রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি (পাওয়ার পারচেজ অ্যাগ্রিমেন্ট-পিপিএ) এখনই হচ্ছে না। পিপিএ চূড়ান্ত করতে আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় লাগবে। এরই মধ্যে পিপিএর কারিগরি অংশের খসড়া তৈরি করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড (এনপিসিবিএল)। এদিকে পিপিএ চূড়ান্ত করতে একটি কমিটি গঠন করা হচ্ছে। কমিটিতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) এবং এনপিসিবিএলের কর্মকর্তারা থাকবেন। অন্যদিকে খসড়া পিপিএ তৈরি করার পর চূড়ান্ত করতে প্রকল্পের রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় পর্যালোচনা সাপেক্ষে নিজেদের ফর্মুলায় বিবেচনা করবে পিপিবি। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক ড. মো. জাহেদুল হাছান এ প্রসঙ্গে কালবেলাকে বলেন, আমরা টেকনিক্যাল পার্টের খসড়া তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। সেখান থেকে ফাইনাল করার পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তিনি বলেন, এজন্য একটি কমিটি গঠন করা হবে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের এক অতিরিক্ত সচিব এটা দায়িত্বে থাকবেন। কবে নাগাদ পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু করা যাবে—জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করছে। গ্রিড লাইনের কাজ শেষ হতে হবে, ফুয়েল লোড করতে হবে। তারপর আরও কাজ করতে হবে। তবে আমরা প্রাথমিকভাবে আগামী ডিসেম্বরে চালুর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি।
জানা গেছে, পারমাণবিক কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিটের জন্য তিনটি সঞ্চালন লাইনের মধ্যে দুটির কাজ শেষ হয়েছে। বাকি একটি গ্রিড লাইনের কাজ শেষ হয়নি। এ ছাড়া কেন্দ্রটি পূর্ণ সক্ষমতায় চালু করার জন্য যমুনা ও পদ্মা রিভার ক্রসিংয়ের কাজ চলমান রয়েছে।
কর্মকর্তারা জানান, প্রকল্পের প্রথম ইউনিটের কাজ ৯৪ শতাংশ শেষ হয়েছে। প্রথম ইউনিটের উৎপাদন শুরু করার জন্য পদ্মা নদীর ওপর নির্মিতব্য গ্রিড লাইনের কাজ সম্পন্ন হওয়ার পরে উৎপাদনে যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু হবে। রূপপুর প্রকল্পের জন্য ৬৬৯ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন প্রস্তুত করা হচ্ছে। এর মধ্যে পদ্মা নদীর ওপর ২ কিলোমিটার নদী পারাপার লাইন প্রথম ইউনিটের উৎপাদন শুরুর আগেই শেষ করতে হবে। যমুনা নদীর ওপর ১৪ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন দ্বিতীয় ইউনিটের উৎপাদন শুরুর আগে প্রয়োজন হবে বলে জানান প্রকল্প কর্মকর্তারা। পদ্মা নদীর ওপর সঞ্চালন লাইনের কাজ শেষ না হওয়ায় প্রথম ইউনিটের উৎপাদন শুরুর আগে প্রয়োজনীয় অনেক পরীক্ষা এখনো শুরু করা যায়নি বলে জানান তারা। এরই মধ্যে নদী পার করার সঞ্চালন লাইনের টাওয়ার নির্মাণকাজ শেষের দিকে। এখন নদীর মধ্যের টাওয়ার নির্মাণের কাজ চলমান।
পিডিবির কর্মকর্তারা বলছেন, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে বিদ্যুতের দাম নির্ধারণ করার বিষয়টি অন্যান্য কেন্দ্রের তুলনায় আলাদা। বিদ্যুতের দাম নির্ধারণে রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় মূল্যায়ন করতে হবে। এজন্য পিপিএর একটি খসড়া তৈরি করা হবে। তারপর প্রকল্পটির সব ব্যয় পর্যালোচনা করে পিপিএ চূড়ান্ত করতে হবে।
পিডিবির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী রেজাউল করিম এ প্রসঙ্গে কালবেলাকে বলেন, কয়েক মাস ধরে পিপিএর খসড়া দেওয়ার জন্য বলা হলেও তারা (এনপিসিবিএল) দেয়নি। সম্প্রতি তারা একটি খসড়া করেছে, শুনেছি। আমাদের কাছে এখনো আসেনি।
কেন্দ্রটির একাধিক প্রকৌশলী জানান, পারমাণবিক কর্মসূচি একটি জটিল প্রক্রিয়া। এ ধরনের প্রকল্প চালুর ক্ষেত্রে গ্রিড, টেলিকমিউনিকেশন, ভৌত নিরাপত্তাসহ নানা বিষয় রয়েছে।
রাশিয়ার কারিগরি ও আর্থিক সহায়তায় রূপপুরে নির্মাণ করা হচ্ছে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। প্রকল্পটিতে উৎপাদন ইউনিট দুটি। প্রতিটির সক্ষমতা ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট। এ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা, যার মধ্যে ৯৩ হাজার কোটি টাকা ঋণ হিসেবে নেওয়া হয়েছে রাশিয়ার কাছ থেকে।
মন্তব্য করুন