চট্টগ্রামের শিল্পাঞ্চলে চলতি বছরের শুরু থেকে একটি ‘ব্যতিক্রমধর্মী চাপ’ অনুভব করছেন অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিক ও কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, নিয়মিত চিঠি, নোটিশ ও প্রশিক্ষণের আমন্ত্রণপত্রের পেছনে এমন কিছু কার্যক্রম চলছে, যেটি একটু আলাদা—মাঝেমধ্যে বিভ্রান্তিকরও বটে।
এসব প্রশিক্ষণ ও মতবিনিময়ের অনুষ্ঠানে কখনো কখনো অতিরিক্ত তথ্য চাওয়া হচ্ছে, যেটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার অংশ না-ও হতে পারে বলে কিছু মালিকের মন্তব্য। কেউ কেউ বলছেন, এখানে একটা ‘মনিটরিং কাঠামো’ কাজ করছে, যার সবকিছু হয়তো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জানে না।
চট্টগ্রাম কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের উপমহাপরিদর্শক মোহাম্মদ মাহবুবুল হাসানের দপ্তর থেকে এসব উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে মালিকদের একটা অংশ মনে করেন। তারা প্রশ্ন তুলছেন ব্যবস্থাপনার স্বচ্ছতা নিয়ে।
কারখানাগুলোর কেউ কেউ বলছেন, প্রশিক্ষণের সময় অংশগ্রহণকারীদের নাম, পদবি, ফোন নম্বর, ইমেইল ইত্যাদি তথ্য নেওয়া হয়, যা পরে বিভিন্ন পর্যায়ে ব্যবহৃত হতে পারে। কোথাও কোথাও প্রশিক্ষণের আমন্ত্রণ পাঠানো হয়েছে দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিদর্শককে বাইপাস করে, যা নিয়ে কিছুটা বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে বলে অভিযোগ এসেছে।
উপমহাপরিদর্শকের দপ্তরে গিয়ে দেখা গেছে, চট্টগ্রাম অফিসের কয়েকটি তলায় নতুন কিছু শাখার নাম দেখা যাচ্ছে, যেগুলোর অস্তিত্ব অধিদপ্তরের মূল কাঠামোয় নেই। আবার, প্রশিক্ষণের জন্য রাজশাহীতে নিজস্ব ইনস্টিটিউট থাকলেও চট্টগ্রামে একটি আলাদা জায়গা ভাড়া নিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত সচিব) ওমর মো. ইমরুল মহসিন জানিয়েছেন, এলাকাভিত্তিক দায়িত্ব নির্ধারণ করা থাকে। এর বাইরে যদি কেউ নিয়ম না মেনে কাজ করেন বা অপ্রয়োজনে ভিজিট করেন, তাহলে প্রমাণ থাকলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, ভুক্তভোগীরা যদি অনৈতিক প্রস্তাব বা অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হন, তারা যেন কল রেকর্ড বা তথ্য রাখেন। আমরা তদন্ত করব।
নারী সদস্যদের নিয়ে গঠিত বিশেষ টিমের বিষয়ে তিনি জানান, বিশেষ ক্ষেত্রে টিম কাজ করতে পারে, তবে চট্টগ্রামজুড়ে কোনো টিম নিয়মিত ভিজিট করতে পারে না।
এ মুহূর্তে সরাসরি অভিযুক্ত কর্মকর্তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি। দপ্তরে না থাকায় এবং ফোনে যোগাযোগ না হওয়ায় তার অবস্থান স্পষ্ট হয়নি।
সবমিলিয়ে বলা যায়, কিছু প্রশ্ন আছে, কিছু অস্পষ্টতা আছে। মালিকদের একাংশ এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। সবকিছুই এখন প্রাতিষ্ঠানিক তদন্ত ও নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষণের বিষয়।
একজন মালিকের কথায়—‘প্রশিক্ষণের হলরুমে হাসি, বাইরে চাপ—কেউ প্রকাশ করে না, কেউ বোঝেও না।’ চট্টগ্রামের শিল্পাঙ্গনে যেন এখন এক অদৃশ্য চাপ ঘুরপাক খাচ্ছে, যা হয়তো সময়ের সঙ্গে স্পষ্ট হবে।
মন্তব্য করুন