকারের নানা সংস্থা অনিয়ম রোধে দায়িত্বে থাকলেও আগে কেন ত্রুটি ধরা পড়ে না? অতিরিক্ত ধারণক্ষমতার একটি যান এবং তার চালকের নেই বৈধ কাগজপত্র, সেটি খুলনা থেকে ঝালকাঠি পর্যন্ত কীভাবে এলো? সড়কে এসব দেখার দায়িত্ব যাদের, তারা কী করেন?