বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ২০০৮ সালের তথাকথিত নির্বাচনের মাধ্যমে এবং ওয়ান ইলেভেনের মাধ্যমে স্বৈরাচার জেঁকে বসেছিল। আমরা গণতান্ত্রিক শক্তিগুলো যদি ঐক্যবদ্ধ না হই আগামী দিনে গুপ্ত স্বৈরাচারের আবির্ভাব হতে পারে। জনগণ যেভাবে চায়, আমাদের সেভাবে চলতে হবে। একটি কথা, সবার আগে বাংলাদেশ। এটিই আমাদের শুরু, এটাই আমাদের শেষ, সবার আগে বাংলাদেশ।
শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে কুমিল্লা টাউনহল মাঠে কুমিল্লা দক্ষিণ বিএনপির সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ভার্চুয়ালি তিনি এসব কথা বলেন।
এদিন ১৬ বছর পর কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ। অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য মনিরুল হক চৌধুরী ও আমিন উর রশিদ ইয়াছিন, সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া, শিল্প বিষয়ক সম্পাদক মো. আবুল কালাম, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মোস্তাক মিয়া। সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জাকারিয়া তাহের সুমন। সঞ্চালনা করেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আশিকুর রহমান মাহমুদ ভিপি ওয়াসিম।
এ সময় তারেক রহমান বলেন, বক্তব্য অনেক হয়েছে। এখন আমাদের কাজ করতে হবে। আজকে সম্মেলনের স্লোগান হোক, ঐক্য, জনগণ এবং পুনর্গঠন। আমাদের নেতাকর্মীরা হাজার হাজার জনগণকে নিয়ে আন্দোলন করছে। জেলে গিয়েছে, গুম হয়েছে। স্বৈরাচারের পতন হয়েছে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এগিয়ে যেতে হবে। এখনই সময়, সবাই মিলে কাজ করে সুন্দর ঘর গঠন করি। সবাই মিলে সুন্দর ঘর নির্মাণ করতে হবে। এই বাংলাদেশকে গঠন করতে হবে। জনগণের কাছে যেতে হবে। মিটিং করে জনগণের কাছে যাওয়া যাবে না। প্রতিটি ঘরে ঘরে যেতে হবে। কীভাবে মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে, তা সকল জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে হবে।
প্রধান বক্তা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, এমন একটি প্রত্যাশিত দিন দেখার অপেক্ষায় ছিলাম। ১৬ বছর পর এমন একটি দিন পেলাম। আমরা সুখের দিনে অতীত ভুলে যাই। আমরা যেন বিস্মৃত না হই। এই দেশ থেকে দুই লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। বিগত ফ্যাসিস্ট আমলে যে পরিমাণ ঋণ হয়েছে সেই টাকা দিয়ে ৪০টি পদ্মাসেতু নির্মাণ করা যেত। ব্যাংকিং সেক্টর পাঁচ লাখ কোটি খেলাপি ঋণে জর্জরিত।
তিনি আরও বলেন, এই আওয়ামী লীগের ইতিহাস লুটপাটের ইতিহাস। জুলাই অভ্যুত্থানে ১৪০০ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, হেলিকপ্টার থেকে গুলি করে মানুষ মারা হয়েছে, ২০ হাজার মানুষকে পঙ্গু করা হয়েছে। এ বিষয়টি আমরা যেন ভুলে না যাই। আমরা এখনো সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। সংস্কারের সংগ্রাম, বিচারের সংগ্রাম মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। আমরা সবাই জুলাই যোদ্ধা। তবে জুলাইয়ের চেতনা কেউ যেন বিক্রি না করি।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ সালের ২৪ নভেম্বর কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সর্বশেষ সম্মেলন হয়। এতে বেগম রাবেয়া চৌধুরী সভাপতি, আমিন উর রশিদ ইয়াছিন সাধারণ সম্পাদক ও মো. মোস্তাক মিয়া সাংগঠনিক সম্পাদক হন। এরপর ২০২২ সালের ৩০ মে আমিন উর রশিদ ইয়াছিনকে আহ্বায়ক ও জসিম উদ্দিনকে সদস্য সচিব করে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি হয়।
চলতি বছরের ২ ফেব্রুয়ারি জাকারিয়া তাহের সুমনকে আহ্বায়ক ও আশিকুর রহমান মাহমুদ ওয়াসিমকে সদস্য সচিব করে প্রথমে পাঁচ সদস্যের কমিটি আহ্বায়ক কমিটি হয়। পরে আরও ৩৬ জনের নাম অন্তর্ভুক্ত করে ২৪ ফেব্রুয়ারি ৪১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দেয় বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটি। এরপর ২৫ ফেব্রুয়ারি প্রথম সাংগঠনিক সভা হয়।
কুমিল্লার ছয়টি সংসদীয় আসনের ১০টি উপজেলা, চারটি পৌরসভা, ১০৭টি ইউনিয়ন, ৯৯৯টি ওয়ার্ডে সম্মেলন হয়। এতে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটি, জেলা কমিটির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এ সম্মেলনে বর্তমান আহ্বায়ক জাকারিয়া তাহের সুমনকে সভাপতি ও সদস্য সচিব আশিকুর রহমান মাহমুদ ওয়াসিমকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
মন্তব্য করুন